ইউরোপে পরিবেশ বান্ধব গাড়ি
১৪ মে ২০১০জার্মানি হচ্ছে গাড়ির স্বর্গ৷ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ গাড়িগুলোর মধ্যে ছয়টি-ই জার্মানি তৈরি করে৷ এখন পরিবেশ রক্ষায় গাড়ি তৈরির কোম্পানিগুলো পরিবেশ বান্ধব গাড়ি তৈরির ওপর জোর দিচ্ছে৷ গ্রিন কার, হাইব্রিড কার তৈরির কথা ভাবছে বড় বড় কোম্পানিগুলো৷ গাড়ি চলবে আবার পরিবেশও দূষণমুক্ত থাকবে৷ মার্সিডিস, পর্শে, বি এম ডাব্লিউ, ওপেল, আউডি এবং ফল্কসভাগেন হচ্ছে জার্মানির বিখ্যাত সব গাড়ি৷
হাইব্রিড গাড়ি হচ্ছে সে ধরণের গাড়ি যা চালাতে দুটো ভিন্ন ধরণের জ্বালানির প্রয়োজন হয়৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় একটি হাইব্রিড গাড়িতে পেট্রোল বা ডিজেলের সাহায্যে একটি ইঞ্জিন চলছে এবং এর সঙ্গে রয়েছে এক বা একাধিক বিদ্যুৎ চালিত ইঞ্জিন৷
বার্লিনে সম্প্রতি জার্মান শিল্পমহলের এক শীর্ষ সম্মেলনের উদ্বোধন করতে গিয়ে চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল বলেন, ২০২০ সালের মধ্যে জার্মানির রাস্তায় অন্তত ১ লক্ষ বিদ্যুৎচালিত গাড়ি তিনি দেখতে চান৷ জার্মান অর্থনীতি এবং প্রযুক্তি মন্ত্রী রাইনার ব্রুডার্লে ইতিমধ্যেই এসব গাড়ি চালানোর জন্য ব্যাটারি এবং গবেষণা বাবদ ১২ মিলিয়ন ইউরোর প্রস্তাব চ্যান্সেলারের কাছে পেশ করেছেন৷
স্টুটগার্টের অবস্থিত পর্শে কোম্পানির পরিচালক মণ্ডলীর প্রধান মিশায়েল মাখ্ট পরিবেশ বান্ধব গাড়ি প্রসঙ্গে বললেন, পর্শে কোম্পানি যে কেয়েন গাড়ি তৈরি করে, আমরা আশা করছি যে তার কমপক্ষে ১৫ শতাংশের ইঞ্জিন হাইব্রিড হবে৷ এবার আমাদের দেখতে হবে বিষয়টি কোনদিকে এগিয়ে যাচ্ছে৷
পর্শে কোম্পানি হাইব্রিড গাড়ি কেয়েন বাজারে ছেড়েছে৷ জ্বালানী তেল ছাড়া বিদ্যুতের সাহায্যে দুই কিলোমিটার পর্যন্ত গাড়িটি চলতে সক্ষম৷ এবং মাত্র ১০ লিটার জ্বালানী তেলের সাহায্যে অনায়াসে ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত যেতে পারবে পর্শের কেয়েন৷ দাম ? মাত্র ৮০ হাজার ইউরো !
গাড়ি থেকে যে কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গমন হয় তা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর, সে বিষয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই৷ জার্মানির বেশ কিছু শহরের মতো বাভারিয়া অঞ্চলের মিউনিখ শহর কর্তৃপক্ষও হাতে নিয়েছে বেশ কিছু পদক্ষেপ৷ শহরের কেন্দ্রস্থলকে পরিবেশ সংরক্ষণ এলাকা বা জোনে ভাগ করা হয়েছে৷ যেসব গাড়ি থেকে বেশি পরিমাণে কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গমন হয়, সে গাড়িগুলোকে শহরের কেন্দ্রস্থলে প্রবেশাধিকার দেয়া হচ্ছে না৷ এছাড়া প্রতিটি গাড়ির ওপর লাল, হলুদ এবং সবুজ স্টিকার লাগিয়ে দেয়া হচ্ছে৷ এ বছরের অক্টোবর মাস থেকে লাল স্টিকার লাগানো গাড়িগুলোকে শহরের কেন্দ্রস্থলে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হবে না৷ মিউনিখের পরিবেশ এবং স্বাস্থ্য দপ্তরে কাজ করছে ইয়োআখিম লোরেনৎস৷
তিনি বললেন, যে সব গাড়িতে কোনো স্টিকার লাগানো নেই, সেই গাড়িগুলোকে কোন অবস্থাতেই শহরে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হচ্ছে না৷ অক্টোবর মাসের ১ তারিখ থেকে লাল স্টিকারের গাড়িগুলোকে আটকে দেয়া হবে৷ এর দু বছর পর হলুদ স্টিকারকেও প্রবেশে বাধা দেয়া হবে৷
প্রায় ৪ লক্ষ মানুষ মিউনিখের কেন্দ্রে এই বিশেষভাবে চিহ্নিত এলাকায় বসবাস করছে৷ তাদের সবাইকে বাধ্যতামূলকভাবেই পরিবেশ বান্ধব গাড়ি ব্যবহার করতে বলা হচ্ছে৷
তবে বেশ কিছু কোম্পানি ইতিমধ্যেই কাজ শুরু করে দিয়েছে৷ বি এম ডাব্লিউ ২০১৩ সালের মধ্যে বাজারে ছাড়তে যাচ্ছে জিরো এমিশন ভেহিকেল - অর্থাৎ যে গাড়ি থেকে কোনো কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গমন হবে না৷ এই মুহূর্তে কোম্পানিটি বিদ্যুৎচালিত ৬০০ গাড়ি পরীক্ষা করছে৷ এছাড়া চীনের কাছে ৫০টি মিনি বিদ্যুৎচালিত গাড়ি বিক্রি করবে বি এম ডাব্লিউ৷
পিছিয়ে নেই মার্সিডিসও৷ ২০০৮ সালে মার্সিডিস চীনের কাছে পরিবেশ বান্ধব প্রায় ১ লক্ষ ২২ হাজার ই-ক্লাস গাড়ি বিক্রি করেছে, এ বছর সংখ্যা বেড়ে ২ লক্ষ হয়েছে৷ গাড়িটি আকারেও ছোট৷ তবে এগিয়ে গেছে জাপান৷ এ বছরই জাপানের নিশান কোম্পানি বিদ্যুৎচালিত গাড়ি বাজারে ছাড়ছে৷ গাড়ীগুলোর দাম কত হবে তা এখনো জানা যায়নি৷
প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন