আব্বাস সাহিত্য পুরস্কার পেলেন
২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৩আব্বাস কিদির বলেন, ‘‘আমি এমন একজন মানুষ, যে জীবনে সব কিছুই হারিয়েছে, শুধু সাহিত্যের প্রতি ভালবাসা ছাড়া৷'' প্রথম দিকে তিনি ধর্ম বিষয়ক লেখালিখি পড়তেন৷ পরে অন্যান্য সাহিত্যের প্রতিও আগ্রহী হয়ে ওঠেন৷ এক সময় নিজেরই কিছু লেখার ইচ্ছা জেগে ওঠে৷ লেখকদের প্রতি এক ধরনের মুগ্ধতা ছিল তাঁর৷ কেননা সাহিত্যের মাধ্যমে প্রতিবাদ করা যায়, ব্যবহার করা যায় স্বৈরতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে৷
গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম
আব্বাস কিদির ১৯৭৩ সালে বাগদাদে জন্ম গ্রহণ করেন৷ তাঁর প্রজন্মের অন্যান্যদের মত তিনিও একনায়ক সাদ্দাম হোসেনের বিরুদ্ধে কিছু করতে চেয়েছিলেন৷ সে জন্য তরুণ বয়সে নিষিদ্ধ পার্টিগুলির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন এবং লিফলেট বিলি করেন৷ সে সময় অনেক সরল ছিলেন তিনি৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘আমি যদি জানতাম, যে এজন্য আমাকে জেলে যেতে হবে, তাহলে সম্ভবত আমি এই ধরনের কাজে জড়িত হতাম না৷ কিংবা হয়তো বা করতাম৷ আসলে আমি জানিনা৷''
দুই বছর কিদিরকে কারাগারে থাকতে হয়েছিল৷ ১৯৯৬ সালে জেল থেকে পালিয়ে আম্মান যেতে সক্ষম হন তিনি৷ তারপরের কয়েক বছর চলে এক ওডিসি, অনিশ্চয়তার পথে যাত্রা৷ কোনো কাগজপত্র নেই, চাকরি-বাকরি নেই৷ ছুটা কাজ করে জীবন চালাতে হয়৷ কয়েক বছর পর সেই সব অভিজ্ঞতা লিপিবদ্ধ করেন তিনি ‘ফালশে ইন্ডার' বা ‘রঙ ইন্ডিয়ান' উপন্যাসে৷''
অবশেষে রাজনৈতিক আশ্রয় পান কিদির জার্মানিতে৷ পড়াশোনা করেন সাহিত্য ও দর্শন নিয়ে৷ পান জার্মান নাগরিকত্ব৷ লেখালিখি শুরু করেন জার্মান ভাষায়৷ কেননা এই ভাষাতেই স্বদেশ ও স্বাধীনতা খুঁজে পেয়েছেন তিনি, যা তাঁকে দিয়েছে মুক্তির স্বাদ, পাখির মতো ডানা৷ আবেগাপ্লুত কণ্ঠে জানান কিদির৷
দূরে থেকে স্পষ্ট চিত্র পাওয়া যায়
আরব বিশ্বের মানুষের ইতিহাস তুলে ধরেছেন তিনি কিছুটা দূরত্বে থেকে৷ প্রতিহিংসা বা ঘৃণা নিয়ে নয় সাধারণ মানুষের দৃষ্টি দিয়ে৷ তাঁর দ্বিতীয় উপন্যাস ‘দ্য প্রেসিডেন্টস অরেঞ্জেস'-এ সফল হয়েছে এই প্রয়াস৷ সর্বশেষ প্রকাশিত গ্রন্থ ‘লেটার টু দ্য এগপ্লান্ট রিপাবলিক'-এও বাস্তব চিত্রের প্রতিফলন ঘটেছে৷
আব্বাস কিদিরের উপন্যাস জনপ্রিয়তা পেয়েছে বেশ৷ অসংখ্য সাহিত্যানুষ্ঠানে অতিথি হিসাবে যোগ দিয়েছেন তিনি৷ সৃষ্টিকর্মের জন্য বৃত্তি ও পুরস্কারও পেয়েছেন৷ আর সম্প্রতি হাইডেলব্যার্গে ‘হিলডে ডোমিন-প্রবাসে সাহিত্য' প্রাইজে ভূষিত করা হলো তাঁকে৷ প্রবাসে থেকে সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য দেওয়া হয় এই পুরস্কার৷ এই সম্মাননার মূল্য কিদিরের কাছে অনেক৷
আদর্শিক মা, হিলডে ডোমিন
আব্বাস কিদির জানান, হিলডে ডোমিনকে জার্মান মা বলে মনে করতেন তিনি৷ ১৯০৯ সালে জন্ম হয় হিলডে ল্যোভেনস্টাইন ডোমিনের৷ মৃত্যু ২০০৬ সালে৷
হিলডে ডোমিনের সাহিত্যকর্মের সঙ্গে পরিচয় আব্বাস কিদিরের বহুদিনের৷ তাঁর সঙ্গে যেন এক আত্মিক যোগাযোগ অনুভব করেন তিনি৷ হিলডে ডোমিনের কাব্যপ্রতিভারও প্রকাশ ঘটে প্রবাস জীবনে, ডোমিনিক্যান প্রজাতন্ত্রে৷ যুদ্ধ পরবর্তী জার্মানিতে ফিরে এসে নিজেকে তিনি ‘পুনর্মিলনের বার্তাবহ' বলে অভিহিত করেন৷ ততদিনে দার্শনিক এরভিন ভাল্টার পালমের স্ত্রী হিলডে, নিজের নামের সঙ্গে তাঁর আশ্রয়দাতা দেশের নাম জুড়ে হিলডে ডোমিন নামে পরিচিতি পেয়েছেন৷
হিলডে ডোমিন শব্দের শক্তির ওপর বিশ্বাস করতেন সবসময়৷ বিশ্বাস করতেন ভাষার মাধ্যমে যে বোঝাপড়া করা যায় তার ওপর৷
আব্বাস কিদিরও সাহিত্যের মাধ্যমে বিশ্বকে ভালভাবে বোঝার চেষ্টা করেন৷ তাই তো বলেন, ‘‘সাহিত্য শুধু হাতিয়ার বা আত্মমুক্তি নয়৷ আমার বিশ্বাস, এটি এক ধরনের ভালবাসা৷ এক ধরনের স্বপ্ন৷ এক ধরনের কবিতা,যা কখনও শেষ হয় না৷''
উল্লেখ্য হিলডে ডোমিনের ৮০ বছর পূর্ণ হওয়া উপলক্ষ্যে ১৯৯২ সালে হাইডেলব্যার্গ শহরের উদ্যোগে ‘প্রবাসে সাহিত্য' পুরস্কারটির যাত্রা শুরু হয়৷ পুরস্কারের অর্থমূল্য ১৫,০০০ ইউরো৷ প্রথম পুরস্কারটি পান নগরের সম্মানিত নাগরিক হিলডে ডোমিন নিজেই৷ ২০০৬ সালে তাঁর মৃত্যুর পর থেকে পুরস্কারটির নাম দেওয়া হয় ‘হিলডে ডোমিন – প্রবাসে সাহিত্য'৷ প্রতি তিন বছর পর পর সেই সব সাহিত্যিককে এই পুরস্কার দেওয়া হয়, যারা জার্মানিকে প্রবাস জীবনের আশ্রয়স্থল হিসাবে বেছে নিয়েছেন ও জার্মান ভাষায় লেখালিখি প্রকাশ করছেন৷