ইউক্রেন সংকটের ধাক্কা সামলাতে জার্মানিতে ব্যাপক ছাড়
২৫ মার্চ ২০২২প্রথমে করোনা সংকট, তারপর ইউক্রেনের উপর রাশিয়ার হামলা – একের পর এক সংকটে জর্জরিত জার্মানি তথা ইউরোপের মানুষ৷ ফলে মূল্যবৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতি ও নানা অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার সমস্যা দেখা দিচ্ছে৷ বিশেষ করে বিদ্যুৎ, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য, হিটিং ব্যবস্থা ও পরিবহণের ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে৷ সাধারণ মানুষের দুর্দশা অনন্ত কিছুটা হলেও কমাতে সরকার পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হচ্ছে৷ প্রায় দশ ঘণ্টা ধরে আলাপ-আলোচনার পর বৃহস্পতিবার এমনই কিছু সিদ্ধান্ত নিলো জার্মানির জোট সরকার৷ এর আওতায় আপাতত ৯০ দিনের জন্য বেশ কিছু ছাড় ঘোষণা করা হয়েছে৷
পেট্রোল-ডিজেলের আকাশছোঁয়া মূল্যে রাশ টানতে জার্মান সরকার সাময়িক ভর্তুকি দেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ পেট্রোলের ক্ষেত্রে লিটার-প্রতি ৩০ সেন্ট এবং ডিজেলের ক্ষেত্রে লিটার-প্রতি ১৪ সেন্ট কম গুনতে হবে৷ ফলে আপাতত তেল ভরার সময় কিছুটা স্বস্তি পাবেন যানচালকরা৷ সেই সঙ্গে তিন মাস ধরে মাসে মাত্র নয় ইউরো মূল্যে বাস-ট্রাম ব্যবহার করা যাবে৷ দেশের সব গণপরিবহণ নেটওয়ার্কে সেই সুযোগ চালু করা হচ্ছে৷ গাড়ি ছেড়ে আরো বেশি মানুষ যাতে গণপরিবহণ ব্যবস্থা ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেন, তাতে উৎসাহ দিতেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷
সবার জন্য এমন ছাড়ের পাশাপাশি জনসংখ্যার নির্দিষ্ট কিছু অংশের জন্যও বিশেষ সুবিধা দিচ্ছে চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎসের সরকার৷ যেমন জ্বালানির বাড়তি মূল্যের ধাক্কা সামাল দিতে আয়করদাতারা এককালীন ৩০০ ইউরো পর্যন্ত হাতে পাবেন৷ তবে বেশি আয়ের মানুষের ক্ষেত্রে সেই ছাড়ের মাত্রা কম হবে৷ সন্তানপ্রতি ১০০ ইউরো বাড়তি ভাতাও দেওয়া হবে৷ স্বল্প আয়ের পরিবারগুলির জন্যও ভর্তুকির ঘোষণা করেছে জার্মান সরকার৷
সরকারের এই ঘোষণার ফলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে৷ একদল এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বলছে, দুর্দিনে জনসাধারণের বাড়তি বোঝা কিছুটা শিথিল করে সরকার আখেরে অর্থনীতিরও সার্বিক উপকার করেছেন৷ হাতে বাড়তি অর্থ পেয়ে মানুষ জ্বালানির বদলে অন্য খাতে খরচ বাড়াতে পারবেন৷ অন্যদিকে সেই ভর্তুকি দিতে গিয়ে সরকারি কোষাগারে বিশাল ধাক্কা সম্পর্কেও সতর্ক করে দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা৷ ইউক্রেন সংকট আরও দীর্ঘায়িত হলে তিন মাস পরে আরও ভরতুকির প্রয়োজন হতে পারে বলে তাঁরা মনে করছেন৷ তাছাড়া জ্বালানির ক্ষেত্রে ভরতুকি দিয়ে সরকার জীবাশ্মভিত্তিক জ্বালানির ব্যবহার কমাতে কোনো উৎসাহ দিচ্ছে না বলে সমালোচকরা মনে করছেন৷ সাধারণ মানুযের পাশাপাশি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলির জন্যও এখনো কোনো ছাড়ের ঘোষণা না করায়ও ক্ষোভ দেখা যাচ্ছে৷
জার্মানির অর্থমন্ত্রী ক্রিস্টিয়ান লিন্ডনারের মতে, সদ্য ঘোষিত পদক্ষেপগুলির আর্থিক মূল্য নিশ্চিতভাবে বলা না গেলেও প্রায় ১,৩০০ কোটি ইউরো ব্যয় হতে পারে৷ পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তিনি ২০২২ সালের জন্য বাড়তি বাজেট পেশ করবেন বলে জানিয়েছেন৷ সবুজ দলের নেতা রিকার্ডা লাং বলেন, এর আগে জার্মানিতে এত সস্তায় বাস, ট্রাম বা ট্রেনে ভ্রমণ করা সম্ভব হয় নি৷
এসবি/এসিবি (ডিপিএ, এএফপি)