ইউরো ২০১২
১২ মে ২০১২স্পেন কিন্তু এবার ইতিহাস গড়ার সুযোগ পাচ্ছে৷ তারা ইউরো ২০০৮ জিতেছে, এবং তার পরেই জিতেছে ২০১০'এর বিশ্বকাপ৷ এবার যদি তারা ইউরো ২০১২'র মতো একটি মুখ্য আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট জিততে পারে, অর্থাৎ পর পর তিনটি এই পর্যায়ের খেতাব, তাহলে সেটা হবে ফুটবলের ইতিহাসে একটা রেকর্ড৷ সাবেক পশ্চিম জার্মানি ১৯৭২'এ ইউরো এবং ১৯৭৪'এ বিশ্বকাপ জেতার পর সেরকমই একটা সুযোগ পেয়েছিল, কিন্তু ১৯৭৬'এ চেকোস্লোভাকিয়ার কাছে হেরে ত্রিমুকুট জেতার সম্ভাবনা খোয়ায়৷
স্পেনের কোচ ভিনসেন্ট দেল বস্কে'র দল এবারও ফাইনাল অবধি যাবার আশা করতে পারে৷ তার সহজ কারণ হল এই যে, দলের মুখ্য খেলোয়াড়রা পরস্পরের নাড়ি-নক্ষত্র চেনে৷ এবং তাদের অভিজ্ঞতার কোনো কমতি নেই৷ তবুও ‘লা রখা' বা ‘লাল'দের' মূল সমস্যা হবে শারীরিক ও মানসিক ক্লান্তি৷ কারণ বিগত কয়েক বছরের সাফল্যের জন্য তাদের পরিশ্রম করতে হয়েছে, স্নায়বিক চাপ সহ্য করতে হয়েছে৷
বার্সেলোনার সাবি হের্নান্দেজ'কেই ধরা যাক, দলের প্রাণপুরুষ৷ গত চার বছর ধরে মরশুমে প্রায় ৭০টা গেম খেলছেন সাবি৷ সঙ্গে আছে টেন্ডনের সমস্যা৷ এ'ক্ষেত্রে সাবি একাই নন, দলের অনেকেই অতিরিক্ত মাইলেজে ভুগছেন৷ আর আছে চোট৷ দল যে ক্যাপ্টেনের কাছ থেকে প্রেরণা পেয়ে থাকে, সেই কার্লোস পুইয়ল হাঁটুর সমস্যা নিয়ে টুর্নামেন্ট থেকেই বাদ৷ জাতীয় দলের চিরকালের গোল-গেটার দাভিদ ভিয়া ডিসেম্বরে পা ভাঙার পর থেকে আর খেলেননি৷
কাজেই কি ধরণের দল তৈরী করবেন দেল বস্কে? ফরোয়ার্ডে ফের্নান্দো টরেস ফর্মে নেই, কাজেই রবের্তো সোলদাদো আর ফের্নান্দো লোরেন্তে'কে দিয়ে কাজ চালাতে হবে৷ ডিফেন্সে সের্জিও রামোস সম্ভবত পুইয়ল'এর জায়গা নেবেন৷ গ্রুপ ‘সি'-তে ইটালি ছাড়া শুধু আয়ারল্যান্ড আর ক্রোয়েশিয়ার মহড়া নিতে হবে, সেটাই যা বাঁচোয়া৷
ইটালি'কে কখনোই খরচার খাতায় ফেলা যায় না
ইটালিতে আবার ম্যাচ-ফিক্সিং কেলেঙ্কারি চলেছে৷ সে তো ছ'বছর আগেও চলেছিল৷ ইটালির জাতীয় দল ‘আজুরি'-রা তখন জার্মানি যাচ্ছে বিশ্বকাপ খেলতে৷ সে বিশ্বকাপে পেনাল্টি শুটআউটে ফ্রান্সকে হারিয়ে ঠিকই জেতে ইটালি৷ লোকে বলে, ফুটবলে দুর্নীতির কেলেঙ্কারি মাথা চাড়া দিলেই নাকি ইটালির জাতীয় দলের খেলোয়াড়রা আরো সংহতিবদ্ধ হয়ে ওঠে৷
মুশকিলটা অন্য জায়গায়: আলেস্সান্দ্রো দেল পিয়েরো, ফ্রান্চেস্কো তত্তি কি আলেস্সান্দ্রো নেস্তা'র মত প্লেয়াররা বিদায় নেওয়ার পর ইটালিতে ওয়ার্ল্ড ক্লাস বলার মতো আর খুব বেশি খেলোয়াড় নেই৷ কোচ পিরান্দেল্লি'র হাতে হালের প্রতিভা বলতে আন্তোনিও কাসানে আর মারিও বালোতেল্লি আছে৷ গোলে স্বভাবতই জিয়ানলুইজি বুফন, যাকে বিশ্বের সেরা গোলরক্ষকদের মধ্যে ফেলা যায়৷ বুফন'এর সামনে ব্যাকে হয়তো য়ুভেস্তুস'এর আন্দ্রেয়া বার্জাগ্লি, লিওনার্দো বোনুচ্চি ও জর্জো চিয়েল্লিনি'র মধ্যে কোনো দু'জন৷ মাঝমাঠে আবার ‘য়ুভে' থেকে আন্দ্রেয়া পির্লো, আর তার পাশে ক্লাউদিও মার্চিসিও৷
স্পেন যে গ্রুপে আছে সেখানে অন্য কোনো দলকে ফেবারিট বলাটা বাতুলতা৷ শুধু ইটালিকে খরচের খাতায় ফেলার মতো ভুল না করলেই হল৷
প্রতিবেদন: অরুণ শঙ্কর চৌধুরী (এএফপি)
সম্পাদনা: রিয়াজুল ইসলাম