ঈদের ইতিহাস
মুসলিমদের সবচেয়ে বড় উৎসব ঈদ৷ কীভাবে এই ঈদের শুরু, বাংলায় কবে ঈদ এলো - এসব তথ্য থাকছে ছবিঘরে৷
যেভাবে ঈদের শুরু
বাংলাদেশ জাতীয় জ্ঞানকোষ বাংলাপিডিয়া বলছে, মহানবি হযরত মুহাম্মদ (সা.) মদিনায় যাওয়ার পর ঈদুল ফিতর উৎসব পালন করা শুরু হয়েছিল৷ সেখানে গিয়ে তিনি দেখেন মদিনার মানুষ ‘নওরোজ’ ও ‘মিহিরজান’ নামে দুটি উৎসব পালন করে থাকে৷ তখন মদিনাবাসীকে মহানবি বলেন, ‘‘আল্লাহ তোমাদেরকে উক্ত দিবসদ্বয়ের পরিবর্তে উত্তম দুটি দিবস দান করেছেন৷ দিবসদ্বয় হলো ঈদুল আযহার দিবস ও ঈদুল ফিতরের দিবস৷’’
ঢাকায় যেভাবে ঈদ এলো
ইতিহাস গবেষক রিদওয়ান আক্রাম ২০১৩ সালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে লিখেছিলেন, ১৬১০ সালে ঢাকায় মুঘলরা আসার পর ঈদ উৎসব পালন শুরু হয়েছিল৷
যেভাবে পালন হত
মুঘলদের ঈদ উদযাপন হত দু-তিনদিন ধরে৷ চলত সংগীত ও নৃত্য পরিবেশন৷ আত্মীয়স্বজন পরিবার পরিজন নিয়ে একরকম মেলাই বসে যেত৷ সম্ভবত বাদশাহী বাজারে (বর্তমান চকবাজার) এই মেলা আয়োজিত হত৷ বিশেষ করে তখনকার প্রশাসনিক সদরদপ্তর ঢাকা কেল্লার (ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার) আশপাশের এলাকা ঈদের সময়টায় থাকত জমজমাট৷
ঈদের চাঁদ ওঠার পর
সন্ধ্যায় মোমবাতির আলোয় আলোকিত হত মুঘল আমলের ঢাকা শহর৷ ঈদের চাঁদ ওঠার পর বেজে উঠত শাহী তূর্য (রণশিঙ্গা)৷ আর গোলন্দাজ বাহিনী গুলির মতো একের পর এক ছুঁড়তে থাকত আতশবাজি৷ সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত চলত এই আতশবাজির খেলা৷ শেষরাতের দিকে বড় কামান দাগা হত৷ সে সময় ঢাকাবাসী বাদশাহী বাজার (বর্তমানে চকবাজার) থেকে ঈদের কেনাকাটা সারতেন৷
ঈদগাহ তৈরি
মুঘল সম্রাট শাহজাহান তার জ্যেষ্ঠ পুত্র শাহ সুজাকে সুবে বাংলার শাসক করে পাঠান ১৬৩৯ খ্রিস্টাব্দে৷ তার নির্দেশে ১৬৪০ সালে বর্তমান ধানমণ্ডির সাত মসজিদ রোডের ঈদগাহটি নির্মিত হয়েছিল৷ তখন থেকে ঢাকায় অভিজাত শ্রেণির মুসলমানেরা ঐ ঈদগাহে ঈদের নামাজ পড়তেন৷ তবে সাধারণ নগরবাসীর সেখানে যাওয়ার তেমন একটা সুযোগ ছিল না৷
জৌলুস ধরে রাখতে ঈদ মিছিল
১৭৬৫ সালে মুঘল সম্রাটের কাছ থেকে ইংরেজরা বাংলার-বিহার-উড়িষ্যার রাজস্ব সংগ্রহের ভার পায়৷ সে কারণে ঢাকার নায়েব-নাযিমরা পরিণত হন ক্ষমতাহীন শাসকে৷ এই অবস্থায় পড়তি ঢাকার জৌলুস ধরে রাখার চেষ্টা করা হত ঈদ ও মহরমের মিছিল আয়োজনের মাধ্যমে৷ মিছিলে থাকত সজ্জিত হাতি, ঘোড়া, পালকি, অস্ত্র হাতে সৈন্যদল৷ কারও কারও হাতে থাকত রং-বেরংয়ের ছাতা অথবা বাদ্যযন্ত্র৷ ছবিতে ১৮৪৩ সালের দিল্লির ঈদ উৎসব দেখা যাচ্ছে৷
ঈদ উৎসবে নতুন সংযোজন
উনিশ শতকের শেষের দিকে মুসলমানরা আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হতে শুরু করে৷ এতে মুঘল সম্রাজ্যের অংশীদার পরিবারগুলোর পাশাপাশি মুসলমানদের আরেকটি শ্রেণির উত্থান হয়৷ তারা ঈদ উৎসবে নতুন কিছু সংযোজন করেছিলেন- যেমন বিভিন্ন ধরনের পিঠা, সেমাই ও ঈদের দিনে মেলার আয়োজন৷ এসব মেলায় বিক্রি করতে নানারকম ব্যবহার্য জিনিসপত্র নিয়ে হাজির হতেন আশপাশের গ্রামের বিক্রেতারা৷
গত শতকের ঈদ উৎসব
গত শতকের ত্রিশের দশক থেকে ধীরে ধীরে ঢাকাবাসীর ঈদ উদযাপনে পরিবর্তন ঘটে৷ কারণ ততদিনে ঢাকায় জাদুঘর স্থাপিত হয়েছে৷ টকি সিনেমা এসেছে৷ এসেছে রেডিও৷ ঈদ উপলক্ষে গ্রাম থেকে বেড়াতে এসে দর্শনার্থীরা যেতেন ঢাকার কয়েকটি দর্শনীয় স্থানে৷ ঈদের দিন সিনেমা হলগুলোতে ঈদের বিশেষ ছবি প্রদর্শন করা হত৷
স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম ঈদ
বিজয়ের মাত্র এক মাস ১০ দিন পর ১৯৭২ সালের ২৭ জানুয়ারি স্বাধীন বাংলাদেশে ঈদুল আযহা উদযাপিত হয়েছিল৷ সেই ঈদ একদিকে যেমন ছিল স্বস্তির, আনন্দের, ঠিক তেমনি শহীদ পরিবার আর স্বজনদের মাঝে ছিল বেদনার৷ ঈদ উপলক্ষে বাংলাদেশ সরকারের রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী ও প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পৃথক বাণীতে দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন৷ বঙ্গবন্ধু ঈদের নামাজ পড়েছিলেন ধানমন্ডি ক্লাব ময়দানে৷
জেডএইচ/কেএম (বিডিনিউজ, ডেইলি স্টার, বাংলাপিডিয়া)