ইউনিয়নের বিপক্ষে অ্যামাজন কর্মীরা!
১২ জানুয়ারি ২০১৪অ্যামাজনের এক তরুণ কর্মীর মন্তব্য, ‘‘আমি এখানে কাজ করতে ভালোবাসি৷ কাজের পরিবেশ খুব ভালো৷ এ রকম ভালো পরিবেশ অন্য কোথাও পাওয়া কঠিন৷'' আরেক বয়োজ্যেষ্ঠ কর্মী একথার সমর্থনে বলেন, ‘‘আমার কাছে এটা স্বর্গ৷'' অ্যামাজনের ভিডিও ব্লগে এভাবেই প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে বলেছেন কর্মীরা৷ জার্মানির বাড হের্সফেল্ডে অবস্থিত অ্যামাজনের ‘লজিস্টিক সেন্টারে' কাজ করেন তাঁরা৷ এই কর্মীদের কথা হচ্ছে, অ্যামাজান প্রত্যেক কর্মীকে তাঁর কাজ ভাগ করে দিয়েছে৷ ফলে বাড়তি কোনো চাপ নেই৷
ভিডিও ব্লগ ছাড়াও ব্যক্তি পর্যায়ে আরো অনেক অ্যামাজন কর্মী ইউটিউবে নিজেদের মতামত জানিয়েছেন৷ তাঁরা শ্রমিক ইউনিয়ন ‘ভ্যার্ডি'-র কর্মকাণ্ডেরও সমালোচনা করেছেন৷ অথচ ভ্যার্ডি এসব শ্রমিকদের বেতন বাড়ানোর এবং কাজের পরিবেশ ভালো করার দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে অ্যামাজনের উপর চাপ সৃষ্টির চেষ্টা করছে৷
এমনকি শ্রমিক ইউনিয়নের ডাকা সাম্প্রতিক ধর্মঘটেও অংশ নেয়নি অ্যামাজনের অধিকাংশ কর্মী৷ অথচ ভ্যার্ডি চাচ্ছে অ্যামাজন লজিস্টিক সেক্টরের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতোই সমান বেতন দিক কর্মীদের৷ কেননা, বর্তমানে তারাই এখাতে সবচেয়ে কম বেতন দিচ্ছে৷
জোর করে আনুগত্য আদায়?
সারলান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রমিক মার্কেট বিশেষজ্ঞ ল্যুইটপোল্ড রাম্পেল্টসহামার অ্যামাজনের শ্রমিকদের প্রতিষ্ঠানের প্রতি এই আনুগত্য দেখে বিস্মিত হয়েছেন৷ তিনি বুঝতে পারেন, কিছু কর্মী হয়ত চাকুরি হারানোর ভয়ে প্রতিষ্ঠানের প্রতি বিশ্বাস দেখাচ্ছে৷ কিন্তু ইউনিয়নের আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে বেতন বাড়ানো৷ এরকম আন্দোলনে শ্রমিকদের অসমর্থনের কোনো যৌক্তিক কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না রাম্পেল্টসহামার৷
ভ্যার্ডির সদস্য মার্টিনা স্যোনিশেন মনে করেন, অ্যামাজনের কর্মপরিবেশ এবং কম বেতন দেওয়া নিয়ে সংবাদপত্রে বিভিন্ন প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে৷ তিনি বলেন, ‘‘এখন প্রতিষ্ঠানটি নিজেদের ‘ইমেজ' ভালো করার চেষ্টা করছে৷'' স্যোনিশেন মানেন যে, প্রতিষ্ঠানটির এমনটা করার অধিকার আছে৷ কিন্তু যে পন্থায় তারা এটা করছে তা প্রশ্নবিদ্ধ বলে মনে করেন তিনি৷
স্যোনিশেন বলেন, ‘‘আমরা এমনটাও শুনেছি ম্যানেজমেন্টের তত্ত্বাবধানে কর্মীরা ইউনিয়নের আন্দোলনের বিরুদ্ধে পিটিশনে স্বাক্ষর করতে বাধ্য হয়েছে৷''
অ্যামাজন অবশ্য এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে৷ একইসঙ্গে ভ্যার্ডির সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনায়ও আগ্রহী নয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রতিষ্ঠানটি৷ কর্মীদের অধিকারের বিষয়ে কর্মীদের সঙ্গেই সরাসরি আলোচনাকে প্রাধান্য দিচ্ছে অ্যামাজন৷ আর ইউনিয়ন ধর্মঘট ডেকেও বিশেষ সুবিধা করতে পারছে না তারা৷ কেননা, গাড়ি কোম্পানি কিংবা হাসপাতাল বা ট্রেন স্টেশনে ধর্মঘট পালন করলে সঙ্গে সঙ্গেই তার প্রতিক্রিয়া দেখা যায়৷ কিন্তু অ্যামাজন এমন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান যেখানে ধর্মঘট করলে মানুষের বাড়িতে ডাক পৌঁছাতে সময় একটু বেশি লাগবে শুধু৷ এতে করে ধর্মঘটের প্রভাব ঠিক বোঝা যায় না৷
তাছাড়া অ্যামাজনের কর্মীদের মধ্যে ভ্যার্ডির সদস্য সংখ্যাও বেশি নয়৷ আর স্বল্প আয়ের কর্মীদের ইউনিয়নের সদস্য করাও কঠিন৷ তবে গবেষণা ইন্সটিটিউট ‘ফিউচার অফ ওয়ার্ক'-এর গবেষক ওয়ার্নার আইখহর্স্ট মনে করেন, ‘‘এককভাবে কোনো কর্মীর পক্ষে নিজের অধিকার আদায়ের দাবিতে সোচ্চার হওয়া সম্ভব নয়৷ কোনো কিছু পেতে হলে তাঁদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে৷''