1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সমৃদ্ধি থেমে যাওয়ার আশঙ্কায় জার্মানেরা

২৮ জুন ২০২২

ইউক্রেন যুদ্ধ এবং মুদ্রাস্ফীতির কারণে জার্মানরা তাদের জীবনযাপনের মান নিয়ে উদ্বিগ্ন হতে শুরু করেছে৷ যাদের অর্থনৈতিক অবস্থা দুর্বল, তারা সবচেয়ে বেশি ভুগছেন৷

https://p.dw.com/p/4DN4d
Deutschland | Coronavirus | Restaurant in Berlin
ছবি: Maja Hitij/Getty Images

বার্লিনের সবচেয়ে ইন্সটাগ্রামবান্ধব শহরতলীতে গেলে আপনি হয়ত মুদ্রাস্ফীতি, পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি বা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে আবার যে যুদ্ধ চলছে তার প্রভাব টের পাবেন না৷ সেখানকার বার এবং রেস্তোরাঁগুলো কানায় কানায় পূর্ণ৷ গ্রীষ্মের উষ্ণতা পুরোপুরি উপভোগ করতে কোনো কমতি রাখছেন না স্থানীয় বাসিন্দা এবং পর্যটকরা৷  

অবকাশমূলক কর্মকাণ্ডের খরচ এবং বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়ে গেছে, তাসত্ত্বেও আভোগাডো টোস্ট আর ব্রেডের চাহিদা কমেছে বলে মনে হচ্ছে না৷ কারণ হচ্ছে যাদের আয় একটু বেশি তারাই সাধারণত এই এলাকায় সময় কাটান৷ এমন মানুষদের কাছে কিছু ইউরো দামের ব্যবধান তেমন একটা ভাবনার বিষয় নয়৷ 

বার্লিনের জনপ্রিয় ফ্রিডরিশহাইন শহরতলীর ব্লাওয়ে ব্যোহনে ব্যারিস্তার স্টেফানি লিঞ্চ বলেন, ‘‘সবকিছুর দাম বেড়েছে৷ পেপার কাপ, কাপবোর্ড, ব্যাগ যার মধ্যে আমরা কফি রাখি - সবকিছুর দামই বেড়েছে৷''

বেশ কিছু বছর দাম একই রাখার পর সম্প্রতি ক্যাফেটির বিভিন্ন খাবার ও পানীয়র দাম বাড়িয়েছেন লিঞ্চ৷ করোনার কারণে পণ্য সরবরাহে বিঘ্ন ঘটা, ব্রাজিলে কফি বীজ উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া এবং গত বছর সুয়েজ ক্যানেল আটকে যাওয়ায় সৃষ্ট ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেন তিনি৷

পরিস্থিতি সামাল দিতে অদূর ভবিষ্যতে আরো একবার পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির চিন্তা করছেন তিনি৷ আর তাতে তার খদ্দের তেমন একটা কমবে বলেও মনে হচ্ছে না৷

মূল্যস্ফীতির কারণে ক্ষতির শিকার ভোক্তারা

মূল্যস্ফীতির হার গত বছরের একই সময়ের তুলনায় বর্তমানে আট শতাংশ বেশি৷ ভোক্তা পর্যায়ে জ্বালানি এবং খাদ্যদ্রব্যের দাম যথাক্রমে ৩৮ শতাংশ এবং ১১ শতাংশ বেড়েছে৷

এই পরিস্থিতি এখনো ভালো আয় করা মানুষদের পক্ষে সামলানো সহজ হচ্ছে, তবে যাদের বেতন যত কম, তাদের ভোগান্তি তত বেশি হচ্ছে৷

জার্মান ইন্সটিটিউট ফর ইকোনোমিক রিসার্চের জ্যেষ্ঠ গবেষক মার্কুস গ্রাবাস্কা বলেন, ‘‘অবশ্যই বর্তমান সংকটের পরিনতি সরাসরি অনুভব হচ্ছে৷ নিম্নআয়ের মানুষরা জ্বালানি খরচ বাড়ায় মধ্য ও বেশি আয়ের মানুষদের তুলনায় বেশি ভুগছেন৷''

