ইউরোপের প্রাণকেন্দ্রে দুর্নীতির উপর কাতারের ছায়া
১২ ডিসেম্বর ২০২২ইউরোপীয় পার্লামেন্টের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের উপর প্রভাব রাখতে বিভিন্ন কোম্পানি, শিল্পক্ষেত্র ও রাষ্ট্রের লবি যে সক্রিয় থাকে, সেটা কারও অজানা নয়৷ সেই প্রক্রিয়া স্বচ্ছ করে তোলার উদ্দেশ্যে একের পর এক বিধিনিয়ম আরোপ করা হলেও ঘাটতি থেকে গেছে৷ এবার পার্লামেন্টের অন্যতম ভাইস প্রেসিডেন্টসহ চার ব্যক্তির বিরুদ্ধে মারাত্মক অভিযোগ উঠেছে৷ রোববার বেলজিয়ামের এক বিচারপতি তাদের বিরুদ্ধে কাতারের কাছ থেকে অবৈধভাবে নগদ অর্থ ও দামী উপহার নেবার অভিযোগ এনেছেন৷ ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রেসিডেন্ট রোব্যার্তা মেৎসোলাও শনিবার একটি ভবনে তল্লাশির সময়ে উপস্থিত ছিলেন৷ বেলজিয়ামের সংবিধান অনুযায়ী ইউরোপীয় পার্লামেন্টের কোনো বেলজিয়ান সদস্যের তল্লাশি চালাতে হলে সেটা বাধ্যতামূলক৷
শুক্রবার বেলজিয়ামের কর্তৃপক্ষ ব্রাসেলসে ১৬টি বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে ছয় লাখ ইউরো, বেশ কয়েকটি কম্পিউটার ও মোবাইল ফোন বাজেয়াপ্ত করেছে৷ সে যাত্রায় ছয় জনকে আটক করলেও চার জনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আনা হয়েছে৷ তাদের মধ্যে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের অন্যতম ভাইস প্রেসিডেন্ট ও গ্রিসের সমাজতন্ত্রী দলের নেত্রী এভা কাইলিও রয়েছেন৷ পার্লামেন্ট রোববারই তাকে সাসপেন্ড করেছে এবং দলও তাকে বহিষ্কার করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে৷ কাইলি সম্প্রতি কাতার সফর করে সে দেশের শ্রম আইনের উন্নতির ভূয়সী প্রশংসা করেন ও কাতারের সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনার ধার কমানোর মরিয়া প্রচেষ্টা চালান৷ মার্ক তারাবেলা নামের ইউরোপীয় পার্লামেন্টের এক বেলজিয়ান সদস্যের বাসায়ও তল্লাশি চালানো হয়েছে৷ তবে তার বিরুদ্ধে আপাতত কোনো অভিযোগ আনা হয় নি৷ তিনি আরব উপদ্বীপের সঙ্গে সম্পর্কের ভারপ্রাপ্ত সংসদীয় প্রতিনিধিদলের সদস্য৷
কাতারের সরকার অবশ্য ব্রাসেলসে দুর্নীতির অভিযোগ ‘সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন’ হিসেবে বর্ণনা করে দায় স্বীকার করতে অস্বীকার করেছে৷ সে দেশের এক সরকারি কর্মকর্তা বলেন, আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী সে দেশ প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে সম্পর্ক রাখে৷ উল্লেখ্য, চলতি সপ্তাহেই ইউরোপীয় পার্লামেন্টে কুয়াইত, কাতার, ওমান ও ইকুয়াডোরের নাগরিকদের ভিসা-মুক্ত ভ্রমণের সুযোগের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হবার কথা৷ তবে বর্তমান কেলেঙ্কারির জের ধরে অনেক সদস্য সেই প্রক্রিয়া মুলতুবি রাখার দাবি জানাচ্ছেন৷
ইউরোপীয় কমিশনের অর্থনীতি বিষয়ক কমিশনর পাউলো জেন্টিলোনি দুর্নীতির এমন ঘটনা সম্পর্কে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, অর্থের বিনিময়ে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সিদ্ধান্তের উপর প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হলে, সেটি সাম্প্রতিক বছরগুলিতে দুর্নীতির অন্যতম নাটকীয় ঘটনা হবে৷ ইউরোপীয় পার্লামেন্ট ও পার্লামেন্টের প্রেসিডেন্টের দপ্তর দুর্নীতির তদন্তে যাবতীয় সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে৷ সোমবারই পার্লামেন্টের সংসদীয় দলগুলির নেতাদের জরুরি বৈঠক ডাকা হয়েছে৷ এমনকি ভাইস প্রেসিডেন্ট কাইলির আইনি রক্ষাকবচ তুলে নেওয়ার বিষয়েও ভাবনাচিন্তা চলছে৷
এসবি/কেএম (রয়টার্স, এএফপি)