ইরান প্রসঙ্গে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র
১ অক্টোবর ২০১৩ইরান কি যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সম্পর্কে ফাটল ধরাচ্ছে? মার্কিন গণমাধ্যমগুলো এখন এই বিষয়টি নিয়েই মুখর৷ এমনকি, বিশ্লেষকদের আলোচনাতেও উঠে আসছে এই বিষয়টি৷
ঐতিহাসিক ফোনালাপ
একটি ফোনালাপ, আর সেটাই যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম মিত্র ইসরায়েলের চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ শনিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা টেলিফোনে ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রোহানির সাথে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন৷ ঘোষণা দেন যে, দু'দেশের মধ্যে উত্তেজনা নিরসনের আভাস পাচ্ছেন তিনি৷
ইউরোপসহ পশ্চিমা বিশ্ব একে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন৷ কিন্তু ইসরায়েল মোটেও ভালোভাবে দেখছে না বিষয়টিকে৷ নিউ ইয়র্ক টাইমস বলছে, এ যেন তোমার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু তোমার প্রধান শত্রুর সাথে ভালোবাসার ভান করছে৷ কেন না, দীর্ঘ ৩০ বছর পর যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের দুই শীর্ষ নেতার মধ্যে এমন সরাসরি ফোনালাপ হলো৷
ইসরায়েলের বিশ্বাস ভঙ্গ
জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন চলার সময় ইরানের সঙ্গে মধুর সম্পর্কে না জড়াতে যুক্তরাষ্ট্রকে সাবধান করে দিয়েছিলেন বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু৷ ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্র এবং জাতিসংঘকে সতর্ক করে বলেছিলেন, ইরানকে বিশ্বাস করলে সেটা হবে চরম বোকামি৷ বলা বাহুল্য, নেতানিয়াহু মনে করেন, আসলে পরমাণু অস্ত্র পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সময় নেয়ার কৌশল হিসেবেই সম্পর্কোন্নয়নের কথা বলছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট৷
মধ্যপ্রাচ্য বিশেষজ্ঞ এবং প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাব্লিউ বুশের সাবেক নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইকেল ডোরানও নেতানিয়াহুর সাথে একমত৷ ডয়চে ভেলেকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, ইরানে যে বিতর্কিত কিছু হচ্ছে সেটা উপেক্ষা করার উপায় নেই৷ তবে তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়ার আগে সেটা খতিয়ে দেখা উচিত৷
অবস্থানের ভিন্নতা
সোমবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেছেন, ইরানের সাথে সব বিষয়ে স্পষ্ট আলোচনা হয়েছে তাঁর৷ এ বিষয়ে কারো কাছে লুকোবার কিছু নেই৷ তবে বরাবরের মতো ইরানের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার পক্ষেই মত দিয়েছেন নেতানিয়াহু, বলেছেন ইরানের পরমাণু কর্মসূচি তাদের জন্য হুমকি৷ তাই কূটনৈতিকভাবে সমস্যা সমাধান না হলে এবং ইরানের পরমাণু কর্মসূচি সত্যিই হুমকি হয়ে দাঁড়ালে এককভাবে সামরিক অভিযান চালানোর ব্যাপারে হুঁশিয়ারি দেন নেতানিয়াহু৷ বিশ্লেষকদের কথায়, ইরানের ব্যাপারে ওবামা এবং নেতানিয়াহুর দৃষ্টিভঙ্গি একেবারেই ভিন্ন৷ ইরান যাতে পারমাণু শক্তিধর দেশ হিসেবে গড়ে না ওঠে সে ব্যাপারে দু'দেশ একমত হলেও, পদক্ষেপ নেয়া ব্যাপারে দু'দেশের মতভেদ রয়েছে৷
ইউরোপীয় ইউনিয়নের উদ্বেগ
ইরানের পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ কর্মসূচির ব্যাপারে গত সপ্তাহে বিশ্বের শক্তিশালী দেশগুলো এক বছরের সময়সীমা বেঁধে দিতে একমত হন৷ তবে এক বছরের মধ্যে এটা সম্ভব কিনা তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান ক্যাথরিন অ্যাশটন৷ পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে অক্টোবরের ১৫ এবং ১৬ তারিখ জেনেভায় ইরান ও ছয়টি দেশের মধ্যে আলোচনা হবে৷ তবে যেহেতু বেশিরভাগ দেশ ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে উদ্বিগ্ন, তাই তাদের উপস্থিতিতে আলোচনা কতটা ফলপ্রসু হবে – সেটাই এখন দেখার বিষয়, জানান অ্যাশটন৷