1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ইটালি পৌঁছাতে কেন মরিয়া বাংলাদেশিরা

৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২

অনিয়মিত পথে গত বছর অন্তত আট হাজার ৬৬৭ জন বাংলাদেশি ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) ঢুকেছেন৷ ইউরোপের বহিঃসীমান্তরক্ষী সংস্থা ফ্রনটেক্স-এর হিসাবে ঝুঁকিপূর্ণ উপায়ে অবৈধভাবে ইটালি প্রবেশের তালিকায় বাংলাদেশিরা রয়েছেন দ্বিতীয় অবস্থানে৷

https://p.dw.com/p/46ViU
Sizilien Trapani | Rettungsschiff Sea-Eye 4 mit Migranten
ছবি: Carmelo Imbesi/Ansa/Zuma/imago images

গত বছর লিবিয়া থেকে ভূমধ্যসাগর পেরিয়ে ইটালি আসেন বাংলাদেশের সবুজ৷ ইনফোমাইগ্রেন্টসকে তিনি বলেন, ‘‘কয়েক বছর আগে আমার বাবা মারা যাওয়ার পর আমি লিবিয়া যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেই৷ পরিবারের আট জনের মধ্যে আমিই একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি৷''

২০২০ সালে প্রায় চার লাখ টাকা খরচে লিবিয়া পৌঁছান ২৫ বছর বয়সি এই যুবক৷ সেই সময় অবশ্য তার ইটালি যাওয়ার কোন পরিকল্পনা ছিল না৷ লিবিয়ার বেনগাজিতে শুরুতে নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন তিনি৷ কিন্তু সেখানে নিয়মিত বেতন পেতেন না৷ বকেয়া চাইতে গেলে উল্টো মারধরের শিকার হতেন বলে জানান তিনি৷ এক পর্যায়ে সবুজ উন্নত জীবনের আশায় লিবিয়া থেকে ইটালি যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন৷

‘‘একটি নৌকায় করে ২৪ ঘণ্টা ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে আমরা ২০২১ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি লাম্পেদুসা দ্বীপের কাছে পৌঁছাই৷ ঐ নৌকায় মোট ৯৩ জন ছিলেন৷ এর মধ্যে ৪০ জনের বেশি ছিলেন আমাদের দেশি,'' বলেন তিনি৷ ইটালি পৌঁছানোর পর থেকে রোমে একটি অভিবাসন কেন্দ্রে রয়েছেন সবুজ৷ তার স্বপ্ন ইউরোপীয় দেশটিতে একটি ভালো চাকরি করা, যদিও সেই স্বপ্ন এখনও অধরা৷

সবুজ বলেন, ‘‘আমাকে ভূমধ্যসাগর হয়ে ইটালি আসতে দুই হাজার ইউরো খরচ করতে হয়েছে৷ কিন্তু এখনও আমি বেকার৷ এখানে কাউকে চিনি না আমি৷ কেউ এখানে আমাকে চাকরি দিচ্ছে না৷ দেশে এখনও আমার মা মানুষের ঘরে কাজ করছে৷ জানি না সামনে কী আছে৷''

ট্রানজিট লিবিয়া

সমুদ্রপথে ইটালিতে আসা অভিবাসীদের বড় একটি অংশই পাড়ি জমান উত্তর আফ্রিকার দেশ লিবিয়া থেকে৷ ইউএনএইচসিআর এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী চলতি মাসে সমুদ্রপথে ইটালিতে পৌঁছেছেন দুই হাজার ৯৯৫ জন৷ এর মধ্যে ২০৯১ জনই লিবিয়া থেকে এসেছেন৷ এদের একটি বড় অংশ বাংলাদেশি৷

লিবিয়ায় অবস্থানরত অভিবাসীদের নিয়ে আন্তর্জাতিক অভিবাসী সংস্থা আইওএম এর সবশেষ প্রকাশিত ত্রৈমাসিক প্রতিবেদন অনুযায়ী নভেম্বর পর্যন্ত সেখানে ২০ হাজার ২৫৪ জন বাংলাদেশি ছিলেন, যা মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো থেকে আগত অভিবাসীদের মধ্যে ৪০ শতাংশ৷

ইউএনএইচসিআরের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই অভিবাসীদের ২৪ শতাংশ দেশটিতে এসেছেন তুরস্ক হয়ে৷ ১৯ শতাংশ সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মিশর হয়ে এবং ১৬ শতাংশ এসেছেন সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে তুরস্ক হয়ে৷ বাকি ৪১ শতাংশ অন্য রুট যেমন, ভারত, কাতার, কুয়েত, জর্ডান, টিউনিশিয়া বা অন্য কোন দেশ ঘুরে লিবিয়া আসেন৷ এজন্য তারা বাংলাদেশি মুদ্রায় জনপ্রতি প্রায় আড়াই লাখ টাকা থেকে (২,৬৮২ ডলার) থেকে সোয়া তিন লাখ টাকার বেশি (৩৮৬৩ ডলার) ব্যয় করেন৷ পরে সেখান থেকে তারা ইউরোপে বিশেষ করে ইটালিতে যাওয়ার চেষ্টা করেন

