ঈদ এবং সামনের রাজনীতি
২২ এপ্রিল ২০২৩বিএনপি চাইছে দুই ঈদের মাঝখানের সময়টিকে কাজে লাগিয়ে আন্দোলনের ফসল ঘরে তুলতে। কারণ আগস্ট-সেপ্টেম্বরের দিকে নির্বাচনমুখী একটা আবহাওয়া তৈরি হবে। জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা ডিসেম্বরের শেষে অথবা জানুয়ারি মাসের প্রথম দিকে।
বিএনপি এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ না নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে আগেই। তারা নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন চায়। চায় আওয়ামী লীগ সরকারের বিদায়। আর সরকার তাদের অধীনেই নির্বাচন হবে বলে অনড় রয়েছে। বিএনপি মনে করছে নির্বাচনী হাওয়া শুরু হয়ে গেলে তাদের আন্দোলন শক্ত করা কঠিন হবে। তাই ঈদের পরই তারা নতুন কর্মসূচিতে যেতে চায়। সেই বিবেচনা থেকেই তারা রোজার মাসেও রাজনৈতিক কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছে।
ঈদকেও তারা জনসংযোগ ও আন্দোলনের কাজে লাগানোর পরিকল্পনা নিয়েই কাজ করছে। তাই অধিকাংশ নেতাই এই ঈদে যার যার নির্বাচনী এলাকায় চলে গেছেন।
ঈদের পর বিশালাকারে যুগপৎ আন্দোলনের পরিকল্পনা রয়েছে বিএনপির। ঈদ শুভেচ্ছার মাধ্যমে সেই বার্তা পৌঁছে দিচ্ছেন নেতারা। বিশেষ করে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ ও সম্পর্কের টানাপোড়েন কাটিয়ে ওঠতে কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশনা দিয়েছেন হাইকমান্ড। অনেক কেন্দ্রীয় নেতা তৃণমূলের সঙ্গে সমন্বয় করেন না। সম্পর্কের ঘাটতির কথা তারাই হাইকমান্ডকে জানিয়েছেন আনুষ্ঠানিক বৈঠকে। বিভিন্ন এলাকায় কারাবন্দি নেতাদের নামেও ঈদ শুভেচ্ছা ব্যানার, পোস্টার ও ফেস্টুন করা হয়েছে। তাদের পক্ষ থেকে ঈদের উপহার দেয়া হয়েছে। আর দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঈদ উপহার নিয়ে কারাবন্দি নেতা-কর্মীদের পরিবারের কাছে ছুটে গেছেন নেতারা।
ঈদের দিন কারাগারে আটক ৪৪৬ নেতাকর্মীর খোঁজ নিতে কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে আগেই টিম গঠন করা হয়েছে। তাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য পাজামা-পাঞ্জাবি ও শাড়ি উপহার দেয়া হচ্ছে দলের পক্ষ থেকে।
এদিকে আওয়ামী লীগ নেতারা বলতে গেলে নির্বাচনের কাজ শুরু করে দিয়েছেন। ঈদের আগে প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা সবাইকে কোন্দল ভুলে এক যোগে কাজ করতে বলেছেন। তিনি বলেছেন, জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়ন তিনি নিজে দেবেন। তাই অন্য কারুর কাছে তদবির করে লাভ নেই। আর যাকে মনোনয়ন দেয়া হবে তার জন্য সবাইকে কাজ করতে হবে। সামনের পাঁচ সিটি কর্পোারেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চূড়ান্ত হয়েছে। জাতীয় নির্বাচনের আগে এটিই বড় নির্বাচন। তাই সরকার চাইছে এই নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক এবং উৎসবমুখর করতে। ফলে বিদ্রোহী প্রার্থীদের ব্যাপারে এক ধরনের নমনীয় ভাব আছে। আর বিএনপি থেকে শেষ পর্যন্ত যদি স্বতন্ত্র প্রার্থীরা দাঁড়ায় তাহলে হয়তো আওয়ামী লীগ বিদ্রোহীদের ব্যাপারে কিছুটা কঠোর হবে।
