ফুটবল ব্যবসা
১৫ জুন ২০১২‘আসল খেলা হল স্টেডিয়ামে৷ বাইরে যা কিছু ঘটছে তার কোনো মূল্য নেই,' ফুটবলারদের মুখে হামেশা এ'কথা শোনা যায়৷ কিন্তু খেলাধুলের একটা অর্থনৈতিক দিক আছে৷ জার্মানির বাইরয়েথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রীড়া-অর্থনীতির অধ্যাপক মার্কুস কুরশাইড কিন্তু সেটাকে মাত্রাধিক গুরুত্ব দিতে রাজি নন:
‘‘এ বিষয়ে এমন কোনো বিশদ সমীক্ষা হয়নি, যা থেকে একটি দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির উপর কোনো বড় আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টের প্রভাব লক্ষ্য করা যাবে৷ কিছু কিছু ফলশ্রুতি তো থাকবেই, কিন্তু সেগুলি যতোটা প্রত্যাশা করা হয়, তার চেয়ে অনেক কম৷''
২০০৬ সালে জার্মানিতে যখন বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়, তখন হোটেল, ব্যবসায়ী, পরিবহণ সংস্থাগুলি ভালোই রোজগার করেছিল৷ কিন্তু সব মিলিয়ে জার্মানির জিডিপি বেড়েছিল মাত্র শূন্য দশমিক এক-তিন শতাংশ, অর্থাৎ এক শতাংশের একশো ভাগের তেরো ভাগ৷ কেননা জার্মান ফ্ল্যাগ, পানীয়, খেলার টিকিট ইত্যাদিতে জার্মানরা যা খরচ করেছিল, সেটা তারা বাঁচায় অন্য খাতে৷ কাজেই বহির্বিশ্ব থেকে আসা ফ্যানরা আরো গুরুত্বপূর্ণ, বলে প্রফেসর কুরশাইড মনে করেন:
‘‘জাতীয় অর্থনীতির দৃষ্টিকোণ থেকে বহিরাগত ফ্যানরা দেশে নতুন টাকা আনেন৷ বড় বড় ক্রীড়া প্রতিযোগিতার ওটাই হল মূল অর্থনৈতিক ফলশ্রুতি এবং ফুটবলও তার ব্যতিক্রম নয়৷''
টুর্নামেন্টের আগে অবকাঠামোয় বিনিয়োগের ফলে জাতীয় অর্থনীতির উপর বিশেষ কোনো প্রভাব পড়ে না, কেননা নতুন রাস্তাঘাট, স্টেডিয়াম, বাস-ট্রাম ইত্যাদিতে বিনিয়োগ কোনো না কোনো সময় এমনিতেই করতে হতো৷ এই সব বিনিয়োগ কিছুটা এগিয়ে নেওয়া হয়, যার ফলে পরবর্তী বছরগুলি কিছুটা ফাঁকা যায়৷ তবে তো তা হরেদরে একই মনে হলেও, এই ধরণের ব্যাপক ও বড় আকারের বিনিয়োগ থেকে দেশ লাভবান হয়, বলে হামবুর্গের বেরেনব্যার্গ ব্যাংকের অধিকর্তা ইয়র্ন কুইটসাউ মনে করেন:
‘‘এ সব খরচ শেষমেষ ঠিকই উঠে আসে, কেননা যা তৈরি করা হচ্ছে, তা ভবিষ্যতেও ব্যবহার করা চলে৷ বিমানবন্দর, রেলওয়ে স্টেশন কিংবা মোটরওয়ে তৈরি কিংবা বাড়ানোর অর্থ, দেশের অর্থনীতি তা থেকে বহুকাল ধরে লাভবান হবে৷''
একটি দেশের অর্থনীতির উপর ফুটবলের কি প্রভাব পড়ে, কুইটসাউ তা নিয়ে গবেষণা করছেন৷ তাঁর মতে বিক্রিবাটা বাড়ানো কিংবা অবকাঠামোর সম্প্রসারণ বড় কথা নয়, ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নশিপের ফলে দেশের ইমেজ বা ভাবমূর্তির যে উন্নতি ঘটল, সেটাই বড় কথা৷ কুইটসাউ বলেন:
‘‘আমার দৃষ্টিকোণ থেকে একটি দেশের অর্থনীতির পক্ষে এ ধরণের বড় ইভেন্টের মূল সুবিধাটা হল, আমন্ত্রণকর্তা দেশগুলি বিশ্বের গণমাধ্যমে নিজেদের তুলে ধরতে পারে এবং স্বদেশের জন্য প্রচারণা চালাতে পারে৷ এর ফলে যে দেশে ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নশিপ অনুষ্ঠিত হচ্ছে, সে দেশ বিশ্বের জনমানসে, কিবা ইউরোপীয় জনমানসে উঠে আসে৷ এবং সেটাই হল এ ধরণের উদ্যোগ থেকে মূল লাভ৷''
চলতি ইউরো ২০১২'তেও পোল্যান্ড কিংবা ইউক্রেইনের স্বপ্ন শুধু গ্রুপ স্টেজ ছেড়ে কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছনোই নয়৷ দু'টি দেশই চায়, এই ফুটবল ফ্যানরাই আবার পর্যটক হয়ে দেশে ফিরে আসুক, টেলিভিশনের পর্দা আর ফ্যানদের বৃ্ত্তান্ত থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে নতুন পর্যটকরা আসুক৷ দুনিয়া দেখুক, কি রকম আধুনিক দেশ, সুশিক্ষিত, সভ্য-ভব্য মানুষ, মুক্তমনা সমাজ৷ বিদেশি পুঁজি বিনিয়োগকারীরা আগ্রহী হয়ে উঠুক৷
ওদিকে ইউক্রেইনের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক লাভালাভের প্রশ্নটাও থেকে যাচ্ছে৷ বিরোধী রাজনীতিক হুলিয়া টিমোশেঙ্কো'কে আপাতত যে হাসপাতালে রাখা হয়েছে, তার মাত্র ছ'কিলোমিটার দূরেই বুধবার রাতে জার্মানি ও হল্যান্ডের গ্রুপ ‘বি'-র খেলাটি সম্পন্ন হয়৷ অথচ বহিরাগত ফ্যানদের বারংবার টেলিভিশনের ক্যামেরার সামনে বলতে দেখা গেছে, তারা খেলা দেখতে এসেছে, রাজনীতি করতে নয়৷ ফুটবলের গুণাগুণের মধ্য এটাও পড়ে৷
প্রতিবেদন: মিশায়েল হার্টলেপ / এএসসি
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