ইস্তানবুলের আফগান সম্মেলনে একজোট ১৪ দেশ
৪ নভেম্বর ২০১১যুদ্ধ শেষ হয়নি এখনও৷ দমন করা বাকি রয়ে গেছে সন্ত্রাসবাদীদের৷ আর বাকি দেশ গড়ে তোলার কাজ৷ এসবের জন্য প্রতিবেশী দেশগুলোর পূর্ণাঙ্গ সমর্থন দরকার৷ তা নাহলে আফগানিস্তানে শান্তি কিছুতেই ফিরবে না৷ বিশেষ করে পাকিস্তানের সমর্থন প্রয়োজন সন্ত্রাসীদের দমন করতে৷ তুরস্কের ইস্তানবুলে আয়োজিত একদিনের আফগানিস্তান সম্মেলনে প্রদত্ত ভাষণে এই মন্তব্যটি আফগান প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইয়ের৷ ২০১৪ সালের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে যাবতীয় বিদেশি সৈন্য প্রত্যাহারের পর সেদেশের সম্ভাব্য নিরাপত্তার পরিস্থিতি নিয়ে কারজাই-এর এই মন্তব্যটি গুরুত্বপূর্ণ৷ কারণ, পাকিস্তানের সঙ্গে সাম্প্রতিক অতীতে আফগানিস্তানের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক যথেষ্ট ধাক্বা খেয়েছে৷
আফগানিস্তানের পুনর্নির্মাণের লক্ষ্যে ইস্তানবুলের এই সম্মেলন যথেষ্ট উপযোগী এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ বলে বর্ণনা করেছেন সহকারী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইলিয়াম বার্নস৷ নিজের ভাষণে বার্নস আফগানিস্তানের সরাসরি প্রতিবেশী এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যান্য রাষ্ট্রগুলিকে আফগানিস্তানের স্বার্থে এগিয়ে আসতে আহ্বান জানিয়েছেন৷ তাঁর মতে, আফগানিস্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে এ ধরণের পূর্ণাঙ্গ সম্মেলনের প্রয়োজনীয়তা অনেকখানি৷ এখান থেকে অন্তত এই ধারণা মিলেছে যে এক জায়গায় আফগানিস্তানের নিকট ও দূরের প্রতিবেশী দেশগুলি সকলে মিলে বসে আফগানিস্তানের সুন্দর ভবিষ্যত গড়ে তোলার জন্য এগিয়ে আসতেই পারে৷
মোট ১৪টি দেশ অংশ নিয়েছিল ইস্তানবুল সম্মেলনে৷ তার মধ্যে চীন আর ভারতের অংশগ্রহণ যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ৷ চীনের তরফে সম্মেলনে যোগদানকরী চীনের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিউ ঝেনমিন তাঁর ভাষণে জোর দিয়ে বলেন, আফগানিস্তানের সার্বভৌমত্বের সুরক্ষায় সকলকে এগিয়ে আসতে হবে৷ সেইসঙ্গে তিনি বলেছেন, আন্তর্জাতিক মহলের উচিত শুধুমাত্র আফগানদের দ্বারা পরিচালিত আফগানিস্তানকে সমর্থন জানানো৷ আর এই নতুন করে গড়ে তোলার কাজে আফগানিস্তানকে পূর্ণ সমর্থন করতে তৈরি চীন৷
সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী দেশগুলির মধ্যে চীন ছাড়াও আফগানিস্তানের ভবিষ্যৎ উন্নয়নে দক্ষিণ এশিয়ার আরেক গুরুত্বপূর্ণ শক্তি ভারতের ভূমিকাও বেশ চোখে পড়ার মতই ছিল৷ ভারতের তরফে আফগানিস্তানের উন্নয়নে একাধিক প্রকল্প আগে থেকেই চলছে৷ সাম্প্রতিক অতীতে ইরানের ছাবাহর বন্দরটির উন্নয়ন আর সংস্কারের মাধ্যমে ভারত সরাসরি আফগানিস্তানের সঙ্গে যোগাযোগের একটি রাস্তা খুলে ফেলেছে৷ আসলে আফগানিস্তানে পৌঁছতে হলে ভারতীয় পণ্য এবং অন্যান্য সামগ্রী পাকিস্তানের মধ্যে দিয়ে নিয়ে যেতে হয়৷ ভারত-পাকিস্তান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের তিক্ততার জের তাতে বারবার প্রভাব ফেলায় তেহরান আর কাবুলের সঙ্গে একটি ত্রিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি ভারত আগেই সেরে রেখেছে৷ সেই চুক্তি মোতাবেক ইরানের ছাবাহার বন্দরটির উন্নয়ন এবং সেইসঙ্গে সেই বন্দরের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের জন্য সড়ক ইত্যাদি তৈরিতে বিশাল অঙ্কের বিনিয়োগ করছে নতুন দিল্লি৷ ইস্তানবুল সম্মেলনে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব নিরূপমা রাও জানান, ইরানের ছাবাহার বন্দরটি যাতে দ্রুত কার্যকর হয়ে ওঠে তার জন্য ইরানকেও সমানভাবে সক্রিয় হতে হবে৷ প্রসঙ্গত, এই বন্দরের উন্নয়ন এবং পূর্বে স্বাক্ষরিত ওই ত্রিপাক্ষিক চুক্তির মাধ্যমে শুধু আফগানিস্তান নয়, সমগ্র মধ্য এশিয়ার বাজারে ভারতীয় পণ্য পৌঁছে দেওয়ার বাজার ধরতে চাইছে ভারত৷ উন্নয়নশীল অর্থনীতির ক্ষেত্রে যা সহায়ক হয়ে উঠবে৷ পাশাপাশি আফগানিস্তানের উন্নয়নে ভারত চাইছে তার গুরুত্বপূর্ণ অবদান বজায় রাখতে৷ এবং তা অবশ্যই পাকিস্তানকে কোনভাবে না ঘাঁটিয়ে৷
প্রতিবেদন: সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়
সম্পাদনা : আবদুল্লাহ আল-ফারূক