ইরানি আরোহী সন্ত্রাসী নন
১১ মার্চ ২০১৪ইরানের নাগরিক জার্মানিতে আশ্রয়প্রার্থী
মালয়েশিয়ার জাতীয় পুলিশ প্রধান খালিদ আবু বকর জানিয়েছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশের দুই নাগরিকের পাসপোর্ট চুরি করে তাঁরা বিমানে উঠেছিলেন৷ এঁদের মধ্যে একজন পুরিয়া নূর মোহাম্মদ মেহরদাদ ইরানের নাগরিক, যাঁর বয়স ১৯ বছর৷ তবে পুলিশ মনে করে, ঐ তরুণ কোনো সন্ত্রাসী সংগঠনের সদস্য নন৷ বরং তিনি জার্মানিতে আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করছিলেন বলে ধারণা তাদের৷ তবে অন্য ব্যক্তির পরিচয় এখনো বের করা যায়নি৷
পুলিশ প্রধান আরো জানান, মার্চের ১ তারিখ নূর থাইল্যান্ডের পাতায়া থেকে ফোনে ‘মিস্টার আলি' নামে দুটি টিকেট বুকিং করেছিলেন৷ থাই পুলিশের মতে, নূর ফোনে ট্রাভেল এজেন্সিকে ইউরোপের দুটি সস্তা টিকেট বুকিং দিতে বলেছিলেন৷ পাসপোর্ট দুটো থাইল্যান্ড থেকে চুরি হয় দু'বছর আগে৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত পাসপোর্ট বলে কুয়ালালামপুর থেকে ঐ দু'জন যাত্রীকে চীনের ভিসা নিতে হয়নি৷
পুলিশ প্রধান সংবাদ সংস্থা এএফপিকে জানিয়েছেন, তাদের ধারণা মানবপাচার চক্রের সদস্যরা পাসপোর্ট দুটি চুরি করে এবং তারা ইউরোপের বিভিন্ন দেশে মানবপাচার ব্যবসার সাথে জড়িত৷ যে পাসপোর্ট দুটি চুরি গিয়েছিল, তার একটি ইটালির এবং অন্যটি অস্ট্রিয়ার৷ দুটি টিকেটের একটি ছিল কুয়ালালামপুর থেকে ফ্রাংকফুর্ট আম মাইন৷ অন্য আর একটি গন্তব্য ছিল কোপেনহেগেন৷ তিনি আরো জানিয়েছেন, ছিনতাইসহ বিমানটি নিখোঁজ হওয়ার চারটি সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছে তারা৷
হতাশ স্বজনরা
এদিকে, বিমানের যাত্রীদের স্বজনদের আশা ধীরে ধীরে ক্ষীণ হয়ে আসছে৷ বেইজিংয়ে নিখোঁজ বিমানটির আরোহীর এক স্বজনএএফপিকে জানালেন, ‘‘আমরা একেবারে আশা হারিয়ে ফেলেছি, দুশ্চিন্তায় এ ক'দিন আমাদের কারো ঘুম হয়নি৷ আমরা সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছি৷''
যাত্রীদের মধ্যে ছিলেন মালয়েশিয়ার এক নিরাপত্তা রক্ষী সুব্রামানিয়ামের ৩৪ বছর বয়সি ছেলে৷ তিনি জানালেন, ‘‘আমার তিন বছরের নাতি জিজ্ঞেস করে বাবা কোথায়? আমি তাকে এ বলে আশ্বস্ত করেছি যে, বাবা তোমার জন্য মিষ্টি কিনতে গিয়েছে৷'' তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘দয়া করে আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দিন৷''
চীনের স্যাটেলাইট মোতায়েন
নিখোঁজ মালয়েশিয়ান বিমানের খোঁজ পেতে চীন ১০টি স্যাটেলাইট মোতায়েন করেছে৷ বিমানটি নিখোঁজ হওয়ার চার দিনের মাথায় মঙ্গলবার বেইজিং এ উদ্যোগ নিল৷ সংবাদ সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন স্যাটেলাইটগুলো আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ, যোগাযোগ ও উদ্ধার কার্যক্রমে সহায়ক বিষয়গুলি পর্যবেক্ষণ করবে৷ ওদিকে, নিখোঁজ বিমানের সন্ধানে তত্পরতা আরও জোরদার করতে মালয়েশিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে চীন৷
অভিযান অব্যাহত
চতুর্থ দিনের মতো বিমানটি খোঁজে অভিযান চলছে৷ মালয়েশিয়া ও দক্ষিণ ভিয়েতনামের মধ্যবর্তী সাগরে তল্লাশিতে যোগ দিয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কয়েকটি দেশ, অস্ট্রেলিয়া, চীন, নিউজিল্যান্ড এবং যুক্তরাষ্ট্রের ৪১টি জাহাজ এবং ৩৬টি বিমান৷ কিন্তু তিনদিন পার হলেও বোয়িং ৭৭৭ বিমানটির বা বিমানটির ধ্বংসাবশেষের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি৷
বিমানটি হামলার শিকার হয়েছে এমন ব্যাখ্যা থেকে মালয়েশীয় কর্তৃ্পক্ষ দূরে সরে রয়েছে৷ তাঁরা প্রধানত ইলেকট্রনিক সাক্ষ্য-প্রমাণের ওপর নির্ভর করছেন৷ নিখোঁজ হওয়ার আগে বিমানটি যাত্রাপথ থেকে কুয়ালালামপুরের দিকে আবার ফিরে আসছিল বলে ইলেকট্রনিক সাক্ষ্যগুলো থেকে ইঙ্গিত মিলেছে বলে জানিয়েছেন তাঁরা৷ তবে এই তথ্য পুরোপুরি নিশ্চিত না হলেও তদন্তকারী ও গোয়েন্দা সূত্রগুলো বিমানটির হারিয়ে যাওয়ার ঘটনাকে এখনো রহস্যাবৃত বলেই স্বীকার করছে৷
শনিবার কুয়ালালামপুর থেকে বেইজিংয়ের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার কিছুক্ষণ পরই লাপাত্তা হয়ে যায় মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট এমএইচ৩৭০৷ বিমানের ২৩৯ জন আরোহীর মধ্যে ১২ জন ক্রু আর বাকিরা যাত্রী৷ যাত্রীদের অন্তত ১৫২ জন চীনের, ৩৮ জন মালয়েশিয়ার, সাতজন ইন্দোনেশিয়ার, ছয়জন অস্ট্রেলিয়ার, পাঁচজন ভারতের, চারজন ফ্রান্সের এবং তিনজন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক বলে জানা গেছে৷ খুব ভালো আবহাওয়া থাকা সত্ত্বেও কন্ট্রোল প্যানেল থেকে কোনো বিপদ সংকেত না পাঠিয়েই বিমান নিখোঁজ হয়ে যাওয়ায়, ঘটনাটি নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে সন্দেহের ধুম্রজাল৷
এপিবি/ডিজি (রয়টার্স, এপি, এএফপি, ডিপিএ)