পরমাণু চুক্তি বাঁচানোর প্রচেষ্টা
৭ জুন ২০১৮মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একতরফাভাবে ইরান পরমাণু চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসার পর ইউরোপ সেই চুক্তি বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা চালাচ্ছে৷ কিন্তু এখনো পর্যন্ত এ ক্ষেত্রে তেমন সাফল্য না আসায় অধৈর্য হয়ে পড়ছে ইরান৷ এই অনিশ্চয়তার পরিবেশে সে দেশও আন্তর্জাতিক সমাজের উপর চাপ বাড়াতে চুক্তি বাতিল করার তোড়জোড় করছে৷
জাতিসংঘে ইরানের রাষ্ট্রদূত রেজা নাজাফি বলেছেন, পরমাণু চুক্তি বাঁচাতে ইউরোপের হাতে কয়েক সপ্তাহ সময় রয়েছে৷ তবে সেই উদ্যোগের জন্য কয়েক মাস সময় দেওয়া যাবে না৷ তিনি আরও জানিয়েছেন, পরমাণু চুক্তি নিয়ে অচলাবস্থা কাটা পর্যন্ত তাঁর দেশ আন্তর্জাতিক পরিদর্শকদের সঙ্গে পুরোপুরি সহযোগিতা করবে না৷ সেইসঙ্গে আরও উন্নত মানের সেন্ট্রিফিউজ উৎপাদন করে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধিকরণ কর্মসূচি সম্প্রসারণের কাজও শুরু করতে চায় ইরান৷ তবে ইরান এখনো চুক্তিভঙ্গ করছে না বলে তিনি আশ্বাস দিয়েছেন৷ উল্লেখ্য, সে দেশের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লাহ খামেনেই সোমবারই জানিয়েছিলেন যে, পরমাণু চুক্তি বাতিল হলে তিনি ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের ক্ষমতা বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন৷ তারপর বুধবারই নাতানৎস পরমাণু কেন্দ্রে উন্নত সেন্ট্রিফিউজ কর্মসূচি উদ্বোধন করা হয়েছে৷
ইরানের উপর সম্ভাব্য মার্কিন নিষেধাজ্ঞা থেকে ইউরোপীয় কোম্পানিগুলিকে রক্ষা করতে জোরালো প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে জার্মানি, ফ্রান্স ও ব্রিটেন৷ এই তিন দেশের পররাষ্ট্র ও অর্থমন্ত্রীরা মার্কিন প্রশাসনকে লেখা এক যৌথ বার্তায় জানিয়েছেন, ইউরোপ পরমাণু চুক্তি মেনে চলতে বদ্ধপরিকর৷ সেই প্রেক্ষাপটে ইউরোপীয় কোম্পানিগুলিকে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা থেকে রেহাই দেবার আর্জি জানিয়েছেন তাঁরা৷ তাঁদের মতে, ইরান এই চুক্তি থেকে বেরিয়ে এলে গোটা অঞ্চলে আরও অস্থিরতা দেখা দিতে পারে৷ সেখানে নতুন করে আরও সংকট সৃষ্টি হলে বিপর্যয় দেখা দেবে৷ ৪ঠা জুনে লেখা এই বার্তা বুধবার প্রকাশ করেছে সংবাদ সংস্থা রয়টার্স৷
এদিকে ইরানকে প্ররোচনা থেকে বিরত রাখার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে ইউরোপীয় শক্তিগুলি৷ ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইভ ল্য দ্রিয়ঁ বলেন, এখনো পর্যন্ত ইরান চুক্তির কাঠামোর মধ্যেই পদক্ষেপ নিচ্ছে৷ তবে এমন সব অযাচিত পদক্ষেপ ‘রেড লাইন' বা লক্ষণরেখার অত্যন্ত কাছাকাছি এসে পড়ছে বলে তিনি সতর্ক করে দিয়েছেন৷
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও এক টুইট বার্তায় জানিয়েছেন, ইরান যে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের উদ্যোগ নিচ্ছে, ওয়াশিংটন সে বিষয়ে সচেতন৷ তবে সে দেশকে পরমাণু অস্ত্র তৈরি করতে দেওয়া হবে না৷
শুধু ইউরোপ নয়, ইরানের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন করতে বিশ্বের অনেক দেশের উপর চাপ সৃষ্টি করছে মার্কিন প্রশাসন৷ জাপানের পর পূর্ব ইউরোপের কয়েকটি দেশে গিয়ে মার্কিন কূটনীতিকরা ইরানের সঙ্গে বাণিজ্যের পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছেন৷ তবে ইউরোপে মার্কিন আইন প্রয়োগের প্রস্তাবে অত্যন্ত কড়া প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে ইইউ৷ এমনকি মার্কিন আইন মানলে ইউরোপীয় কোম্পানিগুলির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপের উদ্যোগও প্রস্তুত রাখা হয়েছে৷