উগ্রবাদের বিরুদ্ধে স্যাটায়ার
২৬ আগস্ট ২০১৯উগ্রবাদীরা ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মের কাছে তাদের মতবাদ তুলে ধরার চেষ্টা করেন৷ সেই চেষ্টাকে টেক্কা দিতেই এনআরডাব্লিউ রাজ্যের সংবিধান সুরক্ষা বিভাগের এই উদ্যোগ৷
মূল চ্যানেলটির সঙ্গে আরো একটি চ্যানেল তৈরি করা হবে৷ একটি চ্যানেলে ‘হিউমার' ব্যবহার করে কনটেন্ট তৈরি করা হবে৷ অন্যটিতে তথ্য উপাত্ত দিয়ে কন্টেন্ট তৈরি করা হবে৷
স্যাটায়ারধর্মী চ্যানেলটির নাম ‘জিহাদি ফুল'৷ গেল মঙ্গলবার থেকে এটি চালু হয়ে গেছে৷ আর তথ্যনির্ভর চ্যানেলটি চালু হবার কথা ঠিক এক সপ্তাহ পর৷
মূলত ‘স্যাটায়ার দিয়ে মৌলবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও উগ্রবাদের ধরনগুলো তুলে ধরা' প্রথম চ্যানেলটির কাজ৷ আর দ্বিতীয় চ্যানেলটি দিয়ে ‘সালাফিস্ট প্রপাগান্ডার' বিরুদ্ধে তথ্য ও উপাত্ত তুলে ধরা হবে৷
‘জিহাদি ফুল' নামটি নেয়া হয়েছে ‘জিহাদ কুল'-কে ব্যঙ্গ করে৷ ‘জিহাদ কুল' হলো জিহাদকে ফ্যাশনেবল করে তুলতে উগ্রবাদীদের একটি উদ্যোগ৷
পাঁচ লাখ ইউরোর এই প্রকল্পে এক বছরে ৩২টি ব্যঙ্গাত্মক ও ১৬টি তথ্যনির্ভর ভিডিও প্রকাশ করা হবে৷
এনআরডাব্লিউতে চরমপন্থিরা ‘সক্রিয়'
রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হ্যেরবার্ট রেউল এক সংবাদ সম্মেলনে সম্প্রতি বলেন, তথাকথিত ইসলামিক স্টেট সামরিক অভিযানের কাছে হেরে গেছে বটে, কিন্তু তার মানে এই নয় যে সালাফিস্টরা বাতাসে মিলিয়ে গেছেন৷ জার্মানির সবচেয়ে জনবহুল এই রাজ্যে ৩১০০ জন সালাফিস্ট আছেন বলে জানান তিনি৷
‘‘তারা এখনো সক্রিয় এবং তরুণ প্রজন্মকে আকৃষ্ট করার সব ফন্দি আটছেন,'' রেউল বলেন৷
তিনি বলেন, ‘‘বুদ্ধি, ব্যঙ্গ বা রসিকতা ও তথ্য গণতন্ত্রের সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র৷'' রেউল যোগ করেন, ‘‘তাদের (তরুণদের) কাছে আমাদের পৌঁছাতে হবে৷''
উগ্রবাদ প্রতিরোধ নিয়ে কাজ করেন গবেষক জাওয়ানেহ গোলেসর্খ৷ তিনি বলেন, স্যাটায়ার একটি চমৎকার আইডিয়া৷ কিন্তু এর সাফল্য নির্ভর করছে কীভাবে তা ব্র্যান্ডিং করা হচ্ছে৷
‘‘যে কোনো ধরনের পালটা বক্তব্য, বিশেষ করে তা যদি সরকারি সংস্থাগুলোর কাছ থেকে আসে, তা ততটা কার্যকর হয় না, যতটা হয় তা ‘ইনফ্লুয়েন্সার'-দের (সমাজে প্রভাব আছে এমন ব্যক্তি) কাছ থেকে এলে৷''
গোলেসর্খ জানান, তাঁর সংস্থা ‘উফুক' থেকে ‘সে মাই নেম' নামে একটি প্রকল্প শুরু করেছিলেন৷ এ প্রকল্পে উগ্রবাদ বিরোধী ইনফ্লুয়েন্সারদের ভিডিও বক্তব্য ১৪ থেকে ২৫ বছর বয়সী তরুণীদের কাছে তুলে ধরা হয়৷
ইতিহাসবিদ ও উগ্রপন্থা বিশেষেজ্ঞ ক্রিস্টিয়ান অস্টহোল্ড ডয়চে ভেলেকে বলেন, ব্যঙ্গাত্মক ভিডিও উগ্রতার বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হতে পারে৷ তবে সেখানে ইসলামিক সমাজে প্রভাব আছে, এমন ব্যক্তিদের যুক্ত করতে হবে৷
