ইরানে মাত্রাধিক মদ্যপান
২৫ জুন ২০১৩তেহরানের ২৩ বছর বয়সি এক তরুণ আনোউশ জানান, বাড়িতে বানানো মদ পান করার পর তাঁর কয়েকজন বন্ধুকে বারবার হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়েছে৷
কালোবাজারে অ্যালকোহলের দাম আকাশচুম্বী
আসলে আর্থিক টানাপড়েনের কারণে ইরানে অন্যান্য সামগ্রীর সঙ্গে অ্যালকোহলের দামও বেড়ে গেছে৷ কালোবাজারে এক বোতল ভদকার দাম ১০০ ইউরোর মতো, জানান আনোউশ৷ পার্টিতে আনন্দস্ফূর্তি করতে অনেক তরুণ অ্যালকোহলের দিকে হাত বাড়ান৷ কিন্তু এত দাম দিয়ে ভদকা বা হুইস্কির মতো অ্যালকোহল কেনা তাঁদের পক্ষে সম্ভব হয় না৷ তাই নিজেরাই এক ধরনের মদ তৈরি করেন, যা পান করে অসুস্থ হয়ে পড়েন অনেকেই৷
ডাক্তার আরাশ ওকাজি জানান, ‘‘ইরানের কালোবাজারে এক ধরনের সস্তার মদ পাওয়া যায়, ইথালন ও মিথানলের এক বিপজ্জনক মিশ্রণ, যা পান করলে বিষক্রিয়া দেখা দিতে পারে৷ অন্ধত্ব এমনকি মৃত্যু পর্যন্তও হতে পারে মানুষের৷
এক রিপোর্টে জানা যায়, ২০১০ সালে ইরানে ভেজাল অ্যালকোহল পান করে ১৪০ জনেরও বেশি মানুষ মারা গেছে৷ সরকার কঠোর শাস্তির ভয় দেখিয়ে অ্যালকোহল পান থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করছে মানুষকে৷ ১৯৭৯ সালে ইসলামিক প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পর থেকে মদ্যপান নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷ এই আইন অমান্য করলে শাস্তি হিসাবে ৮০ বেত্রাঘাতের ব্যবস্থা রয়েছে৷ কেউ তিনবার ধরা পড়লে ঝুলবে মৃত্যুদণ্ডের খড়গ৷
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের নিন্দা
মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এই ধরনের আইনের বিরুদ্ধে সোচ্চারএবং এটিকে বাতিল করার দাবি জানিয়ে আসছে দীর্ঘদিন ধরে৷
ইরানে মদ্যাসক্তদের সংখ্যা দেখে বোঝা যায় নিষিদ্ধকরণ ও কঠোর শাস্তির ভয় দেখিয়েও কাজ হচ্ছে না৷ সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ইরানে দুই লাখ মানুষ মদ্যাসক্তির কারণে অসুস্থ৷ তবে নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষকদের মতে বাস্তব সংখ্যাটা আরো বেশি হবে৷ কেননা পাঁচ বছর ধরে সংখ্যাটা একই রকম থাকাটা বিস্ময়কর৷ এই সমস্যা সমাধানের জন্য সরকার মদের চোরাচালান রোধ করার ব্যবস্থা নিয়েছে৷
চোরাচালানি সরগরম
সংবাদ সংস্থার তথ্য মতে, বছরে ৮০ মিলিয়ন লিটার অ্যালকোহল বেআইনিভাবে ইরানে আনা হয়৷ ইরাকের কুর্দ অধ্যুষিত অঞ্চল থেকে উত্তর পশ্চিম সীমান্ত পথ দিয়ে ইরানে ঢোকে এই সব তরল পদার্থ৷ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, পুলিশ মাত্র ২৫ শতাংশ চোরাই মদ বাজেয়াপ্ত করে থাকে৷ ইরান পার্লামেন্টের সাংসদ একবাল মোহাম্মাদি মনে করেন, দুর্নীতিগ্রস্থ নিরাপত্তা রক্ষাকারীরাও এর পেছনে রয়েছে৷ তাঁদের মধ্যে অনেকে চোরাচালানিতে সহযোগিতা করে কিছু অর্থ নিজের পকেটেও ভরেন৷
এক্ষেত্রে প্রয়োজন সচেতনতা জাগানো৷ তবে তা সত্ত্বেও সমস্যাকে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে কিনা সন্দেহ৷ ইরানিদের পক্ষে বিকল্প বা ভেজাল অ্যালকোহল পাওয়া খুব কঠিন নয়৷ অনায়াসে তাঁরা ইথানল জোগাড় করে বিষাক্ত মদ প্রস্তুত করতে পারেন৷
তেহরানের তরুণ আনোউশ জানান, ‘‘সাধারণত মদ্যাসক্তদের কাছে অ্যালকোহলের ডিলারদের টেলিফোন নম্বর থাকে৷ অ্যালকোহল না পাওয়া গেলে তাঁরা কঠিন মাদকের দিকে হাত বাড়ান৷''