ইতিহাসের নির্মমতম হত্যাকাণ্ডের চূড়ান্ত বিচারের রায়
১৯ নভেম্বর ২০০৯সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে পুলিশ ও ব়্যাব সদস্যদের কড়া প্রহরায় রায় ঘোষণা করলেন সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ৷ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিশেষ বেঞ্চের প্রধান বিচারপতি ড. তাফাজ্জল ইসলাম তাঁর রায় ঘোষণায় জানিয়ে দিলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যাকারী হিসেবে অভিযুক্ত ১২ জনেরই প্রাণদণ্ড হবে৷ তবে কবে এই রায় কার্যকর করা হবে সে বিষয়ে কোন সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ ঘোষণা না করে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছেন, দন্ডপ্রাপ্তরা আগামী ৩০ দিনের মধ্যে এই রায় রিভিউ করার জন্য সুপ্রিম কোর্টের কাছেই পিটিশন করতে পারে৷
বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের রায়ে মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত এই ১২ জন হলো সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ, মহিউদ্দিন আহমেদ আর্টিলারি, এ কে এম মহিউদ্দিন ল্যান্সার, বজলুল হুদা, খন্দকার আব্দুর রশিদ, নূর চৌধুরি, ক্যাপ্টেন আব্দুল মাজেদ, মোসলেহ উদ্দিন, শরিফুল হক ডালিম, রাশেদ চৌধুরি এবং আজিজ পাশা৷
এদের মধ্যে সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ, মহিউদ্দিন আহমেদ আর্টিলারি, এ কে এম মহিউদ্দিন ল্যান্সার এবং বজলুল হুদা কারাগারে আটক রয়েছে৷ আর সাতজন দেশের বাইরে পলাতক৷ তারা হলো খন্দকার আব্দুর রশিদ, নূর চৌধুরি, ক্যাপ্টেন আব্দুল মাজেদ, মোসলেহ উদ্দিন, শরিফুল হক ডালিম ও রাশেদ চৌধুরি৷ আর পলাতক অবস্থায় জিম্বাবোয়েতে মারা গেছে আজিজ পাশা ৷
৩৪ বছর আগে ঘটে যাওয়া ইতিহাসের নির্মমতম হত্যাকাণ্ডের চূড়ান্ত বিচারের রায় আজ শোনা গেল৷ জাতির জনক হত্যার কলঙ্ক ঘুচল বাংলাদেশি জাতির৷ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট ঘাতকরা শুধু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকেই হত্যা করেনি, হত্যা করেছে তাঁর স্ত্রী ফজিলাতুন্নেসা মুজিবসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদেরও৷ এমনকি শিশুপুত্র শেখ রাসেলকেও রেহাই দেয়নি তারা৷ তাঁর দুই মেয়ে শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানা সেই সময় জার্মানিতে অবস্থান করায় বেঁচে যান৷
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ২১ বছর পর এই হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয় ১৯৯৬ সালে৷ এর আগে ঘাতকদের সরকার ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার বন্ধ করে রেখেছিল৷ নিম্ন আদালতের রায়ের পর হাইকোর্ট ২০০১ সালের ৩০ এপ্রিল ১২ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন৷ চলতি বছরের ৫ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে চূড়ান্ত আপিল শুনানি শুরু হয়ে শেষ হয় ১৫ নভেম্বর৷ আজকের রায়ের মধ্য দিয়ে বিচার প্রক্রিয়া শেষ হল৷ এই রায় নিয়ে সারা দেশের মানুষের মধ্যে ছিল ব্যাপক কৌতুহল ও আগ্রহ৷ আগ্রহ ছিল বিশ্বের অন্যান্য দেশেও৷
প্রতিবেদন-হারুন উর রশীদ স্বপন, ঢাকা, হোসাইন আব্দুল হাই
সম্পাদনা-সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়