ইটালিতে মৃত সাড়ে পাঁচ হাজার
২৩ মার্চ ২০২০শনিবারের পরে রবিবারেও বদলালো না ছবিটা। ইটালিতে মৃত্যুমিছিল অব্যাহত। শনিবার সেখানে করোনা ভাইরাসের প্রকোপে মৃত্যু হয়েছিল ৭৯৩ জনের। রবিবার মৃত্যু হল ৬৫১ জনের। যার জেরে শুধু ইটালিতেই এখনও পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল পাঁচ হাজার ৪৭৬। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চলতি সপ্তাহে ভাইরাসের প্রকোপ আরও বাড়বে। ইউরোপের অন্যান্য দেশের পরিস্থিতিও তথৈবচ। ফ্রান্সে মৃতের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। আইসোলেশনে চলে গিয়েছেন জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল।
ইটালি প্রশাসন গোটা দেশে লক ডাউন ঘোষণা করেছিল অনেক আগেই। রবিবার জানানো হয়, কোনও ভাবেই এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে যাতায়াত করা যাবে না। প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে বেরনোর ক্ষেত্রে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। জার্মানিতে দুই জনের বেশি জমায়েতের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। রবিবার দেশের চ্যান্সেলরও আইসোলেশনে চলে গিয়েছেন। জানানো হয়েছে, এক চিকিৎসকের সঙ্গে দেখা করেছিলেন তিনি। পরে সেই চিকিৎসকের করোনা ধরা পড়ায় ম্যার্কেল আইসোলেশনে চলে যান। আপাতত ঘরে বসেই অফিস চালাবেন চ্যান্সেলর।
ইউরোপে ইটালির পরে সব চেয়ে ভয়াবহ চেহারা এখন স্পেনের। ১১ এপ্রিল পর্যন্ত সেখানে জরুরি অবস্থা ঘোষণা হয়েছে। এখনও পর্যন্ত শুধু স্পেনে করোনায় মৃত্যু হয়েছে ১৭০০ লোকের। ফ্রান্সেও গত ২৪ ঘণ্টায় মৃতের সংখ্যা লাফিয়ে বেড়েছে। শনিবার পর্যন্ত সেখানে মৃতের সংখ্যা ছিল ১১২। রবিবার তা এক লাফে পৌঁছে গিয়েছে ৬৭৪ এ। শুধু ফ্রান্সেই এখনও পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ১৬ হাজার মানুষ।
কানাডা এবং অ্যামেরিকার পরিস্থিতিও উদ্বেগজনক হয়ে উঠেছে। কানাডার প্রশাসন জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় মৃতের সংখ্যা ৫০ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে। অন্য দিকে অ্যামেরিকায় গত এক দিনে ১০০ জনেরও বেশি লোকের মৃত্যু হয়েছে। সেখানে মোট মৃতের সংখ্যা ৩৮৯। এর মধ্যে সব চেয়ে বেশি আক্রান্ত নিউ ইয়র্কে। ওয়াশিংটন এবং ক্যালিফোর্নিয়ার অবস্থাও উদ্বেগজনক।
তুরস্কে এখনও পর্যন্ত করোনায় মৃতের সংখ্যা ৩০। তবে সব চেয়ে উদ্বেগের বিষয় হল, গৃহযুদ্ধে কার্যত ভেঙে পড়া সিরিয়াতেও এই প্রথম করোনার সংক্রমণ ঘটল। করোনা থাবা বসিয়েছে গাজা ভূখণ্ডেও। এখনও পর্যন্ত সেখানে দুই জনের শরীরে করোনার ভাইরাস মিলেছে। বিশেষজ্ঞদের প্রশ্ন, ইউরোপের মতো বিত্তশালী দেশগুলিই যেখানে করোনার সঙ্গে লড়াই চালাতে হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে গাজা কিংবা সিরিয়ার মতো দেশ কী করবে! এরই মধ্যে গাজায় করোনা মোকাবিলায় কাতার ১৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে।
যুক্তরাজ্যের পরিস্থিতিও যথেষ্ট উদ্বেগজনক। ১৯১৮ সালের ইনফ্লুয়েঞ্জা মহামারির সঙ্গে করোনা পরিস্থিতির তুলনা করছেন অনেকেই। এখনও পর্যন্ত সেখানে মৃত্যু হয়েছে ২৮১ জনের। আক্রান্ত পাঁচ হাজারেরও বেশি মানুষ। ম্যাঞ্চেস্টারের বাসিন্দা শাশ্বতী সেনগুপ্ত ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''এখানে যা পরিস্থিতি তাতে অনেক আগেই লকডাউন ঘোষণা করা উচিত ছিল। পাব, রেস্তোরাঁ বন্ধ হলেও, মানুষ অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছেন রাস্তায়। প্রশাসন কোনও ব্যবস্থাই নিচ্ছে না।'' যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন অবশ্য রবিবার জানিয়েছেন, দেশের মানুষ নিজেরা আইসোলেশনে না গেলে সরকারকে আরও কড়া পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রয়োজনে দেশ জুড়ে লকডাউন ঘোষণা করতে হবে।
মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের অবস্থা গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। পরিস্থিতি ভয়াবহ সৌদি আরবেও। এখনও পর্যন্ত সেখানে আক্রান্ত হয়েছেন ৫০০ জনেরও বেশি লোক। ভারতীয় উপমহাদেশেও করোনার প্রকোপ দ্রুত ছড়াচ্ছে। পাকিস্তানে এখনও পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৬৪৬ জন। সব চেয়ে ভয়াবহ অবস্থা সিন্ধ অঞ্চলে। সেখানে মৃত্যু হয়েছে চার জনের। ভারতে মোট আক্রান্ত প্রায় ৪০০। এখনও পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে সাত জনের। আরও উদ্বেগের কথা হল, গোটা ভারত জুড়ে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশে এখনও পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ২৪। মৃত্যু হয়েছে দুই জনের।
এসজি/জিএইচ (রয়টার্স, পিটিআই)