গন্তব্য ইউরোপ

গত এক দশক ধরে বাংলাদেশের অর্থনীতির সূচকগুলো উর্ধ্বমুখী৷ জিডিপি প্রবৃদ্ধি ও মাথাপিছু আয় লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে প্রতিবছর৷ এশিয়ার অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতি হওয়া সত্ত্বেও প্রতি বছর কয়েক হাজার মানুষ উন্নত জীবনের স্বপ্নে ঝুঁকি নিয়ে ইউরোপ পাড়ি জমাচ্ছেন৷    

ইউরোপের বহিঃসীমান্তরক্ষী বাহিনী ফ্রনটেক্সের হিসাবে গত বছর আট হাজার ৬৬৭ জন অবৈধ উপায়ে ইইউ দেশগুলোতে প্রবেশ করেছেন৷ এরমধ্যে সাত হাজার ৫৭৪ জনই এসেছে মধ্য ভূমধ্যসাগর হয়ে৷ ৬০৪ জন প্রবেশ করেন পূর্ব ভূমধ্যসাগর দিয়ে, আর ৪৩৭ জন ঢুকেছেন পশ্চিম বলকান দিয়ে৷ ফ্রনটেক্সের এই তালিকায় লিবিয়া থেকে ভূমধ্যসাগর দিয়ে ইটালিতে আসাদের মধ্যে বাংলাদেশিদের অবস্থান দ্বিতীয়৷ এই পথ পাড়ি দিয়ে ইটালির লাম্পেদুসায় পৌঁছাতে গিয়েই গত মাসে সাত বাংলাদেশি ঠান্ডায় মারা যান৷  

রোমে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শামীম আহসান জানান, দেড় লাখের মতো বাংলাদেশি অভিবাসী বর্তমানে ইটালিতে বসবাস করছেন৷ এত বাংলাদেশি নেই ইইউভুক্ত আর কোনো দেশে৷ তিনি ইনফোমাইগ্রেন্টসকে বলেন, ‘‘এমন একটা ধারণা মানুষের মধ্যে আছে যে ইটালি বিদেশিদের প্রতি খুবই আন্তরিক৷ তারা মনে করে কোনভাবে দেশটিতে আসতে পারলে এক পর্যায়ে বৈধতা পাওয়া যাবে৷''

বৈধ অভিবাসনের সীমিত সুযোগ

আট বছর বন্ধ থাকার পর ইটালি বাংলাদেশিদের জন্য সিজনাল ও নন সিজনাল ভিসা আবেদনের সুযোগ করে দিয়েছে৷ এই স্কিমের অধীনে বাংলাদেশসহ ৩০টি দেশ থেকে ৬৯,৭০০ অভিবাসীকর্মী আনার অনুমতি দিয়েছে দেশটির শ্রম ও সামাজিক পরিকল্পনা বিষয়ক মন্ত্রণালয়৷

এ বিষয়ে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শামীম আহসান বলেন, ‘‘বাংলাদেশের অভিবাসীদের ইটালিতে বৈধপথে আসার চেষ্টা করা উচিত৷ কেননা অবৈধদের ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে সাক্ষরিত স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসেডিউর্স (এসওপি) এর আওতায় বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে৷''

তবে বিশ্লেষকরা মনে করেন, ইটালিতে বাংলাদেশিদের জন্য বৈধপথে আসার সুযোগ এখনও বেশি সীমিত৷ ইটালির ভেনিসে অবস্থানরত বাংলাদেশি সাংবাদিক পলাশ রহমান বলেন, ‘‘সাম্প্রতিক সার্কুলারের অধীনে মাত্র সাড়ে তিন হাজার বাংলাদেশি আসার সুযোগ পাবে৷ ইউরোপে আসতে আগ্রহীদের তুলনায় এই সংখ্যা খুবই নগণ্য৷''

তিনি মনে করেন, অনিয়মিতি উপায়ে ইউরোপে আসার প্রবণতা বন্ধ করতে হলে বৈধ উপায়ে আসার সুযোগ আরো বৃদ্ধি করতে হবে৷

প্রথম প্রকাশ: ০৩ ফেব্রুয়ারি , ২০২১ ইনফোমাইগ্রেন্টস

অভিবাসী বিষয়ক সংবাদমাধ্যম ইনফোমাইগ্রেন্টস তিনটি প্রধান ইউরোপীয় সংবাদমাধ্যমের নেতৃত্বে একটি যৌথ প্লাটফর্ম৷ প্লাটফর্মটিতে রয়েছে জার্মানির আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ডয়চে ভেলে, ফ্রান্স মিডিয়া মোন্দ, এবং ইটালিয়ান সংবাদ সংস্থা আনসা৷ এই প্রকল্পের সহ-অর্থায়নে রয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন৷