গণমাধ্যমের উপর কড়া নিয়ন্ত্রণ
২৩ মে ২০১৩এই ঘটনার পর গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের পক্ষ থেকে বিবৃতি দেওয়া হয়৷ এতে বলা হয়, আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের কারণেই এই ধরনের তত্পরতা নিতে হয়েছে, যা নাকি ব্যাপক আকার ধারণ করেছে৷ ইরানের লেখকরা এই রকম অভিযোগের শিকার হচ্ছেন প্রতিনিয়ত৷
এছাড়া দেশটিতে গত কয়েক বছরে সংস্কারপন্থি হিসেবে পরিচিত এক ডজন পত্রিকা এবং সাময়িকী নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷ বিরোধীপক্ষ মনে করে, ২০১৩ সালের জুন মাসে সেখানে অনুষ্ঠিতব্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে ইদানীং গণমাধ্যমের উপর এইভাবে কড়া হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে৷
ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থার সাথে যোগাযোগের অভিযোগ
গত মার্চ মাসে ইরানের গোয়েন্দাবিভাগীয় মন্ত্রী হায়দার মসলেহি জানান যে, দেশটির প্রায় ৬০০ সাংবাদিকের একটি দল বিদেশের সাথে যোগযোগ রাখছে৷ তাঁদের মধ্যে ১৫০ জন ইরানের ভেতরে কর্মরত৷ বাকিরা দেশের বাইরে থেকে যোগাযোগ রাখছে৷
এ প্রসঙ্গে ইরানের গোয়েন্দাবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, এমন কিছু গণমাধ্যমকে চিহ্নিত করা হয়েছে, যে গুলির ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থার সাথে যোগাযোগ রয়েছে৷ এর মধ্যে রয়েছে জার্মান গণমাধ্যম ডয়চে ভেলে এবং রেডিও ফ্রান্স ইন্টারন্যাশনাল (আরএফআই)৷
মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে আরও দাবি করা হয়, রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স এবং জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্টাররাও আন্তর্জাতিক চক্রান্তকারী নেটওয়ার্ক-এর সাথে যুক্ত৷ তারা সবাই মিলে ইসলাম এবং ‘ইসলামি প্রজাতন্ত্রের পবিত্র ব্যবস্থা'র' বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে৷
দেশটির এমন অভিযোগের প্রতিক্রিয়াও দ্রুত পাওয়া গিয়েছে৷ ডয়চে ভেলের সাথে সাক্ষাৎকারে প্যারিসে অবস্থিত রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স -এর আন্তর্জাতিক সচিবালয়ে ইরানি মুখপাত্র রেজা মইনি বলেন, রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন এবং অন্য কারো দ্বারা এটি নিয়ন্ত্রিত হতে পারে না৷ মইনি আরও বলেন, ‘‘একটি রাষ্ট্র গোটা বিশ্বের বিরুদ্ধে গোয়েন্দাগিরির অভিযোগ তুলতে পারে না৷''
বই প্রকাশনার উপরও কড়া নিয়ন্ত্রণ
বিরোধীদের দাবি, ইরানের ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী বরাবরই গণমাধ্যম এবং সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে নিয়ন্ত্রণের বেড়াজালে আবদ্ধ রাখছে এবং কারণ হিসাবে ষড়যন্ত্রের কথা বলে আসছে৷ এমনকি প্রকাশনা সংস্থাগুলোও এর শিকার৷
ইরানে কোনো বই প্রকাশ করতে হলে সংস্কৃতি ও ইসলামি নীতিমালা বিষয়ক বা সংক্ষেপে এরশাদ মন্ত্রণালয় থেকে ছাড়পত্র পেতে হবে৷ প্রায়ই এমন ঘটনা ঘটে, যে একজন লেখককে এই ছাড়পত্রের জন্য কয়েক বছর অপেক্ষা করতে হয় কিংবা অনুমোদিত বই প্রকাশের পর হঠাৎ আবার সেগুলোকে গুটিয়ে নিতে হয়৷
১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পর ইরানের প্রথম সরকারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন এব্রাহিম ইয়াজদি৷ তিনি গত বছর এরশাদ মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হিসেবে তাঁর দুটি বই ইন্টারনেটে প্রকাশ করেন, কারণ তিনি বই দুটি প্রকাশের জন্য ছাড়পত্র পাননি৷ বই দুটির একটিতে তিনি ১৯৭৯ সালের বিপ্লব পরবর্তী সরকারের প্রথম প্রধানমন্ত্রী মেহদি বাজারগান সম্পর্কে লিখেছেন আর অপরটি ইরানে গত শতাব্দীর ৪০ এবং ৫০ এর দশকের ছাত্র আন্দোলন সম্পর্কে লেখা৷
কড়া নিয়ন্ত্রণের শিকার শিশুতোষ বইগুলোও
ইরানে শুধু যে, রাজনৈতিক বই-পত্রের উপর কড়া নজরদারি করা হচ্ছে তা নয়, বরং নিয়ন্ত্রণের শিকার হচ্ছে শিশুদের বইগুলোও৷ শিশুতোষ বইয়ের প্রকাশনা সংস্থা শাবাভিজ এর পরিচালক ফারিদে খালাতবারি ইতোমধ্যে বেশ কিছু আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছেন৷ তিনি জানান, ফেরেশতাদের নিয়ে লেখা চার খণ্ডের একটি শিশুতোষ বইয়ের দুটি খণ্ড সেন্সরের শিকার হয়েছে৷ কারণ হিসাবে দেখানো হয়েছে ঐ দুই খণ্ডে ফেরেশতাদের ‘সঠিকভাবে' ফুটিয়ে তোলা হয়নি'৷
বই-পত্র প্রকাশনায় এই ধরণের কড়া নিয়ন্ত্রণের ফলে সমাজে ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে৷ আক্ষেপ করে বলেন, বিখ্যাত প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান রোশাঙ্গারান-এর পরিচালক শাহলা লাহিদজি৷ তাঁর প্রতিষ্ঠান থেকে মূলত নারী বিষয়ক বই-পত্র প্রকাশ করা হয় বলে জানান লাহিদজি৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘সংস্কৃতি বিষয়ক প্রকাশনাই প্রমাণ করে যে, সমাজের মস্তিষ্ক সক্রিয় রয়েছে৷ আর এই সব প্রকাশনা স্থবির হয়ে পড়লে মস্তিষ্ক অচল হয়ে পড়বে এবং সমাজও ধ্বংসের পথে এগিয়ে যাবে৷