ইউরোপের শিক্ষিত বেকার
৩০ জুন ২০১৩সুইডেনের লিনকোপিং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইকো-ট্যুরিজম ও সাংস্কৃতিক ইতিহাসের স্নাতক হয়ে মাসের পর মাস বেকার থাকা, অ্যাপ্লিকেশনের পর অ্যাপ্লিকেশন পাঠিয়ে মাত্র দু'টি ইন্টারভিউ'-এর ডাক পাওয়া, এই সব অভিজ্ঞতা হালের ইউরোপে সাধারণ অভিজ্ঞতা হয়ে দাঁড়িয়েছে৷
অবশ্য জার্মানি সহ ইউরোপের অধিকাংশ দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে পাঠ্য বিষয় ও বিভাগের ফিরিস্তি দেখলে মনে হতে পারে, এরা বোধহয় এখনও একটা স্বপ্নলোকে বাস করে৷ নানা ধরনের বিষয়, যেগুলি পঠনপাঠনের যতই যৌক্তিকতা থাক না কেন, টানাপোড়েনের সময় সে সব ফিল্ডে চাকরি পাওয়া প্রায় অসম্ভব৷
অথচ শুধু ইউরোপের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতেই নয়, ইউরোপীয় সংস্কৃতির বুনিয়াদই হলো – অন্তত অংশত – এই ধরনের পঠনপাঠন, যার আপাতদৃষ্টিতে তাৎক্ষণিক ব্যবহারিক উপযোগিতা কম৷ ইউরোপীয় সভ্যতা বা সংস্কৃতি বলতে যা কিছু বোঝায়, তার একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ শুধুমাত্র ব্যবহারিক উপযোগিতার নামে জলাঞ্জলি দেওয়া চলে কিনা, তা নিয়েও আবার দ্বিমত থাকতে পারে৷
বেশি যোগ্যতা থাকা কি অপরাধ?
কিন্তু সুইডেনের মতো মাত্র ৮০ লাখ মানুষের দেশ, যারা যেমন সমৃদ্ধি, তেমনই সামাজিক সুযোগসুবিধার শিখরে, সেখানেও যখন তরুণ সুইডরা কোনো ভালো চাকরি-বাকরি পাবার সম্ভাবনা না দেখে দাঙ্গা করে – তাহলে বাকি ইউরোপের যে কি দশা, তা সহজেই উপলব্ধি করা যায়৷ ইউরোপের বহু দেশে উচ্চশিক্ষিতদের একটি গোটা প্রজন্মের উপর এই অভিজ্ঞতা মানসিক ক্ষত রেখে যেতে পারে বলে মনস্তত্ববিদদের আশঙ্কা৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকরা হ্যামবার্গার ভাজছে কিংবা কফিশপে কফি সার্ভ করছে, ইউরোপের এ দৃশ্য আজ বিরল নয়৷
ইউরোপীয় ইউনিয়নের ওয়ার্কফোর্স বা মোট কর্মজীবীর সংখ্যা যদি ২৪ কোটি ধরা হয়, তবে তাদের মধ্যে সাড়ে ছয় কোটি বস্তুত ওভারকোয়ালিফায়েড, বা যে চাকরি তারা করছে, তার তুলনায় তারা অনেক বেশি যোগ্যতা সম্পন্ন – এই হলো ওইসিডি-র পরিসংখ্যান৷ এছাড়া যারা অনিচ্ছাসত্ত্বেও পার্ট-টাইম চাকরি করতে বাধ্য হচ্ছে তাদের সংখ্যা প্রায় ৯০ লাখ৷ আর ইচ্ছা-অনিচ্ছার প্রশ্ন বাদ দিলে ইউরোপের মোট কর্মজীবীদের এক-পঞ্চমাংশই পার্ট-টাইম কাজ করে থাকেন৷
হারানো প্রজন্ম
লস্ট জেনারেশন, একটা গোটা হারানো প্রজন্মের কথা আজকাল বার বার শোনা যাচ্ছে৷ ইউরোপীয় সংসদের সভাপতি মার্টিন শুলৎস বলেছেন: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ যাবৎ নাকি ইউরোপে এ রকম একটা উচ্চশিক্ষিত প্রজন্ম দেখা যায়নি৷ তাদের বাবা-মায়েরা তাদের শিক্ষায় টাকা ঢেলেছেন৷ অথচ তারা যখন কাজ করতে প্রস্তুত, তখন সমাজ তাদের বলছে, ‘তোমাদের জন্য কোনো জায়গা নেই৷' ‘‘আমরা একটা হারানো প্রজন্ম সৃষ্টি করছি,'' বলেছেন শুলৎস৷
বলা বাহুল্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকরা ছড়াছড়ি যাচ্ছে বলেই কোম্পানিগুলি চাকুরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে জব এক্সপেরিয়েন্স বা কাজের অভিজ্ঞতা দাবি করতে শুরু করেছে৷ যার ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পুঁথিগত বিদ্যা আর কর্মক্ষেত্রের মধ্যে ব্যবধানটা আরো বেড়েছে বৈ কমেনি৷
এসি/ডিজি (রয়টার্স)