তিনি বলেন, সালাফিজমের প্রচারকারীরা ইউটিউবে বেশ সক্রিয় এবং কীভাবে এটি কার্যকরভাবে ব্যবহার করা যায়, তা তাদের ভালোই জানা৷
‘‘যে ইমামরা সালাফিস্ট মতবাদবিরোধী তাঁরা ভালো জার্মান জানেন না, তাই তাঁদের জন্য মিডিয়ায় উপস্থিতি অসম্ভব,'' তিনি যোগ করেন৷
উগ্রবাদীরা কৌশল পরিবর্তন করেন
উফুকের গোলেসর্খ বলেন, সাস্প্রতিক বছরগুলোতে উগ্রপন্থিরা কৌশলে পরিবর্তন এনেছেন৷ তারা এখন ইনস্টাগ্রামে বার্তা প্রচার করেন৷ এছাড়া তারা ধর্মের চেয়ে রাজনীতি, পুঁজিবাদ ও নারীবাদ নিয়ে বেশি কথা বলেন৷
‘‘যেমন, আপনি ইউটিউবে জেনারেশন ইসলাম নামে একটি অ্যাকাউন্ট দেখবেন যেখানে বর্ণবৈষম্যের মতো দৈনন্দিন জীবনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়৷ আপনি বুঝতেই পারবেন না এটি উগ্রবাদীদের একটি সাইট,'' বলেন তিনি৷
তাঁর ধারণা, এই সাইটে যখন কেউ কমেন্ট করেন অথবা সাইটের সঙ্গে যোগাযোগ করেন, তখন হয়তো কট্টরপন্থি মতবাদ ছড়িয়ে দেয়া হয়৷ তবে যারাই এই ভিডিও দেখছেন তারাই উগ্র মৌলবাদে জড়িয়ে পড়ছেন, তা ঠিক নয়৷
সবার আগে পরিচয়
গোলেসর্খ আরো জানান, উফুকের গবেষণায় দেখা গেছে, কারো মাথা থেকে উগ্রপন্থি ধারণাকে দূর করার জন্য শুধু ইসলামী মৌলবাদ নিয়ে কথা বললে হবে না৷ গণতন্ত্র ও অভিবাসন নিয়েও কথা বলতে হবে৷
পরিচয় ও ধর্ম - এ দু'টি বিষয় খুব সংবেদনশীলতার সঙ্গে নাড়াচাড়া করতে হবে৷
‘‘আপনি যখন এ (ধর্ম) নিয়ে কথা বলবেন, তখন খুব সাবধান থাকতে হবে৷ কারণ আপনার অবস্থা পিংপং বলের মতো হয়ে যেতে পারে৷ সবসময় আপনার চেয়ে ভালো বা ভিন্নভাবে জানেন অন্য কেউ,'' বলেন গোলেসর্খ৷
‘‘কীভাবে চলতে হবে, বাঁচতে হবে, তা একজনকে বললে হবে না৷ তার সঙ্গে চোখে চোখ রেখে দেখাতে হবে,'' যোগ করেন৷
উগ্রবাদে জড়িয়ে পড়ার একটা বড় কারণ হলো, যখন ব্যক্তি ভাবেন যে তিনি গুরুত্বপূর্ণ নন এবং সমাজের অংশ নন, বলে মনে করেন ক্রিস্টিয়ান৷
তিনি বলেন, ‘‘মানুষ তার চারপাশের সম্মতি ও স্বীকৃতি চায়৷'' তিনি যোগ করেন, ‘‘সালাফিজমের প্রচারকরা বলেন যে, সমস্যা তুমি নও, সমস্যা হলো অইসলামিক, ঈশ্বরহীন সমাজ৷''
‘তারা এখনো ভোট দিতে পারেন না'
গোলেসর্খ বলেন, সবচেয়ে ভালো উপায় হলো জার্মানির সব তরুণকে এই ধারণা দিতে হবে যে, তারা এই সমাজের অংশ৷
‘‘যেমন ধরুন, এমন অনেকে আছেন যাদের বাবামায়েরা ২০ বছর ধরে এখানে আছেন, অথচ তাদের ভোটাধিকার নেই,'' বলেন গোলেসর্খ৷ ‘‘তারা তাদের প্রতিদিনকার জীবনে এভাবেই বর্জিত ও বর্ণবৈষম্যের শিকার হচ্ছেন৷''
বিশেষ করে এই এনআরডাব্নিউতে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ যেখানে অসংখ্য অভিবাসী থাকেন এবং কাজ করেন৷
রাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ভল্ফগাঙ বেউজ ডয়চে ভেলেকে বলেন, প্রকল্পটি এ বছর কেমন চলছে, তার ওপর এর ভবিষ্যত নির্ভর করবে৷
লুইজা রাইট/জেডএ