ইনডিপেন্ডেন্ট টিভির আক্রান্ত সাংবাদিক ও আমার কিছু কথা
৪ এপ্রিল ২০২০প্রতিষ্ঠানটির প্রধান সম্পাদক এম শামসুর রহমান বিষয়টি সবাইকে জানিয়েছেন, সংবাদ বিজ্ঞপ্তিও পৌঁছে দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট সব জায়গাতে৷ বলা হয়েছে, আইইডিসিআরের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটি সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছে এবং করণীয় সব কিছুই করা হচ্ছে৷
ওই প্রতিষ্ঠানটিতে আট বছর কাজ করেছি বলে নয়, স্বাভাবিক উৎকণ্ঠা এবং কৌতূহল থেকেও জানতে ইচ্ছা করছিল কে আক্রান্ত হলেন৷ একবার মনে হয়েছিল কারো কাছে জানতে চাই, কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিকভাবে যখন জানানো হয়নি তাই আমিও আর চেষ্টা করিনি৷
কিন্তু মনে প্রশ্ন এলো, প্রতিষ্ঠানটি কেন তার পরিচয় জানালো না? সারা দুনিয়াই এখন কমবেশি করোনা আক্রান্ত৷ এদের মধ্যে রাজপুত্র চার্লস, চিত্রনায়ক টম হ্যাংকস, প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন, খেলোয়াড় দিবালাসহ অনেক মানুষকে আমরা চিনিও বটে৷ সিএনএন সাংবাদিক ক্রিস কুউমো করোনা ভাইরাসে পজিটিভ জেনে নিজের বাড়ি থেকে শো হোস্ট করছেন৷
আমাদের দেশে তাহলে এত গোপনীয়তা কেন? কেন এই সামাজিক লজ্জা?
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে কিছুক্ষণ চোখ রাখতেই বিষয়টা বুঝতে পারলাম৷ ইনডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের অন্য সংবাদকর্মী যারা এখন আইসোলেশনে আছেন বা যারা কোনো আইসোলেশনেও নেই তাদের বেশিরভাগই নানা ধরনের বিড়ম্বনায় পড়ছেন৷ বাড়িওয়ালা, ভাড়াটে, ফ্ল্যাট ওনার, হাউজিং সোসাইটি কর্তৃপক্ষের অনেকেই তাদের চলে যেতে বলেছেন, কেউ কেউ বলেছেন তাদের ঘরের অন্য কেউ যাতে বেরিয়ে না আসেন!
আমরা দেখেছি চিকিৎসা সেবার সঙ্গে নিয়োজিত কর্মীরাও একইরকম সমস্যায় পড়ছেন, নির্মিতব্য হাসপাতাল ভাঙচুর করা হচ্ছে, অতি অকারণে গোরস্থানে ঝুলানো হচ্ছে নোটিশ৷ এসবই করা হচ্ছে কোনো যুক্তি বা বুদ্ধির তোয়াক্কা না করে৷ অনেকটা হই হই করে ১০ জনের গোলমালে সামিল হওয়ার মতো করে৷ অথচ চলছে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে আড্ডা, ঘটা করে ত্রাণ বিতরণ, উপসানালয়ে দলবেঁধে হাজির হওয়া ইত্যাদি৷
কেউ যখন দুর্বল তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়তে আমরা যে অনাবিল আমোদ পাচ্ছি তা কী অশনি সংকেত দিচ্ছে তা আমাদের ভেবে দেখতে হবে৷ মনুষ্যত্বের যে বড়াই আমরা করি তার একটি বড় পরিচয় বিপদগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানো, ক্ষণিকের স্ফুর্তিতে আমরা যেন তা ভুলে না যাই৷