1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ইমরান খানের ‘বিপজ্জনক' জয়

২৭ জুলাই ২০১৮

পাকিস্তানের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথে ‘পপুলিস্ট' ইমরান খান৷ তাঁর দলই পেতে যাচ্ছে সবচেয়ে বেশি আসনে জয়৷ কিন্তু এই জয় দেশটিকে ঠেলে দিয়েছে সবচেয়ে বড় বিভক্তির পথে৷

https://p.dw.com/p/32AsI
ছবি: picture-alliance/Anadolu Agency/M. Reza

২৫ জুলাইয়ের নির্বাচনে যে ক্রিকেটার থেকে রাজনীতিবিদ বনে যাওয়া ইমরান খানই জয় পেতে যাচ্ছেন, তা প্রায় নিশ্চিতই ছিল৷ তাঁর মূল প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ আগেই হারিয়েছিলেন দেশটির শক্তিশালী সেনাবাহিনীর আশীর্বাদ৷

দুর্নীতির দায়ে কারাগারে থাকা নওয়াজ এবং তাঁর মেয়ে মরিয়ম নওয়াজ দীর্ঘদিন ধরে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে কথা বলে আসছেন৷ তিনি পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র নীতি থেকে সেনা প্রভাব দূর করতে চেয়েছিলেন, ভারত এবং অন্যান্য প্রতিবেশী দেশের সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন করতে চেয়েছিলেন৷

জঙ্গিবাদে মদদ এবং আফগান সরকারকে অস্থিতিশীল করতে তাদের ব্যবহার করা নিয়েও সেনাবাহিনীর মুখোমুখি দাঁড়ান নওয়াজ৷

ফলে, প্রধানমন্ত্রী পদের অন্যতম দাবিদার নওয়াজের অনুপস্থিতিতে ইমরানের পথ ছিল অনেকটাই মসৃণ৷

তবে গ্রেপ্তার হওয়ার ঝুঁকি মাথায় নিয়েও ১৩ জুলাই নওয়াজ ও তাঁর মেয়ে দেশে ফেরায় ক্ষীণ আশা দেখছিলেন অনেকেই৷ তাঁরা ভাবছিলেন নওয়াজের এই সাহসী পদক্ষেপে তাঁর মধ্য-বাম দল পাকিস্তান মুসলিম লীগ (পিএমএল-এন) ভালই লড়াই করবে৷ অনেকে দেখছিলেন জয়ের স্বপ্নও৷

কেউ কেউ ‘বিভক্ত পার্লামেন্টের' আশা করছিলেন, যেখানে এককভাবে কোনো দল সর্বময় ক্ষমতা পাবে না৷ কিন্তু প্রাথমিক ফলে দেখা গেল, ইমরানের বহুদিনের লালিত স্বপ্ন অবশেষে বাস্তবায়ন হতে চলেছে৷

সামনে বন্ধুর পথ

এই বিতর্কিত জয় পাকিস্তানের জন্য আরো বিপদ বয়ে আনতে পারে৷ নওয়াজের দল নির্বাচনের আগে থেকেই লেভেল প্লেইং ফিল্ড না পাওয়ার অভিযোগ করে আসছিল৷ স্থানীয় গণমাধ্যমও ব্যাপক সেন্সরশিপের অভিযোগ তুলেছে৷ সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোর ছেলে বিলওয়াল ভুট্টোর নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান পিপলস পার্টি- পিপিপি এরই মধ্যে নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ এনে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে৷ রাস্তায় নামতে পারে নওয়াজের পিএমএল-এনও৷

সবচেয়ে জনবহুল এবং ভোটের রাজনীতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পাঞ্জাব প্রদেশে নওয়াজের এখনও ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে৷ পাঞ্জাব প্রদেশই নওয়াজ এবং সেনাবাহিনীরও ক্ষমতার মূল উৎস৷ ফলে সেই পাঞ্জাব প্রদেশেই সেনাবাহিনীকে এবার মুখোমুখি হতে হবে বড় চ্যালেঞ্জের৷

এই সুযোগে আরো বেশি মাথাচাড়া দিতে পারে জঙ্গিবাদ৷ নির্বাচনের দিন কোয়েটায় বিস্ফোরণে প্রাণ হারান ৩০ জনেরও বেশি মানুষ৷ এর দায় স্বীকার করে ইসলামিক স্টেট৷ মাসের শুরুতে বেলুচিস্তানের মাস্টুং-এ আইএসের আরেক হামলায় ঘটে শতাধিক প্রাণহানি৷

অনেকেরই আশংকা, নওয়াজ বনাম সেনাবাহিনী দেশে যে বিভক্তি সৃষ্টি করেছে, তার সুযোগে আরো মাথাচাড়া দিতে পারে আইএসের মতো জঙ্গি সংগঠন৷

Shams Shamil Kommentarbild App
শামিল শামস, ডয়চে ভেলে

‘পশ্চিম-বিরোধী ইমরান'

ইমরান অবশ্য বরাবরই বলে আসছেন নওয়াজের সাথে কোনো ধরনের সমঝোতায় তিনি যাবেন না৷ অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিপক্ষে শক্ত অবস্থান নিবেন তিনি৷ ফলে দেশের বিভক্তি আরো ভয়াবহ রূপ নেয়ার আশংকা রয়েছে৷

অন্যদিকে যখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে, ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করা উচিত, তখন মার্কিন-বিরোধী মনোভাব আরো উসকে দেবেন ইমরান, রয়েছে এমন আশংকাও৷ পিটিআইয়ের এই নেতা বরাবরই আফগানিস্তান সংকটের জন্য ওয়াশিংটনকেই দায়ী করে আসছেন, এবং অনেকক্ষেত্রে তালিবানের সপক্ষে কথা বলেছেন৷

বিশ্বের জঙ্গি কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ সংস্থা ‘ফিনানশিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স' এফএটিএফ জঙ্গিবাদে সহায়তার অভিযোগে পাকিস্তানকে দায়ী করেছে৷ সেপ্টেম্বরেই এফএটিএফের কালো তালিকাভুক্ত হতে পারে পাকিস্তান, যা দেশটির অর্থনীতিকে ফেলতে পারে ঝুঁকির মুখে৷

ফলে এই মুহূর্তে শুধু দেশেই নয়, বিদেশেও সমঝোতার নীতিই নেয়া উচিত পাকিস্তানের৷ কিন্তু প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ইমরান খান সম্ভবত দুই ক্ষেত্রেই হাঁটতে যাচ্ছেন উলটো পথে৷

আপনার কোনো মতামত থাকলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে৷

শামিল শামস/এডিকে