ভোজ্যতেল, আটা, মাংস, দুধ এবং ডিমের মতো খাদ্যপণ্যের দাম কয়েকমাস আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে৷ ইন্স্যুরেন্স প্রতিষ্ঠান আলিয়ান্ত্স ট্রেডের হিসেবে জনপ্রতি খাবারের খরচ এবছর আগের তুলনায় আড়াইশো ইউরো বাড়তে পারে৷

বাড়তি এই খরচের ধকল সামলানো নিম্নআয়ের মানুষের জন্য বেশ কঠিন৷ জার্মানিতে অবসরে থাকা মানুষদের মধ্যে পাঁচ লাখ ৬০ হাজার জনের সরকারি সহায়তা প্রয়োজন হয় কেননা তারা যে টাকা অবসর ভাতা পান তা জার্মানিতে চলার জন্য যথেষ্ট নয়৷ খাদ্য এবং জ্বালানি খরচ বাড়ায় তাদের উপর চাপ আরো বাড়ছে৷

বাড়ি কেনা কঠিন হবে

জার্মানির মাত্র ৪২ শতাংশ মানুষের নিজের বাড়ি রয়েছে৷ মূল্যস্ফীতির কারণে নতুন যারা বাড়ি কিনতে চাচ্ছেন তাদের পক্ষে বিষয়টি কঠিন হয়ে যাচ্ছে কারণ কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাড়ির দামে লাগাম টানতে গৃহঋণের সূদের হার বাড়িয়ে দিয়েছে৷

জার্মানির বিভিন্ন অঞ্চলে আবাসন সংকট রয়েছে৷ ইউরোপের দেশটিতে কিছুদিন আগেও গৃহঋণের ক্ষেত্রে সূদের হার এক শতাংশ বা তার কম ছিল৷ কিন্তু সেই সুখের সময় কার্যত শেষ হয়ে গেছে মনে হচ্ছে৷

গত কয়েকমাসে গৃহঋণে সূদের হার তিন শতাংশের উপর উঠে গেছে গত এক দশকের মধ্যে যা সর্বোচ্চ৷ ফলে কেউ বাড়ি কিনলে এখন আগের চেয়ে বেশ কয়েক হাজার বা লাখ ইউরো বেশি খরচ করতে হবে৷

মোক্ষম আঘাত

করোনা মহামারির কারণে চাহিদা এবং সরবরাহ ব্যবস্থা এলোমেলো হয়ে গেছে৷ জার্মানি মহামারির সময়ে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি কমাতে নানা উদ্যোগ নিয়েছিল, বিশেষ করে দেশব্যাপী যখন করোনা ঠেকাতে ‘লকডাউন' চলছিল তখন৷ সেই পরিস্থিতি শেষ হতে না হতেই ইউক্রেন যুদ্ধ সবক্ষেত্রে বিপাকে ফেলেছে সরকারকে৷

আর প্রয়োজনীয় পণ্য ঘাটতির কারণে শুধু বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো চাহিদা অনুযায়ী গাড়ি এবং স্মার্টফোন বানাতে ব্যর্থ হয়েছে এমন নয়, ছোট ছোট প্রতিষ্ঠানও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ বার্লিনের সাইকেলের দোকানগুলোও অনেকক্ষেত্রে খদ্দেরদের ফিরিয়ে দিচ্ছে কারণ তাদের কাছে অনেক পণ্য নেই৷ আগে সাইকেল সারাতে যেখানে একদিন লাগতো, সেটা এখন কয়েক সপ্তাহে গিয়ে পৌঁছেছে৷  

জ্বালানি খরচ কমার লক্ষণ নেই

জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি কোথায় গিয়ে ঠেকবে তা নিয়ে অর্থনৈতিবিদদের মধ্যে নানা বিতর্ক রয়েছে৷ তবে একটি বিষয়ে তারা একমত, এর প্রভাব ভোক্তারা দীর্ঘদিন ধরে টের পাবেন৷ জার্মানির অর্থমন্ত্রী ক্রিস্টিয়ান লিন্ডানার বলেন, ‘‘আমার আশঙ্কা হচ্ছে আমরা কয়েক সপ্তাহ বা মাসের মধ্যে খুব উদ্বেগজনক পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে যাচ্ছি৷ আমরা তিন, চার বা পাঁচ বছরের জন্য সংকটের মধ্যে থাকতে পারি যা থেকে বের হওয়ার পথ খোঁজা হচ্ছে৷''

উইলিয়াম নোয়া গ্লুক্রাফট / এআই

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য