আলোচনায় বসতে রাজি ইউক্রেন
১৫ মে ২০১৪প্রস্তাব শুধু একটি গোল টেবিল বৈঠকের নয়, বরং এক পর্যায় গোল টেবিল বৈঠকের, যা-তে জাতীয় সাংসদ, সরকারি প্রতিনিধি ও আঞ্চলিক কর্মকর্তারা অংশগ্রহণ করবেন৷ ইউক্রেনের প্রধানমন্ত্রী আর্সেনি ইয়াৎসেনিয়ুক ওএসসিই-এর সৃষ্ট পরিকল্পনাটি মেনে নিয়েছেন বটে, তবে সূচনাতেই স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, আলাপ-আলোচনা থেকে তাঁর বিশেষ প্রত্যাশা নেই৷ এমনকি তিনি এ-ও বলেছেন যে, ইউক্রেনের এই সংকট সমাধানের নিজস্ব পরিকল্পনা আছে৷
ইউক্রেনের অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট ওলেকসান্ডার তুর্চিনভ বলেছেন যে, গোল টেবিল আলাপ-আলোচনায় ‘‘আঞ্চলিক গণ্যমান্যরা'' থাকবেন, যেমন ইউক্রেনের একাধিক প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট৷ কিন্তু তুর্চিনভ যোগ করেন যে, সরকার পূর্ব ইউক্রেনের শহরগুলির নিয়ন্ত্রণ ফিরে পাবার অভিযান বন্ধ করবেন না৷ ‘‘সন্ত্রাসী বিরোধী'' অভিযান অব্যাহত থাকবে, বলে তুর্চিনভ জানান৷
ইউরোপীয় কর্মকর্তারা আলাপ-আলোচনার সূচনাতেই খুশি – এবং আশাবাদী৷ জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফ্রাংক ভাল্টার স্টাইনমায়ারের এক মুখপাত্র বলেছেন, ইউক্রেন যে এই গোল টেবিল আলাপ-আলোচনার প্রণালীটা মেনে নিয়েছে, সেটাই সঠিক পথে সঠিক পদক্ষেপ বলে গণ্য হতে পারে – রাশিয়াপন্থি বিচ্ছিন্নবাদীদের আমন্ত্রণ জানানো হোক আর না-ই হোক৷ দৃশ্যত যে কোনো ধরনের ‘‘জাতীয় সংলাপ'' পরিস্থিতি উপশমে সাহায্য করবে, এই হলো বার্লিনের আশা৷
অথচ এই আলাপ-আলোচনা শুরু হবার ঠিক আগের দিন সাতজন ইউক্রেনীয় সৈন্য পূর্বাঞ্চলের একটি শহরের কাছে বিদ্রোহীদের চোরাগোপ্তা আক্রমণে নিহত হয়েছে৷ এই বুধবারেই রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ বলেছেন, ইউক্রেন গৃহযুদ্ধের উপকণ্ঠে পৌঁছে গেছে, কেননা ‘‘ইউক্রেনীয়রা যখন ইউক্রেনীয়দের দিকে গুলি চালায়, তখন সেটা গৃহযুদ্ধের খুব কাছাকাছি যায় বলেই আমার ধারণা....পূর্ব এবং দক্ষিণ ইউক্রেনে যুদ্ধ চলেছে, বাস্তবিক যুদ্ধ৷'' অপরদিকে পূর্ব ইউক্রেনের বিদ্রোহীদের উপর রাশিয়ার কতটা প্রভাব আছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে৷ লুগানস্ক এবং দোনেৎস্কের বিদ্রোহীরা ইতিমধ্যেই জানিয়েছে যে, তারা ২৫শে মে-র ভোট হতে দেবে না৷
ইউক্রেন সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য যে সব দেশ চেষ্টিত, তাদের মধ্যে সর্বাগ্রে জার্মানির নাম করতে হয়, কেননা এই সংকট থেকে জার্মানির ক্ষতি বৈ বৃদ্ধি নেই: জার্মানির এক তৃতীয়াংশ প্রাকৃতিক গ্যাস আসে রাশিয়া থেকে, ইউক্রেন হয়ে; জার্মানির রপ্তানির একটা বিপুল অংশ যায় রাশিয়ায়; এমনকি রাশিয়ার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও জার্মানির পক্ষে বুমেরাং হয়ে দাঁড়াতে পারে, রপ্তানি কমার কারণে৷ তাই জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফ্রাংক ভাল্টার স্টাইনমায়ার মঙ্গলবারেও ইউক্রেনে গেছেন; গোল টেবিলের সঞ্চালক হিসেবে এক প্রাক্তন জার্মান কূটনীতিকের নাম করা হচ্ছে৷
জার্মানির অবস্থান আরো পরিষ্কার করে দিয়েছেন উপ-চ্যান্সেলর জিগমার গাব্রিয়েল, যিনি বুধবার একটি সংবাদপত্র সাক্ষাৎকারে বলেছেন যে, ইউক্রেন সংকটের জন্য ইউরোপও অংশত দায়ী: ‘‘ইউরোপীয় ইউনিয়নও ভুল করেছে....ইউক্রেনকে রাশিয়া এবং ইইউ-এর মধ্যে বেছে নিতে হবে, ইউক্রেনে এই ধারণা সৃষ্টি করাটা খুব বুদ্ধিমানের কাজ হয়নি৷''
এসি/ডিজি (এপি, রয়টার্স, এএফপি)