ইউরো ২০১৬-তে জার্মানির ২৩ জন
জার্মানির কোচ ইওয়াখিম ল্যোভ ২০১৬ সালের ইউরোপীয় ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের জন্য তাঁর দল ঘোষণা করেছেন৷ ডর্টমুন্ডের মার্কো রয়েসসহ চারজন খেলোয়াড়কে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে৷
মানুয়েল নয়ার
নয়ার যে দলে থাকবেন, সেটা কোলের শিশুরাও বলে দিতে পারতো৷ জার্মানির নাম্বার ওয়ান জার্সিধারী নয়ার কোচ ইওয়াখিম ল্যোভের তালিকাতেও সবার ওপরে৷ বিশ্বের সেরা গোলরক্ষকদের মধ্যে পড়েন, সেই সঙ্গে প্রায় ফুলব্যাকের মতো পেনাল্টি এরিয়া থেকে বেরিয়ে ট্যাকল করতে পারেন মানুয়েল নয়ার৷
মার্ক-আন্দ্রে টের স্টেগেন
নয়ারের বিকল্প৷ বার্সেলোনাতেও ‘ফার্স্ট চয়েস’ নন, শুধুমাত্র চ্যাম্পিয়নস লিগ আর স্প্যানিশ কাপের ম্যাচগুলোতে বার্সেলোনার গোলপোস্টের নীচে থাকেন৷ সেখানে নাম্বার ওয়ান হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা না করতে পারলে, জার্মান একাদশে নয়ারের স্থান নেওয়া তাঁর জন্য দুরাশা৷ তবুও ল্যোভ তাঁর উপর অনেক আশা রাখেন৷
ব্যার্ন্ড লেনো
নয়ারের পর মার্ক-আন্দ্রে টের স্টেগেনকে ডিঙিয়ে গোলে দু’নম্বর জায়গাটা বুন্ডেসলিগায় লেভারকুজেন দলের গোলরক্ষক ব্যার্ন্ড লেনোও দখল করে নিতে পারেন৷ জার্মানির ইয়ুথ টিমের আমল থেকেই লেনো আর টের স্টেগেনের মধ্যে লড়াই চলছে৷ তবে লেভারকুজেনের গোলে লেনোই অবিসংবাদিত নাম্বার ওয়ান, বার্সেলোনায় টের স্টেগেন যা নন৷
জেরোম বোয়াটেং ও মাট্স হুমেল্স
বোয়াটেং (বাঁয়ে) আর হুমেল্স হলেন জার্মানির ডিফেন্সের প্রাণকেন্দ্র৷ জার্মানির ২০১৪ সালের বিশ্বকাপ জয়ী দলের গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিলেন এই দু’জন৷ বুন্ডেসলিগার আগামী মরশুমে বায়ার্নের ব্যাক লাইনের ব্যাকবোনও হবেন এই দু’জন৷ হুমেল্স এতদিন বোরুসিয়া ডর্টমুন্ডে ছিলেন৷
বেনেডিক্ট হ্যোভেডেস ও ইয়োনাস হেক্টর
জার্মান অথবা ইউরোপীয় ফুটবলে ব্যতিক্রমী ফুলব্যাক খুব বেশি ুপাওয়া যায় না, জার্মান একাদশে মোট ১৪ বছর ধরে যা ছিলেন সাবেক অধিনায়ক ফিলিপ লাম৷ ছবিতে হেক্টর বাঁয়ে ও হ্যোভেডেস ডানে৷ হেক্টর খেলেন কোলনে; হ্যোভেডেসের ক্লাব হলো শালকে৷ হোয়ভেডেস ২০১৪ সালের বিশ্বকাপ দলেও ছিলেন৷
এমরে চান
আরেক ফুলব্যাক, ব্যাকলাইনের যে কোনো পজিশনে খেলতে পারেন৷ আপাতত খেলেন এফসি লিভারপুলের ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডে৷ বহুমুখী খেলোয়াড়, খুবই কাজের৷
আন্টোনিও রুডিগার ও শ্কোদ্রান মুস্তাফি
আ এস রোমা-র আন্টোনিও রুডিগার (ডানে) ফুলব্যাক হিসেবে অথবা সেন্ট্রাল ডিফেন্সে খেলতে পারেন৷ ভ্যালেন্সিয়ার শ্কোদ্রান মুস্তাফি মাঝমাঠে খেলতে পছন্দ করলেও উইংয়েও খেলেছেন৷ ২০১৪ সালের দল থেকে মুস্তাফিকে প্রথমে বাদ দেওয়া হয়েছিল, পরে মার্কো রয়েসের ইনজুরির জন্য মুস্তাফি দলে আসেন ও জার্মানির বিশ্বকাপ জয়ে তাঁর অবদান রাখেন৷
টোনি ক্রোস ও সামি কেদিরা
এই জুটিকে জার্মান মিডফিল্ডের প্রাণকেন্দ্র বলা চলে৷ এই মৌসুমে ইউভেন্তুসে গিয়ে কেদিরা যেন পুনর্জীবন লাভ করেছেন৷ টোনি ক্রোস আসছেন রেয়াল মাদ্রিদের সঙ্গে চ্যাম্পিয়নস লিগ ট্রফি জয় করার পরে৷ এই জুটিই জার্মানিকে বিশ্বকাপ জিততে সাহায্য করেছিল৷
লুকাস পোডোলস্কি ও বাস্টিয়ান শোয়াইনস্টাইগার
