ইউরোপ কী করবে?
৫ অক্টোবর ২০১৫ইউরোপীয়, অ্যামেরিকান ও আরব দেশগুলির একটি সত্বর দান প্রকল্পের প্রয়োজন, যা-তে যে সব প্রতিষ্ঠান অকুস্থলে উদ্বাস্তুদের সাহায্য করছে, তাদের অর্থ সঙ্কুলান হতে পারে৷ এছাড়া আন্তর্জাতিক দাতা সম্মেলনগুলিকেও সক্রিয় হতে হবে, যা-তে সংশ্লিষ্ট এলাকায় পুনর্নির্মাণ ও পুঁজিবিনিয়োগের উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনাকে সাহায্য করা যেতে পারে৷
নিরাপদে ইউরোপে আসার পথ খোলা দরকার
সেই সঙ্গে আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যে, উদ্বাস্তুরা নিরাপদ, বৈধ উপায়ে ইউরোপ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ক্যানাডার মতো অপরাপর শিল্পোন্নত দেশে আসতে পারেন৷ বিভিন্ন পুনর্বাসন প্রকল্প, নির্দ্দিষ্ট কোটা, পরিবারের লোকজনের পরে আসার ব্যবস্থা এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা থাকলে উদ্বাস্তুরা মানুষ পাচারকারীদের হাতে গিয়ে পড়বেন না এবং শোষণ, ব্ল্যাকমেল, নিপীড়ন অথবা যৌন নিপীড়ন থেকে বাঁচবেন৷
কিছু কিছু দেশ মানবিক বিচারে বাস্তবিক নেতৃত্ব দেবার ক্ষমতা প্রদর্শন করেছে, কেননা তারা দীর্ঘমেয়াদি সূত্রে বিপুল সংখ্যক উদ্বাস্তুকে আশ্রয় দেবার প্রস্তুতি ঘোষণা করেছে৷ সেপ্টেম্বরের একটি সপ্তাহান্তে জার্মানিতে যত উদ্বাস্তু এসে পৌঁছেছেন, ব্রিটেন আগামী পাঁচ বছরে তার চেয়ে কম উদ্বাস্তু নিতে রাজি৷ ইউরোপীয় সরকারপ্রধানদের তরফে অধিকতর সমন্বয় ও ন্যায্য ভারবণ্টনের প্রয়োজন৷
কার্যকরিভাবে এই সংকটের মোকাবিলা করার জন্য, যে সব উদ্বাস্তুরা ইতিমধ্যেই ইউরোপে এসে পৌঁছেছেন, তাঁদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করা প্রয়োজন৷ এখানেও ইউরোপীয় দেশগুলির কিছু জরুরি ব্যবস্থা নেওয়া উচিত৷
প্রথমেই নিশ্চিত করতে হবে যে, উদ্বাস্তুরা ইউরোপে আসার পর তাদের সহৃদয়তা ও মানবিক মর্যাদার সঙ্গে অভ্যর্থনা জানানো হচ্ছে৷ দক্ষিণ ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বহির্সীমান্তে একটি কার্যকরি ও সমন্বয়কৃত অভিযান চালু করার জন্য ব্রাসেলস থেকে প্রয়োজনীয় আর্থিক ও ব্যবহারিক সাহায্য দিতে হবে৷ এর অর্থ, আগত উদ্বাস্তুরা খাদ্য ও ওষুধপত্র পাবেন; তাঁদের নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হবে; আসার পর পরই তাঁরা শৌচালয়, স্নানাগার ইত্যাদি ব্যবহারের সুযোগ পাবেন৷
দায়িত্ব ভাগ করে নাও, কিন্তু মান একই থাকবে
ভূমধ্যসাগরের উপকূলবর্তী দেশগুলির একমাত্র সমস্যা যে এই উদ্বাস্তু সংকট, এই ভ্রান্ত ধারণাটিকে বিদায় দেওয়া দরকার৷ এ বছর গ্রিসে প্রায় দু'লাখ পঁয়তাল্লিশ হাজার উদ্বাস্তু পৌঁছেছেন; বড়দিন অবধি আরো দু'লক্ষ উদ্বাস্তু গ্রিসে আসবেন, বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে৷ কিন্তু ইইউ-এর সদস্যদেশগুলি এ যাবৎ গ্রিস ও ইটালি থেকে শুধুমাত্র এক লক্ষ বিশ হাজার উদ্বাস্তু নেওয়া সম্পর্কে একমত হতে পেরেছে৷ এই পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটানো দরকার৷ ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট জঁ-ক্লোদ ইয়ুংকার যে পরিকল্পনা দিয়েছেন, তা উদ্বাস্তু বণ্টনের নির্দিষ্ট কোটা পদ্ধতিতে উত্তরণের একটা পন্থা হতে পারে৷
ইয়ুংকার-এর পরিকল্পনায় সঠিকভাবেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, যাঁদের রাজনৈতিক আশ্রয় পাবার কোনো অধিকার নেই, তাঁদের ফেরৎ পাঠাতে হবে৷
সংহতির সময় এসেছে
এই আয়তনের একটি সংকটের সমাধান করা কোনো দেশের পক্ষে একা সম্ভব নয়, যাবতীয় সদিচ্ছা সত্ত্বেও, খোদ ইউরোপের পক্ষেও নয়৷ একটি বিশ্বব্যাপী সমস্যার একটি বিশ্বব্যাপী সমাধান প্রয়োজন৷ কিন্তু ইউরোপ যদি এই সমস্যার আকার ও আয়তন অনুযায়ী তার নিজের নীতি ও আচরণ নির্ধারণ করে, তাহলে তা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, উপসাগরীয় দেশগুলি এবং অপরাপর দেশের প্রতীতি জন্মাতে সাহায্য করবে৷
সিগমার গাব্রিয়েল, ভাইস চ্যান্সেলর, ফেডারাল জার্মান প্রজাতন্ত্র; ফেডারাল অর্থনীতিমন্ত্রী এবং সামাজিক গণতন্ত্রী দলের সভাপতি৷
ডেভিড মিলিব্যান্ড, সাবেক ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী (২০০৭-২০১০); বর্তমানে নিউ ইয়র্ক ভিত্তিক আন্তর্জাতিক ত্রাণ পরিষদের সভাপতি৷