ইউরোপের দ্রুততম কম্পিউটার ‘ইউজিন’
২৬ অক্টোবর ২০০৯আর কম্পিউটার ব্যবহার করে করতেও সময় নেবে কয়েক মিনিট৷ কিন্তু আজ আমরা এমন এক কম্পিউটারের কথা বলবো যা কিনা এরকম কয়েক কোটি হিসাব করে ফেলতে পারে এক নিমেষেই৷
তেমনই একটি কম্পিউটার ইউজিন৷ এর ক্ষমতার কথা শুনলে যে কাউকে অবাক হতেই হবে৷ কারণ ইউজিন নামের এই কম্পিউটারটি এক সেকেন্ডে এক লক্ষ কোটি হিসাব করতে পারে৷ এটি বর্তমানে ইউরোপের দ্রুততম কম্পিউটার৷ আর পৃথিবীর মধ্যে এর অবস্থান তৃতীয়৷
সম্প্রতি জার্মান রেডিও ডয়চে ভেলে থেকে বেশ কিছু সাংবাদিক যান এই কম্পিউটার দেখতে৷ আমিও তাদের সঙ্গে ছিলাম৷ এটি রাখা আছে ইউলিশ শহরের সুপার কম্পিউটিং সেন্টারে৷ বিশাল একটি হল রুমের মধ্যে সারি সারি রাখা বাক্স, যার মধ্যে রয়েছে প্রসেসর, ব়্যাম আর যাবতীয় সব আধুনিক যন্ত্রপাতি৷ বিশাল এই কম্পিউটার যে চলছে তা বোঝা যায় রুমের মধ্যে শোঁ শোঁ আওয়াজ শুনলেই৷ সবচেয়ে অবাক করার বিষয় হলো এই সুপার কম্পিউটারটিকে স্বাভাবিক তাপমাত্রায় রাখতে এর ভেতরই রয়েছে বড় বড় পানির পাইপ৷
ইউলিশ সুপারকম্পিউটিং সেন্টারের ইন্সটিটিউশন ফর এডভান্সড সিমুলেশন বিভাগের ড. নর্ব্যার্ট আটিগ জানালেন ইউজিন আসলে কি? আর এটি কেনই এতো বিখ্যাত৷
সুপার কম্পিউটারের প্রধান কাজ বেসিক ন্যাচারাল সাইন্সের বিশেষ ধরণের বিষয় নিয়ে কাজ করা৷ হতে পারে তা ফিজিক্স কেমিস্ট্রি বা বায়োলজির মতো বিষয়ে৷শক্তিশালী ও দ্রুতগতিসম্পন্ন সুপার কম্পিউটার পৃথিবীর আবহাওয়া বা কোনো দেশের আদমশুমারির মতো বিশাল তথ্য ব্যবস্হাপনা করতে পারে৷
কম্পিউটারটির মোট প্রসেসরের সংখ্যা ৭৩ হাজার৷ যা চার ভাগে বিভক্ত৷ এর ব়্যাম রয়েছে ১৪৪ টেরাবাইট৷ আর মেমোরি হলো ৬ প্যারাবাইট৷ ইউলিশ সুপার কম্পিউটার সেন্টার এর পরিচালক খুব খুশি হয়েই জানালেন, সাধারণ ৫০ হাজার কম্পিউটারের যে ক্ষমতা তা একসঙ্গে একাই করতে পারে ইউজিন৷
সাধারণত এই কম্পিউটারটি ইউরোপের বড় বড় কোম্পানি বা গবেষণা প্রতিষ্ঠান তাদের হিসাবের কাজে ব্যবহার করে থাকে৷ যেন খুব দ্রুত এবং নিখুঁত ভাবে হিসাব করা সম্ভব হয়৷ ড. নর্ব্যার্ট আটিগ ডয়চে ভেলেকে জানান, এমন কোন হিসাব নেই যা এই কম্পিউটার দিয়ে করা সম্ভব নয়৷ ন্যানোটেকনোলজি থেকে শুরু করে ন্যানোইলেকট্রনিক্স, ম্যাটেরিয়াল সাইন্স থেকে বায়োলজি এমনকি প্রকৌশল বিভাগের যে কোন কাজ নিমেষেই করা সম্ভব এই সুপারকম্পিউটার দিয়ে৷
সাধারণ কম্পিউটারে যে সব কাজ অর্থাৎ মাইক্রোসফ্ট ওয়ার্ড বা এক্সেল এর মতো সব ধরণের কাজই করতে পারে এই সুপার কম্পিউটার ৷ কিন্তু তার প্রয়োজন হয়না৷ কারণ এই কম্পিউটার কোন বিশেষ কোডের মাধ্যমে চলে, যা লেখা হয় কোন বিশেষ গবেষণার জন্য, হতে পারে তা ফিজিক্স, ক্যামিস্ট্রি বা বায়োলজির কোন নতুন গবেষণা৷ আর তখন নির্দিষ্ট সফ্টওয়্যারের মাধ্যমে গবেষক ইউজিন ব্যাবহার করতে পারেন৷
সুপার কম্পিউটার ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে৷ এপর্যন্ত ইউরোপের ২শরও বেশি গবেষক ইউলিশ সুপার কম্পিউটার ব্যবহার করেছে৷ যেখানে স্বাস্থ্য, বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গবেষণা হয়েছে৷ সাধারণ ব্যবহারকারীরা এই সুপারকম্পিউটার ব্যবহার করতে পারবেন যদি তার কাজের ধরণ সেই রকম হয়৷ আর তার জন্য ইউলিশ সুপারকম্পিউটার সেন্টারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে বেশ আগে থেকেই৷ যদিও এই কম্পিউটারে কাজ করার জন্য একজন ব্যবহারকারীকে ইউলিশে আসার প্রয়োজন নেই৷ কারণ একটি নির্দিষ্ট পাসওয়ার্ড দিয়ে গ্রাহক তার ঘরে বসেই ব্যবহার করতে পারেন ইউজিন৷
প্রতিবেদক: ঝুমুর বারী
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক