ইটালিতে প্লাস্টিকের ব্যাগ নিষিদ্ধ, বাংলাদেশের লাভ
৭ জানুয়ারি ২০১১ইটালিতে একজন মানুষ প্রতিবছর গড়ে ৩৩৩টি প্লাস্টিকের ব্যাগ ব্যবহার করতো৷ পুরো ইউরোপের এক-পঞ্চমাংশ প্লাস্টিক ব্যাগের ব্যবহার হতো ইটালিতে৷ সব মিলিয়ে এক বছরে প্রায় ২০ বিলিয়ন ব্যাগ ব্যবহার হতো সেখানে৷ এর মানে হলো, এখন তাদের এই সমপরিমাণ ব্যাগ দরকার, কিন্তু সেটা হতে হবে অন্য কিছুর তৈরি৷ আর এখানেই চলে আসে বাংলাদেশের সম্ভাবনার কথা৷ কারণ পাট দিয়ে তৈরি ব্যাগ৷
বাংলাদেশের জন্য সুখবর
ইটালি যেটা কেবল এখন করলো, বাংলাদেশ সেটা করেছে প্রায় নয় বছর আগে, ২০০২ সালে৷ সেসময় আইন করে প্লাস্টিকের ব্যাগ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছিল৷ ফলে তখন প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল বিকল্প ব্যাগের৷ আর বাংলাদেশ যেহেতু একসময় পাটের জন্য বিখ্যাত ছিল তাই সবার মনে পড়ে যায় পাটের তৈরি ব্যাগের কথা৷ তখন থেকে পাটের ব্যাগ নিয়ে আবার আলোচনা শুরু হয়, শুরু হয় গবেষণা, আরও কীভাবে উন্নত ব্যাগ তৈরি করা যায় তা নিয়ে৷ ফলে একসময় দেখা গেল এক্ষেত্রে উন্নতি করা গেছে এবং সেটা এমন পর্যায়ে গেছে যে, বাইরেও রপ্তানি শুরু হলো পাট ব্যাগের৷ তবে শুধু ব্যাগই নয়, পাটের তৈরি অন্যান্য পণ্যও বিশ্বের বাজারে জায়গা করে নিতে শুরু করে৷ ফলে দিন ফিরতে থাকে পাট চাষীদের৷ দেখতে দেখতে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি এত বেড়ে যায় যে, বর্তমানে তৈরি পোশাকের পর রপ্তানি আয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে পাটের নাম৷
ইটালিতে ব্যাগের এত বড় বাজার খুলে যাওয়া বাংলাদেশের জন্য সুখবর৷ এমনটাই বললেন বাংলাদেশের পাট উদ্যোক্তা আসমা মাহবুব মনি৷ তিনি বলছেন, বিশ্বব্যাপী প্লাস্টিকের ব্যাগ ব্যবহার নিষিদ্ধ করার যে প্রক্রিয়া ধীরে ধীরে শুরু হয়েছে সেটা বাংলাদেশের জন্য ভাল৷
কীভাবে নিষিদ্ধ হলো
ইটালিতে কাজটি সহজ ছিলনা৷ প্রথমে কথা ছিল গত বছরের জানুয়ারি থেকেই প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যবহার নিষিদ্ধ হবে৷ কিন্তু ব্যবসায়ীদের চাপে সেটা সম্ভব হয়নি৷ পরে ইটালির পরিবেশমন্ত্রী স্টেফানিয়া প্রেস্টিগিয়াকোমো'র নেয়া কঠোর সিদ্ধান্তের কারণে পরিকল্পনাটা বাস্তবায়ন করা গেছে৷ ফলে ইটালিতে এখন সবাইকে পরিবেশ বান্ধব ব্যাগ ব্যবহার করতে হচ্ছে৷ এগুলো আপাতত তৈরি হচ্ছে কাগজ বা কাপড় বা সহজে পচে যায় এমন কিছু দিয়ে৷ সেখানে এখন চেষ্টা করে বাংলাদেশের পাটের ব্যাগ ঢোকাতে হবে৷ আর এ ব্যাপারে এগিয়ে আসতে হবে সরকারকে৷ সঙ্গে বেসরকারি খাতকেও৷
কেন ইটালিতে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হলো? এ ব্যাপারে দেশটির একটি পরিবেশবাদী গোষ্ঠী লেগামবিনতে বলছে, প্লাস্টিকের ব্যাগ তৈরি করতে অনেক তেল খরচ হয়৷ এছাড়া এগুলো সহজে নষ্ট হয় না, তাই পয়ঃনিষ্কাশন লাইনে গিয়ে আটকে যায়৷ চোখেও যন্ত্রণা হয় প্লাস্টিকের কারণে৷ সঙ্গে রয়েছে পরিবেশের উপর ক্ষতিকর প্রভাব৷
প্লাস্টিক ব্যাগের ক্ষতিকর দিক
বাংলাদেশের একটি অনলাইন সংসাদ সংস্থা খবরে বলা হয়েছে, টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে ডুবোচর জেগে উঠেছে৷ এবং সেখানে পানির গভীরতা কমার অন্যতম কারণ হিসেবে বলা হয়েছে প্লাস্টিকের ব্যাগের কথা৷ বাংলাদেশে এই ব্যাগ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হলেও এখনো অনেকে সেটা করছেন৷ সেই ব্যাগ খালের পানি দিয়ে গড়িয়ে গিয়ে পড়ছে সাগরে৷ আর প্লাস্টিক যেহেতু পচে না তাই দিনের পর দিন তা জমে সাগরের বুকে স্থায়ী জায়গা নিয়েছে৷
এদিকে সাম্প্রতিক এক জরিপে বলা হয়েছে, সাগরে মারা যাওয়া মোট কচ্ছপের এক-তৃতীয়াংশ মারা গেছে প্লাস্টিকের কারণে৷ প্লাস্টিক খাওয়ার কারণে হজমে সমস্যা হওয়ায় কচ্ছপগুলোর এই পরিণতি হয়েছে বলে ঐ জরিপে বলা হয়েছে৷
এছাড়া প্লাষ্টিক মাটির জন্যও অত্যন্ত ক্ষতিকর৷ কারণ তা মাটিতে থাকা উপকারী ব্যাকটেরিয়া মেরে ফেলে এবং সূর্যালোক মাটিতে পৌঁছতে দেয় না৷ তাই ফসলের জমিতে পলিথিন জাতীয় ব্যাগ থাকলে সেখানকার মাটির উর্বরতা কমে যায়৷
প্রতিবেদন: জাহিদুল হক
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক