ইভ টিজিং থেকে বাঁচতে কারাতে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন নারীরা
বাংলাদেশে ইভ টিজিং আর নারী নির্যাতনের হার বেড়ে চলছে৷ ফলে আত্মরক্ষার জন্য মার্শাল আর্ট বা কারাতে প্রশিক্ষণে ঝুঁকছেন নারীরা৷ আত্মরক্ষার পাশাপাশি শারীরিক সুস্থ্যতার বিবেচনায় অনেকেই আজকাল কারাতে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন বাংলাদেশে৷
ইভ টিজিং আজও এক বড় সমস্যা
বাংলাদেশে নারীদের জন্য ইভ টিজিং একটি বড় সমস্যা৷ পথ চলতে নারীরা হরহামেশাই ইভ টিজিং-এর শিকার হন৷ ইভ টিজিং-এর কারণে অনেক নারী শিক্ষার্থীর স্কুল-কলেজে যাওয়া বন্ধ হয়েছে৷ এমনকি এর বঞ্চনা সইতে না পেরে অনেকে আত্মহননের পথও বেছে নিয়েছেন৷ (প্রতিকী ছবি)
আত্মরক্ষার পাশাপাশি শারীরিক সুস্থতা
তাই এবার আত্মরক্ষার জন্য মার্শাল আর্ট বা কারাতে (বানানভেদে ক্যারাটে) প্রশিক্ষণের দিকে ঝুঁকছেন বাংলাদেশের নারীরা৷ তবে শুধু আত্মরক্ষা নয়, পাশাপাশি শারীরিক সুস্থতার জন্যও অনেকে আজকাল এই প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন৷ যেমন ঢাকার রামপুরার বনশ্রী এলাকার একটি স্কুলে কারাতে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে৷
নারীদের কারাতে শিখতে উৎসাহ দেওয়া
ঢাকার বনশ্রী এলাকায় ওসমানী স্পোর্টস স্কুলে নানা রকম খেলাধুলার সঙ্গে কারাতে প্রশিক্ষণ দেন প্রশিক্ষক আশেক ওসমানী৷ তাঁর মতে, নারীদের মধ্যে কারাতে প্রশিক্ষণের প্রতি উৎসাহ দিনে দিনই বাড়ছে৷
নারীদের জন্য বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ
মাত্র দু’জন শিক্ষর্থীকে নিয়ে শুরু করা এ স্কুলে এ মুহূর্তে কারাতে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন দেড়শ’ জনেরও বেশি প্রশিক্ষণার্থী৷ তাছাড়া ওসমানী স্পোর্টস স্কুলে অর্থিকভাবে অসচ্ছল নারীদের বিনামূল্যে প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা আছে৷
শিক্ষার্থীদের অধিকাংশই নারী অথবা শিশু
ওসমানী স্পোর্টস স্কুলে প্রশিক্ষণ নিতে আসাদের মধ্যে অধিকাংশই নারী৷ তবে মোটের ওপর বাংলাদেশে কারাতে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোতে শিশু শিক্ষার্থীর হার সবচেয়ে বেশি৷
যৌন হয়রানি বেড়ে যাওয়ায় কারাতে শেখা
আইরিন পেশায় ডাক্তার৷ ছোটবেলা থেকেই কারাতের প্রতি তাঁর ঝোঁক ছিল৷ কিন্তু সে সময় বাসার আশেপাশে কারাতে শেখার তেমন কোনো জায়গা না থাকায় শেখার সুযোগ হয়নি তাঁর৷ তবে দেশে ইভ টিজিং এবং যৌন হয়রানি বেড়ে যাওয়ায় এখন কারাতে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন তিনি৷
আত্মরক্ষার জন্য প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন মুমতাহিন
মুমতাহিন জাহান পড়েন ঢাকা ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটে৷ পড়ালেখার কারণে অনেক সময়ই তাঁকে রাত-বিরেতে চলতে হয়৷ তাই নিজের আত্মরক্ষার কথা ভেবেই তিনি কারাতে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন৷
সমাজের অমূলক ভ্রান্ত ধারণা ভাঙতে কারাতে
ইশরাত জাহান গৃহিনী৷ স্কুল পড়ুয়া একমাত্র কন্যাকে তিনি কারাতে স্কুলে নিয়ে আসেন নিয়মত৷ নিজে স্কুলে পড়ার সময়ে একবার কারাতে প্রশিক্ষণে ভর্তি হলেও পরিবার ও মানুষের চাপে তিনি সেটা করতে পারেননি৷ মেয়েদের কারাতে শেখা ঠিক নয় – এই ধরনের অমূলক ভ্রান্ত ধারণা ভাঙতেই তাই আজ নিজের মেয়েকে কারাতে শেখাচ্ছেন ইশরাত৷ তাঁর মতে, বাংলাদেশের মেয়েদের আত্মরক্ষার কৌশল জানা খুবই জরুরি৷
মফস্বলের নারীদের জন্যও চাই আত্মরক্ষার কৌশল
কারাতে প্রশিক্ষক আশেক ওসমানী শহরের বাইরে থেকে আসা নারীদের জন্য একটি নতুন প্রকল্প শুরুর কথা ভাবছেন৷ তাঁর মতে, শহরের চেয়ে গ্রামে ইভ টিজিং-এর হার কোনো অংশে কম নয়৷ তাই মফস্বল এলাকার কিছু স্কুলের পাঁচজন করে শিক্ষার্থীকে আত্মরক্ষার কৌশল শেখাতে চান তিনি৷ উদ্দেশ্য – তাঁর কাছে শেখা শিক্ষার্থীরাই আবার স্কুলের বাকি শিক্ষার্থীদের আত্মরক্ষার কৌশল শেখাবে৷ এতে করে মফস্বলের নারীরাও আত্মরক্ষার কৌশল শিখতে পারবেন৷