1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ইরানের তারকা দাবাড়ু দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন

৯ জানুয়ারি ২০২৩

ইরানি দাবা তারকাদের ড্রেস কোড প্রত্যাখ্যান সে দেশের সরকারকে চাপে ফেলছে। ইরানি শাসকদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যেসব ক্রীড়াবিদরা ব্যক্তি স্বাধীনতার আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন সারা খাদেম হলেন তাদের মধ্যে সর্বশেষ।

https://p.dw.com/p/4LuL8
সারা খাদেম
সারা খাদেমছবি: Pavel Mikheyev/REUTERS

শুরু থেকেই স্বৈরাচারী রাষ্ট্র শক্তির বিরুদ্ধে ইরানিদের গণপ্রতিবাদ আন্দোলনে দেশের অনেক বিশিষ্ট নারী ও পুরুষ ক্রীড়াবিদ সমর্থন দিয়েছেন। দেশটির অভিজাত মহিলা দাবাড়ুরাও এর ব্যতিক্রম নয়।

সম্প্রতি কাজাখস্তানের আলমাটিতে অনুষ্ঠিত এফআইডিই র‌্যাপিড চেস অ্যান্ড ব্লিটজ ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপে বাধ্যতামূলকভাবে মাথায় স্কার্ফ পরিধান প্রত্যাখ্যান করেন সারা খাদেম। এর মধ্য দিয়ে ২৫ বছর বয়সী এই আন্তর্জাতিক দাবা গ্র্যান্ডমাস্টার ইরানের মোল্লা শাসনের বিরুদ্ধে চলমান আন্দোলনে শামিল হোন।

স্পেনে আশ্রয়

দাবা বিশ্বকাপের মঞ্চে মাথায় স্কার্ফ না পরার সিদ্ধান্তের জন্য তাৎক্ষণিক পরিণতির মুখোমুখি হতে হয় সারা খাদেমকে। ঘটনার পর সারা খাদেম তার চলচ্চিত্র পরিচালক স্বামী আরদেশির আহমাদি ও ১০ মাসের ছেলের সাথে কাজাখস্তান ছেড়ে স্পেনের এক অজানা শহরে পাড়ি দেন। কারণ, ইরানে ফিরে যাওয়া তার জীবনের জন্য হুমকির হতে পারে।

ইরানী আরোহী এলনাজ রেকাবি গত অক্টোবরে সিউলে এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে হেডস্কার্ফ ছাড়াই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। তার পরিনতি হচ্ছে ইরানি ফিরে যাওয়ার পর তাকে ঘরবন্দি করা হয়। তিনি ও তার দলের অন্যরা এখন বিভিন্ন রকম রাষ্ট্রীয় হুমকির মধ্যে আছেন।

হুমকির মুখে ভিন্নমতাবলম্বীদের জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি নেয়া এবং দেশত্যাগের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা যেন ইরানে এক নির্মম নিয়মে পরিণত হয়েছে।

গত চার মাসে কমপক্ষে ২০ হাজার মানুষকে সর্বগ্রাসী শাসনের সমালোচনা করার জন্য আটক হয়েছে। তাদের মধ্যে অনেক সুপরিচিত ক্রীড়াবিদও রয়েছেন, যারা বিভিন্ন রকম অভিযোগে অভিযুক্ত। তাদের মৃত্যুদণ্ডসহ নিষ্ঠুর শাস্তির হুমকি দেওয়া হয়।

স্পেনে আসার পর সারা খাদেম ইনস্টাগ্রামে লিখেছেন, "আমার দেশত্যাগ একটি পারিবারিক সিদ্ধান্ত। আমি এখানে আশ্রয়ের জন্য আবেদন করিনি। আমার ক্রীড়া সাফল্য এবং আমার স্বামীর একাধিক দেশের জাতীয়তা থাকার কারণে আমি কখনও বিদেশে বসবাস নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলাম না।"

দক্ষিণ কোরিয়ায় গিয়ে এলনাজ রেকাবিও হিজাব পরেননি
দক্ষিণ কোরিয়ায় গিয়ে এলনাজ রেকাবিও হিজাব পরেননিছবি: Rhea Kang/AFP

তিনি উল্লেখ করেন, "গত তিন বছর আমাকে দেশ ত্যাগে বাধা দেওয়া হয়েছিল। ফলে আমি গুরুত্বপূর্ণ টুর্নামেন্ট এবং চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নিতে পারিনি।"

তবে, বিশ্বের ১৭ নম্বর এই মহিলা দাবাড়ু তার ইরানে ফিরে যাওয়ার ব্যাপারটা উড়িয়ে দেননি। তিনি বলেন, "ইরান আমার বাড়ি। উপযুক্ত সময় এলেই পরিবারের সাথে আমি আমার স্বদেশে ফিরে যাব।"

সর্বশেষ নির্বাসিত দাবাড়ু

সারা খাদেম হলেন পঞ্চম ইরানি দাবা তারকা যিনি গত কয়েক বছরের মাতৃভূমি ছেড়ে পালিয়েছেন। তার আগে, মিত্রা হেজাজিপুর, গাজল হাকিমিফার্ড, আতুসা পরকাশিয়ান এবং দোর্সা দেরাখশানি একই কারণে

দেশত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন। পরকাশিয়ান এবং দেরাখশানি এখন মার্কিন দলের হয়ে খেলছেন। অন্যদিকে, হাকিমিফার্ড সুইজারল্যান্ডের হয়ে এবং হেজাজিপুর ফ্রান্সের হয়ে খেলেন।

আলিরেজা ফিরোজ্জাও দাবার বোর্ডে বসে আর তার জন্মভূমির প্রতিনিধিত্ব করেন না। মাত্র ১৮ বছর বয়সে তিনি বিশ্বের দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন। প্রতিভাবান এই দাবাড়ু ২০১৯ সালে নিজের দেশ ছেড়ে ২০২১ সাল থেকে ফ্রান্সের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

আন্তর্জাতিক দাবায় রেফারির ভূমিকা পালন করেন শোহরেহ বায়াত। দুই বছর আগে তিনিও ইরান ছেড়ে চলে যান। হেডস্কার্ফ না পরে বিদেশে একটি টুর্নামেন্ট পরিচালনা করার পরে তিনি যুক্তরাজ্যে পাড়ি দেন।

শায়েস্তেহ গাদেরপুর ইরানের জাতীয় দাবা খেলোয়াড় ছিলেন। তিনি ২০১৩-১৪ মৌসুমে বুন্দেসলিগায় হ্যামবার্গার এসকে-এর হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন এবং প্রবাসী ইরানী দাবা গ্র্যান্ডমাস্টারদের সাথে বিদেশে বেশ কয়েকটি প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন।

ডয়চে ভেলের সাথে এক সাক্ষাত্কারে তিনি বলেছিলেন, "বিদেশে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করার সময় ইরানের জাতীয় দলে আমাদের সাথে ভ্রমণকারী নৈতিকতা রক্ষাকারীদের হাত থেকে বাঁচতে আমাদের অর্ধেক শক্তি নষ্ট হয়ে গিয়েছিল।"

"মোল্লা শাসনের প্রতিনিধিরা সর্বদা নজর রাখতেন যে, বাধ্যতামূলক হেডস্কার্ফের নিয়মগুলো পালন করা হচ্ছে কিনা অথবা মাথার চুল দেখা যাচ্ছে কিনা," তিনি বলেন।

ফরিদ আশরাফিয়ান/একেএ