ইউরোপে অভিবাসীরা কতটা স্বাগত?
১৩ জুন ২০১০যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবার কয়েক বছর আগে বারাক ওবামা তাঁর দেশে অবৈধভাবে প্রবেশ করা অভিবাসীদের সম্পর্কে এক পডকাস্টে বলেছিলেন, ‘‘তারা এতোটাই মরিয়া যে, দেখে মনে হয়, আমাদের বাচ্চাদের ভালো জীবনযাপনের সুযোগ থাকলে আমরাও একই কাজ করতাম৷''
ইউরোপে ১৯৬৮ সালে ব্রিটিশ রক্ষণশীল রাজনীতিবিদ এনখ্ পাওয়েল তাঁর কুখ্যাত ‘রিভার্স অফ ব্লাড' বক্তৃতায় আফ্রিকানদেরকে 'নিগ্রো' বলে অভিহিত করে তাঁর দেশে বসতি স্থাপন করার জন্যে প্রকাশ্যে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছিলেন৷ প্রকাশ্যে তাঁর এই সাম্প্রদায়িক বক্তব্যের জন্যে তাঁকে মূল্যও দিতে হয়েছে৷ বিরোধী দলের ‘শ্যাডো গভর্নমেন্ট'এর প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে তাঁকে তাঁর পদ খোয়াতে হয়েছে৷ কিন্তু এই অভিবাসনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে সমস্যার কথা পন্ডিতরা বলে থাকেন, তা হচ্ছে সাংস্কৃতিক উদ্বেগ বা দুশ্চিন্তা৷ বলা হয়ে থাকে, কোন দেশের জাতীয় জীবনযাত্রার জন্যে বিদেশিরা একধরনের হুমকি৷
যুক্তরাজ্যে অভিবাসন নিয়ে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী রক্ষণশীল দলের ডেভিড ক্যামেরন বলেছেন, যুক্তরাজ্যে অভিবাসনের মাত্রা খুব বেশি এবং তা দীর্ঘদিন ধরেই তা চলে আসছে৷ গত মাসে নির্বাচনে তাঁর জয়লাভের আগে তিনি এই মন্তব্য করেন৷ বিশেষজ্ঞরা বলেন, স্বল্প জন্মহার এবং বয়স্ক জনগোষ্ঠীর কারণে খুব শিগগিরি ইউরোপে আরও অভিবাসীর প্রয়োজন হবে, যারা পরবর্তিতে অবসরপ্রাপ্ত মানুষের ভাতা নিশ্চিত করতে সহায়তা করবে৷
ইউরোপ অভিমুখে অভিবাসন নতুন কোন বিষয় নয়৷ আধুনিক ইতিহাসের শুরুতে অর্থাৎ ১৯৬০-এর দশকে, লোকজন দেখতে শুরু করলেন যে অভিবাসীরা আসছে, কিন্তু কেউই ফিরে যাচ্ছে না৷ ইউরোপের দেশগুলিতে বিদেশে জন্মগ্রহণকারী অধিবাসীর মোট সংখ্যা এখনও মাত্র চার কোটি ৩০ লাখ৷ অর্থাৎ মোট জনসংখ্যার মাত্র শতকরা ৮ দশমিক ৫ ভাগ৷
লন্ডনের কুইন মেরি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিভাগের এক অধ্যাপক অভিবাসন এবং চরম ডানপন্থি শক্তির উত্থান সম্পর্কে এক সাম্প্রতিক ব্যাখ্যায় বলেছেন, বিষয়টি নিয়ে বহু নিম্ন এবং মধ্য পারদর্শী কর্মী মনে করেন, তাদের কাজ ছিনিয়ে নেয়ার জন্যেই অভিবাসীরা তাদের দেশে আসেন এবং রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীরা দেশের নাগরিকদের চেয়ে বেশি সামাজিক সুবিধা লাভ করে থাকেন৷
আসলে অভিবাসন এখন এমন এক বিতর্কিত বিষয়ে পরিণত হয়েছে, যে মূল ধারার রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষেও বিদেশিদের হয়ে কথা বলা কঠিন বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে৷
প্রতিবেদন: ফাহমিদা সুলতানা
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন