ইরফান সেলিম: ব়্যাবের সত্য বনাম পুলিশের সত্য
৪ মার্চ ২০২১বাকি আছে শুধু নৌবাহিনীর কর্তকর্তাকে মারধর ও হত্যা চেষ্টা মামলায় জামিন৷
অস্ত্র এবং মাদক আইনের দুইটি মামলারই বাদি র্যাব৷ গত বছরের ২৫ অক্টোবর রাতে ধানমন্ডি এলাকায় নৌবাহিনীর কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট ওয়াসিফ আহমেদ খানকে মারধরের পরদিন র্যাব ইরফান সেলিমের চকবাজারের বাসায় অভিযান চালিয়ে অস্ত্র ও মাদকসহ তাকে আটক করে৷ তার ভিত্তিতেই মামলা করে৷ ওই একই দিন র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত তাকে অবৈধভাবে ওয়াকিটকি রাখা এবং মাদক সেবনের অভিযোগে মোট দেড় বছর কারাদণ্ড দেয়৷
চকবাজার থানা পুলিশ তাদের তদন্তে র্যাবের দুই মামলায় ইরফান সেলিমের বিরুদ্ধে অভিযোগের কোনো সত্যতা পায়নি৷ তবে র্যাবের মিডিয়া উইং-এর পরিচালক লে. কর্নেল সারোয়ার বিন কাসেম বৃহস্পতিবার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘র্যাবের একজন বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতেই ইরফান সেলিমের বাসায় অভিযান চালানো হয়৷ সাধারণ মানুষের উপস্থিতিতে তাদের সাক্ষী রেখেই অভিযান শেষ করা হয়৷ অভিযানে যা পাওয়া গেছে তাই উল্লেখ করেই র্যাব এজাহার করেছে৷ আমি আপনাকে নিশ্চয়তা দিতে চাই, অভিযানটি সম্পূর্ণ প্রভাবমুক্ত ও নিরপেক্ষভাবে পরিচালনা করা হয়৷’’
তবে তিনি বলেন, পরবর্তীতে তদন্তকারী কর্মকর্তার বিচার বিশ্লেষণ, বুদ্ধি বা প্রজ্ঞার ব্যাপারে তার কোনো ধারণা নেই৷
র্যাব আদালতে তাহলে তদন্ত প্রতিবেদনের ব্যাপারে আপত্তি বা নারাজি কেন দিলনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘নারাজির বিষয়টি র্যাবের আইন কর্মকর্তারা আমলে নিয়ে যাচাই বাছাই করছেন৷’’
তদন্ত নিয়ে কথা বলতে রাজি হননি চকবাজার থানার ওসি৷ তবে ডিএমপির অতিরিক্ত উপ কমিশনার (জনসংযোগ) ইফতেখারুল ইসলাম দাবি করেন, ‘‘পুলিশ স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করেছে৷ কোনো চাপ বা প্রভাবের প্রশ্নই ওঠে না৷ তদন্তে যা পাওয়া গেছে সেভাবেই প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে৷’’
পুলিশের তদন্তে বলা হয়েছে, অস্ত্র ও মাদক ইরফান সেলিমের দখলে পাওয়া যায়নি৷ তার বাড়ির যে ঘর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে সেখানে অনেকেই যাওয়া আসা করেন৷ তবে এই দুইটি মামলায় ইরফানের বডিগার্ড ও সহযোগীরা ঠিকই আসামি হয়েছে পুলিশের তদন্তে৷ বাদ গেছে ইরফান সেলিম!
ইরফানের আইনজীবী প্রাণ নাথ জানান, ‘‘নৌবাহিনীর কর্মকর্তাকে মারধর ও হত্যাচেষ্টা মামলায় চার্জশিট দেয়া হয়েছে৷ এই মামলায়ও জামিনের আবেদন করা হয়েছে৷ আবেদন একবার নাকোচ হলেও আশা করছি শিগগিরই জামিন পাবেন তিনি৷’’
তিনি জানান, ভ্রাম্যমাণ আদালতের দেয়া দেড় বছরের দন্ডের বিরুদ্ধেও আপিল করা হয়েছে৷ ওই ঘটনায় আদালত জামিন দিয়েছেন৷ আর র্যাবের দুইটি মামলায় তো তিনি অব্যাহতি পেয়েছেন৷ এখন ধানমন্ডি থানার মামলায় জামিন পেলেই তিনি কারাগার থেকে ছাড়া পাবেন৷
ধানমন্ডি থানার হত্যাচেষ্টা মামলার বাদি নৌবাহিনীর কর্মকর্তা লে. ওয়াসিফ আহমেদ খান নিজেই৷ চার্জশিটে ইরফান সেলিম, তার দুই দেহরক্ষী জাহিদুল মোল্লা, এ বি সিদ্দিক দিপু ও গাড়িচালক মিজানুর রহমানকে আসামি করা হয়েছে৷
র্যাবের মামলা ও পুলিশের তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান৷ তিনি বলেন, ‘‘র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতে দোষ স্বীকার না করলে শাস্তি দেয়ার কোনো সুযোগ নাই৷ স্বীকারোক্তি না দিলে পরবর্তী আইনি পদক্ষেপে যেতে হয়৷ আর দুইটি মামলায় যে অব্যাহতি দেয়া হলো তার বিরুদ্ধে তো রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আপিল করবেন৷ তা যদি সময়মত না করা হয় তাহলে এখানে তো প্রশ্ন উঠবেই৷ র্যাব কী অভিযান চালালো আর পুলিশ কী তদন্ত করল তা নিয়েই এখন সংশয় আছে৷ হাজী সেলিমের ছেলে ইরফান সেলিমের বিরুদ্ধে অভিযোগ যদি অসত্য হয় তাহলে র্যাবের হাতে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কোথায়? তাই আরো তদন্ত হওয়া দরকার৷ আর রাষ্ট্রপক্ষের চুপচাপ থাকার বিষয়টিও প্রশ্নের জন্ম দেয়৷’’
মানুষের মনে ইরফান সেলিমের এই অব্যাহতি নিয়ে নানা প্রশ্ন আছে বলে মনে করেন মানবাধিকার কর্মী নূর খান৷ তিনি বলেন, ‘‘র্যাব ও থানা পুলিশ দুটিই পুলিশের অধীন দুইটি সংস্থা৷ এই ঘটনায় তাদের ভূমিকা এখন পরস্পরবিরোধী৷ দুই পক্ষ একই সঙ্গে সঠিক হতে পারেনা৷’’
তিনি বলেন, ‘‘আমরা মনে হয়েছে এটা নির্দেশিত বা আজ্ঞাবহ তদন্ত৷ যেভাবে নির্দেশ দেয়া হয়েছে সেভাবে তদন্ত হয়েছে৷’’
নূর খান মনে করেন, ‘‘শুধু এই একটি ঘটনাই নয়৷ আমরা এভাবে আরো অনেক আজ্ঞাবহ তদন্ত দেখতে পাচ্ছি৷ দেশের মানুষকে এই ধরনের আজ্ঞাবহ তদন্ত থেকে মুক্তি দিতে হবে৷’’