ইউরোপে প্রবৃদ্ধি
৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৩দুর্নীতির দায়ে স্পেনের প্রধানমন্ত্রী মারিয়ানো রাখোই-এর উপর পদত্যাগ করার জন্য চাপ বাড়ছে৷ তিনি অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করে চলেছেন৷ তবে রক্ষণশীল দলের এই চাঁদা কেলেঙ্কারি কতদূর পর্যন্ত গড়াবে ও রাখোই আদৌ তাঁর গদি টিকিয়ে রাখতে পারবেন কি না, তা বলা কঠিন৷ মোটকথা তিনি কড়া হাতে সংস্কার ও ব্যয় সংকোচের যে কর্মসূচি চালিয়ে আসছেন, তার ভবিষ্যতও অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে৷ সেই আশঙ্কায় স্পেনের বন্ডের দামও আচমকা বেড়ে গেছে৷
এদিকে ইটালির আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে অনিশ্চয়তা বাড়ছে৷ বিশেষজ্ঞ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মারিও মন্টি এতদিন যে সব কড়া পদক্ষেপ নিয়ে আসছিলেন, তার ফলে পুঁজিবাজারে আশা বাড়ছিল৷ কিন্তু এবার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট সিলভিও বার্লুস্কোনির জেতার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না৷ তাঁর আমলেই সংকট চরম মাত্রায় পৌঁছেছিল৷ আবার ক্ষমতায় এলে তিনি করের হার কমানোসহ বেশ কিছু জনমোহিনী পদক্ষেপের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন৷ সে ক্ষেত্রে ইটালি আবার সংকটের দিকে ঢলে পড়তে পারে, এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না৷ মন্টি নিজে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন কি না, তা স্পষ্ট নয়৷ তবে আশার কথা, গণতান্ত্রিক দলের প্রার্থী পিয়ের লুইজি বেরসানি মন্টি-র সংস্কারের পথে চলার অঙ্গীকার করেছেন৷ নির্বাচনে আপাতত তাঁরই জয়ের সম্ভাবনা সবচেয়ে উজ্জ্বল৷ মঙ্গলবার জার্মানি সফরে এসে তিনি ইউরোপীয় সমন্বয় প্রক্রিয়ার প্রতি তাঁর আস্থা প্রকাশ করেন ও ইটালির স্থিতিশীলতা রক্ষার প্রতিশ্রুতি দেন৷ এমনকি তাঁর আশা, একদিন ‘ইউরোপীয় যুক্তরাষ্ট্র'-এর স্বপ্নও বাস্তব হবে৷
মূলত স্পেন ও ইটালির রাজনৈতিক সংকটের কারণে পুঁজিবাজার সোমবার মুখ থুবড়ে পড়েছিল৷ মার্কিন ডলারের তুলনায় ইউরোর বিনিময় মূল্যও ধাক্কা খেয়েছে৷ ইউরোপের এই অনিশ্চয়তার ঢেউ বিশ্বের অন্য কিছু বাজারেও পৌঁছেছিল৷ ইউরো এলাকার অর্থনীতির উন্নতির খবর শুনে মঙ্গলবার অবশ্য বাজার আবার কিছুটা স্থিতিশীল হয়েছে৷
মঙ্গলবার যে তথ্য প্রকাশিত হয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে ইউরো এলাকায় বেসরকারি সংস্থাগুলির কার্যকলাপ বেড়ে চলেছে৷ গত ১০ মাসে এই মাত্রার ব্যবসায়িক লেনদেন দেখা যায় নি৷ বছরের প্রথম ৩ মাসেই ইতিবাচক চিত্র পাওয়া যাবে বলে পুঁজিবাজার আশা করছে৷ তবে এই সার্বিক চিত্রের মধ্যেও অসঙ্গতি রয়েছে৷ একদিকে জার্মানির মতো দেশ অনেক উন্নতি করছে, অন্যদিকে সংকটে জর্জরিত দেশগুলি আবার কবে প্রবৃদ্ধির পথে আসবে, তা কেউ জানে না৷
সংকট কাটিয়ে তুলে ইউরোপীয় সমন্বয় প্রক্রিয়াকে আরও তরান্বিত করার পথে বাধা সৃষ্টি করছে ব্রিটেন৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকার প্রশ্নে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন গণভোটের যে অঙ্গীকার করেছেন, তা নিয়ে বিতর্ক এখনো চলছে৷ মঙ্গলবার ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রঁসোয়া ওলঁদ বিরক্তি প্রকাশ করে বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নে থেকে বেছে বেছে শুধু পছন্দের বিষয়গুলি গ্রহণ করা চলে না৷ শুধু জাতীয় স্বার্থের দোহাই দিয়ে সব সদস্য দেশ এমনটা করতে থাকলে ইউরোপের সামগ্রিক স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হবে৷ প্রেসিডেন্ট হিসেবে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে দেওয়া প্রথম ভাষণে ওলঁদ আরও বলেন, ইউরোপ শুধু বাজার, বাজেট ও মুদ্রা নয়৷ সবার আগে এটা একটা রাজনৈতিক সদিচ্ছার প্রকাশ৷ ইউরোপীয় সমন্বয় প্রক্রিয়াকে চলমান প্রকল্প হিসেবে বর্ণনা করে ওলঁদ বলেন, সবারই তাতে সমানভাবে অংশ নেওয়া উচিত৷ বহুস্তরীয় ইউরোপের বিরোধিতা করেন তিনি৷
ইউরোপীয় ইউনিয়নের আগামী শীর্ষ সম্মেলনের আগে আর্থিক লেনদেনের উপর কর, ইইউ বাজেট ইত্যাদি বিষয় নিয়ে ঐকমত্য সৃষ্টি করার চেষ্টা চলছে৷ বাজেটে যে কাটছাঁট করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে, সব দেশ তাতে সম্মতি দেবে কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়৷
এসবি/ডিজি (রয়টার্স, এপি, এএফপি)