জাতীয় একাদশে ‘পোল্ডি’ ও ‘শোয়াইনি’র আবির্ভাব ২০০৪ সালের ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নশিপে৷ সেই থেকে তাঁরা জার্মানির হয়ে প্রতিটি বড় টুর্নামেন্টে খেলে আসছেন৷ তবে ফ্রান্সে তাঁরা কেমন খেলবেন, তা বলা শক্ত৷ সাম্প্রতিক কয়েক বছরে পোডোলস্কি কিছুটা খেলার ‘ধার’ হারিয়েছেন৷ ওদিকে শোয়াইনস্টাইনগার আপাতত একটি চোট কাটিয়ে উঠছেন৷ তবে ল্যোভ দৃশ্যত এই দু’জনকে হাতেই রাখতে চান৷
টোমাস ম্যুলার
বায়ার্নের সাবেক কোচ লুই ফান খাল একবার ঘোষণা করেছিলেন, ‘ম্যুলার খেলবেই৷’ কথাটা বোধহয় জাতীয় দলের ক্ষেত্রেও খাটে৷ ফরোয়ার্ড লাইনে ম্যুলারের মতো গোলগেটারকে বাদ দেওয়ার উপায় নেই৷
মারিও গ্যোৎসে
গ্যোৎসে বায়ার্নে যাবার পর আর ঠিক তাঁর ফর্ম কিংবা জায়গা খুঁজে পাননি৷ তবুও তিনি জাতীয় টিমের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য৷ ২০১৪ সালের বিশ্বকাপ জয়ে জার্মানির হয়ে চূড়ান্ত গোলটি করেছিলেন এই গ্যোৎসে৷ ইউরো ২০১৬ তাঁর জন্য একটা ব্যক্তিগত সুযোগও বটে৷
মেসুত ও্যজিল
ওয়েজিল আর্সেনালে ঠিক সুবিধা করে উঠতে পারেননি৷ কখনো ভালো খেলেন আবার কখনো ততোটা চোখে পড়ার মতো নয়৷ কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি জার্মান দলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের মধ্যে ধর্তব্য৷ ফ্রান্সে জার্মানির সাফল্য অনেকাংশে নির্ভর করবে প্লে-মেকার হিসেবে ও্যজিলের পার্ফর্মেন্সের উপর৷
মারিও গোমেস
তুরস্কে বেসিকটাস ইস্তানবুলের সঙ্গে ভালো একটা মৌসুমই কাটিয়েছেন জার্মানদের প্রিয় ‘সুপার মারিও’৷ ইউরো ২০১২-র পর এই প্রথম জার্মানির হয়ে খেলছেন এই স্ট্রাইকার৷
লিরয় সানে
শালকে-তে খেলেন, ক্রমেই উন্নতি করে চলেছেন এবং সেভাবেই ল্যোভের নজর কেড়েছেন৷ অফেন্সের খেলোয়াড়, বয়স মাত্র বিশ৷ জাতীয় দলে এই প্রথম৷
জোশুয়া কিমিচ
এ বছরই প্রথম বায়ার্নের হয়ে খেলতে শুরু করেন কিমিচ এবং কোচ পেপ গুয়ার্দিওলার প্রিয়পাত্র হয়ে ওঠেন৷ মিডফিল্ড বা ডিফেন্স দুই পজিশনেই খেলতে পারেন, তবে ল্যোভ সম্ভবত কিমিচকে মিডফিল্ডেই ব্যবহার করবেন৷
ইউলিয়ান ভাইগল
ডর্টমুন্ডের কোচ টোমাস টুখেল ইউলিয়ান ভাইগলকে তাঁর সেন্ট্রাল মিডফিল্ডের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে ব্যবহার করেছেন৷ সেকেন্ড ডিভিশন থেকে বুন্ডেসলিগায় আসার পর ভাইগল দেখিয়েছেন, তিনি জাতীয় দলে থাকার যোগ্যতা রাখেন৷ তাই ডর্টমুন্ডের মাটিয়াস গিন্টার, মার্সেল শ্মেলৎসার বা এরিক ডুয়র্ম ডাক না পেলেও, জুলিয়ান ভাইগল ঠিকই ইউরো ২০১৬-য় যাচ্ছেন৷
ইউলিয়ান ড্রাক্সলার
ভল্ফসবুর্গে এ মৌসুমে বিশেষ সুবিধা করতে না পারলেও, ড্রাক্সলার স্কোয়াডে থাকছেন৷ একদিকে তাঁর আক্রমণের ক্ষমতা, অন্যদিকে ২০১৪-র বিশ্বকাপে তাঁর অবদান - দুটোই দৃশ্যত ল্যোভের স্মরণে ছিল৷
আন্দ্রে শ্যুয়র্লে
ভল্ফসবুর্গে শ্যুয়র্লেরও মৌসুম যে খুব ভালো কেটেছে, এমন নয়৷ তবে তিনি জাতীয় একাদশের সঙ্গে চিরকালই ভালো পার্ফর্মেন্স দেখিয়ে এসেছেন৷ বুন্ডেসলিগা মৌসুম ভালোভাবেই শেষ করেছেন৷ এবার দেখা যাক ইউরোতে কেমন খেলেন৷
ল্যোভ-এর পছন্দ
‘‘আমার মনে হয়, খেলার ক্ষমতার পরেই আসে খেলোয়াড়ের ব্যক্তিত্ব, প্লেয়াররা যাতে মাঠের বাইরেও তাদের ছাপ রাখতে পারে-’’ বলেছেন ল্যোভ৷ দেখা যাক ফ্রান্সে কী ঘটে৷