শেখ হাসিনা নিজে এবার রোজায় কোনো ইফতার পার্টি করেননি দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনা করে। দলের সব পর্যায়ে এটা অনুসরণ করা হয়েছে। কিন্তু পুরো রমজান জুড়ে তারা নিম্নবিত্ত মানুষের মধ্যে খাদ্য ও ইফতার সামগ্রী বিতরণ করেছে। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা এই জনসংযোগে ছিলেন। ঈদেও নেতাদের অনেকেই যার যার নির্বাচনী এলাকায় চলে গেছেন। কেন্দ্র থেকে আগেই এই নির্দেশনা দেয়া হয়। সাধ্যমত মানুষের পাশে দাঁড়াতে বলা হয়েছে তাদের।
ঈদের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ গনসংযোগ এবং নির্বাচনের প্রস্তুতি ও বিরোধীদের আন্দোলন মোকাবেলা করার কাজ করছে। বিএনপি ঈদের পর তৃণমূল থেকে কঠোর আন্দোলন শুরু করতে চাইছে। আওয়ামী লীগও তাই তৃণমূলে অবস্থান সংহত করার কাজে নেমেছে। রোজা ও ঈদকে কাজে লাগাচ্ছে তারা।
পাঁচ সিটিতে মেয়র আওয়ামী লীগের যারা মনোনয়ন পেয়েছেন, তারা ঈদে ব্যাপক আয়োজন করেছেন বলে জানা গিয়েছে। খাওয়া দাওয়া ছাড়াও ঈদ উপহার বিতরণেরমধ্য দিয়ে তারা নির্বাচনী প্রচার শুরু করেছেন। ওই এলাকার নেতা-কর্মীরা এবার ঈদে উপহার ও হাত খরচ ভালোই পাচ্ছেন মেয়র প্রার্থীদের কাছ থেকে।
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন," এবারের ঈদে মানুষ অনেক কষ্টের মধ্যে আছেন। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে মানুষ ভালো নেই। তাই নেতা-কর্মীদের সাধারণ মানুষের পাশে থেকে সাধ্যমত তাদের সহায়তা করতে বলা হয়েছে। আমরা রোজার মধ্যেও এটা করেছি। আর যেসব নেতারা ঢাকায় থাকেন তাদের অনেকেই এলাকায় চলে গিয়েছেন।”
তিনি জানান," যেসব নেতা-কর্মী আন্দোলন সংগ্রামে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, কারাগারে আছেন তাদের পরিবারের পাশেও আছেন আমাদের নেতা-কর্মীরা। যারা কারাগারে আছেন তাদের ঈদের শুভেচ্ছা জানানো হয়েছে।”
তিনি বলেন," আমরা আন্দোলনের মধ্যেই আছি। রোজার মাসেও আমাদের আন্দোলন কর্মসূচি ছিলো। আর এখন আমরা আরো কঠোর কর্মসূচির পরিকল্পনা করছি। আমরা সার্বিক পরিস্থিতি মূল্যায়ন করছি। সমমনা দল ও যুগপৎ আন্দোলনের দলগুলোর সাথে কথা বলছি। ঈদের পরই আমরা নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করব।”
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এস কামাল হোসেন বলেন," আমরা রোজার সময় সাধারণ মানুষের পাশে থেকেছি। ঈদের সময়ও আছি। বিশেষ করে যারা সংসদ সদস্য এবং যারা প্রার্থী হতে চান তারা প্রায় সবাই ঈদে যার যার নির্বাচনী এলাকায় আছেন। প্রধানমন্ত্রী ঈদের আগে দেশের সব নেতা-কর্মীদের ভিডিও কলে পাঁচ-ছয়টি নির্দেশনা দিয়েছেন। আগামী নির্বাচন পর্যন্ত সেই নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ চলবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যাকে জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়ন দেবেন তার জন্য কাজ করতে হবে সবাইকে মিলেমিশে।”
তার কথায়," এবার ঈদে নেতা-কর্মীরা এলকায় জনসংযোগ ছাড়াও সাধারণ মানুষকে সাধ্যমতো ঈদ উপহার দিচ্ছেন। আগেই কেন্দ্র থেকে এব্যাপারে নির্দেশনা দেয়া আছে।”
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন," আমরা মাঠেই আছি। নির্বাচন পর্যন্ত মাঠেই থাকব। বিএনপি তার আন্দোলন করবে। কিন্তু আন্দোলনের নামে যদি কোনো নাশকতা বা জ্বালাও-পোড়াও করে তারা, তাহলে তার জবাব দেয়া হবে।”