জেনেভা বোঝাপড়া
২৪ নভেম্বর ২০১৩ইরানের সঙ্গে জেনেভায় পশ্চিমা সমাজ ঐক্যমত্যে পৌঁছানোর দু'ঘণ্টার মধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা জানিয়েছেন, ‘‘আজ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার ঘনিষ্ট সহযোগী এবং সঙ্গীদের নিয়ে ইরানের পরমাণু কর্মসূচির কারণে সৃষ্ট উদ্বেগ সুরাহায় প্রথম গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণে সক্ষম হয়েছে৷'' মার্কিন টেলিভিশন ভাষ্যকাররা প্রেসিডেন্টের এই বক্তব্যকে ঐতিহাসিক আখ্যা দিয়েছেন৷
তেহরানে ১৯৭৯ সালের নভেম্বর মাসে বন্দি নাটকের পর থেকে ইরান এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কূটনৈতিক পর্যায়ে অচলাবস্থা বিরাজ করছিল৷ মার্কিন প্রেসিডেন্ট তাঁর বক্তব্যে উল্লেখ করেছেন, ‘‘আজকের এই কূটনৈতিক অবস্থান এক নিরাপদ বিশ্বের দিকে যাওয়ার পথ উন্মুক্ত করেছে৷ এমন এক ভবিষ্যতের দিকে, যেখানে আমরা যাচাই করতে পারি যে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ এবং সেদেশ পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিতে সক্ষম হবে না৷''
প্রথম পদক্ষেপ
জেনেভা বোঝাপড়ার অর্থ হচ্ছে, ইরান গত এক দশকের মধ্যে এই প্রথমবারের মতো কিছুক্ষেত্রে তাদের পরমাণূ কর্মসূচির কর্মপরিধি কমাবে৷ বিনিময়ে ইসলামি প্রজাতন্ত্রটির উপর জারি করা আর্থিক নিষেধাজ্ঞা ‘পরিমিত পর্যায়ে' কমানো হবে, বলেন ওবামা৷
তবে নিষেধাজ্ঞা পুরোপুরি তুলে নেওয়া হচ্ছে না বলেও জানান মার্কিন প্রেসিডেন্ট৷ তিনি বলেন, ইরান তাদের প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থ হলে নিষেধাজ্ঞার পরিধি দ্বিগুন করা হবে৷
তবে রিপাবলিকান সিনিটরদের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় এই সমঝোতা নিয়ে বেশি উচ্ছ্বাস দেখা যায়নি৷ যেমন লিন্ডসে গ্রেহাম টুইটারে লিখেছেন, ‘‘সমঝোতায় ইরানের সেন্ট্রিফিউজগুলো খুলে ফেলার বিষয়টি না থাকা অবধি আমরা আসলে কিছু অর্জন করতে পারিনি৷''
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভেদ জারিফ জানিয়েছেন, জেনেভা বোঝাপড়ায় পরমাণু সমৃদ্ধকরণে ইরানের অধিকারের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে৷ তবে তেহরান বলেছে, তারা পরমাণু সমৃদ্ধকরণের মাত্রা আগামী ছয় মাস অবধি পাঁচ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখবে৷ পাশাপাশি নিউ ইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, ইরানের প্রতিনিধিরা সেন্ট্রিফিউজের বিভিন্ন নেটওয়ার্কের মধ্যকার সংযোগ খুলে ফেলতে সম্মত হয়েছে৷
এছাড়া তেহরান তাদের নিত্যদিনের কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের আরো স্বাধীনতা দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে৷ সমালোচকরা দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছে যে, তেহরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির উদ্দেশ্যে আণবিক কর্মসূচি পরিচালনা করছেন৷ তবে এবার, ইরানে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের নিয়মিত যাতায়াত সমালোচকদের মুখ বন্ধে সহায়ক হবে বলে মনে করে তেহরান৷
নাশকতা থেকে রক্ষা
‘‘দ্য ন্যাশনাল ইরানিয়ান অ্যামেরিকান কাউন্সিল''-এর পরিচালক ত্রিতা পারসি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্য ও জার্মানির সঙ্গে ইরানের বোঝাপড়া প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘দীর্ঘ সময় পর এই প্রথমবারের মতো দুই পক্ষ চাপ এবং কর্মকাণ্ড বাড়ানোর বদলে সত্যিকারের সমঝোতার পথ বেছে নিয়েছে৷'' ওয়াশিংটনে বসেই পশ্চিমা সমাজের সঙ্গে ইরানের আলোচনার দিকে নিবিড় নজর রাখছিলেন পারসি৷
পশ্চিমাদের বড় অর্জন হচ্ছে ইরান শেষ পর্যন্ত আলোচনা অনুযায়ী সেন্ট্রিফিউজ নিয়ন্ত্রণে সম্মত হয়েছে, বলেন তিনি৷ এই বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘‘এটি শুধুমাত্র প্রথম পদক্ষেপ নয়, এটি প্রথম পদক্ষেপ এবং একটি বোঝাপড়া যার উপর ভিত্তি করে শেষ পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছানো সম্ভব৷''
এখন গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ‘শৃঙ্খলা, প্রয়োগ এবং সুরক্ষা', আর পরর্বতীতে যা প্রয়োজন তাহচ্ছে এই সমঝোতার পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারীদের দূরে রাখা, মনে করেন পারসি৷ তিনি বিশেষ করে ইসরায়েল এবং সৌদি আরবের কথা উল্লেখ করেন৷ পারসি বলেন, ‘‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে সমালোচকদের ঠাণ্ডা রাখার দায়িত্ব নিতে হবে, না হলে সমালোচকরা নাশকতার মাধ্যমে ইরানের সঙ্গে সমঝোতার পথ রুদ্ধ করতে পারে, যার পরিণতি হবে উভয় পক্ষের মধ্যে সামরিক সংঘাত৷''
জেনেভায় বোঝাপড়ার পর আরো নতুন এক আশা জেগেছে অনেকের মনে৷ আর তা হচ্ছে, পশ্চিমা সমাজ এবং ইরান এখন সিরিয়া সংকট নিরসনে একযোগে কাজ করতে সক্ষম হবে৷ পারসি এই বিষয়ে বলেন, ‘‘পরমাণু ইস্যু সরিয়ে রাখলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইরানের মধ্যকার অন্যান্য ইস্যু নিয়ে আলোচনা সহজ হবে এবং সেগুলো সমাধানও সহজে করা সম্ভব৷''