1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ঈদের ছুটিতে নিরাপত্তা ও নগরবাসীর করণীয়

৮ এপ্রিল ২০২৪

ঈদের ছুটিতে রাজধানী ঢাকা অনেকটাই ফাঁকা হয়ে যায়৷ আর এবার ছুটি লম্বা হওয়ায় আরো বেশি মানুষ ঢাকা ছাড়বেন বলে ধারণা করা হচ্ছে৷ কিন্তু এই ছুটির সময় ফাঁকা ঢাকায় চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাইসহ নানা অপরাধ বেড়ে যায়৷

https://p.dw.com/p/4eY4l
ঈদের আগে হাত মেহেদীতে রাঙাচ্ছেন তরুণীরা (ফাইল ফটো)
ঢাকায় ঈদের আমেজছবি: Mamunur Rashid/NurPhoto/picture alliance

তাই নগরবাসীকে পুলিশের পক্ষ থেকে এবার ১৪টি পরামর্শ দেয়া হয়েছে৷ আর পুলিশও বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করবে বলে জানিয়েছে৷
গত কোরবানির ঈদের চার দিনে ঢাকার ৫০টি থানায় চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের মামলা হয়েছে একশরও বেশি৷ এর মধ্যে ফার্মগেট এলাকায় ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে এক পুলিশ কনস্টেবলও নিহত হয়েছেন৷ আর বাড্ডা এলাকায় দিনের বেলা একটি বাসার পাঁচজনকে হাত পা বেঁধে ডাকাতির ঘটনা ঘটে ওই ছুটির মধ্যেই৷ ডাকাতরা নগদ ১১ লাখ ৩০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে যায়৷
ব্যবসায়ী, গৃহস্থরা যা বলেন:
ঈদের ছুটিতে দোকানপাট, মার্কেট বিশেষ করে স্বর্ণের দোকানগুলো ঝুঁকির মধ্যে থাকে৷ বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাজুস) সহ-সভাপতি এবং "অলংকার নিকেতনের” মালিক এম এ হান্নান আজাদ বলেন, " যাদের বড় মার্কেটে স্বর্ণের দোকান তাদের নিরাপত্তা নিয়ে তেমন উদ্বেগ নাই৷ কারণ সেখানে নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা আছে৷ পুরো মার্কেট সিসি ক্যামেরার আওতায়৷ নিরাপত্তা প্রহরীরাও প্রশিক্ষিত৷ আর যাদের দোকান ছোট মার্কেটে বা আলাদা তাদের নিরাপত্তা ঝুঁকি বেশি৷ ওই সব দোকানেই ঈদের সময় চুরি ডাকাতি হয়৷ অনেক সময় সিকিউরিটি গার্ডরাও এর সঙ্গে যুক্ত থাকে ন৷”
"আমাদের দাবি ছুটির সময় যেন মার্কেট এলাকায় পুলিশের টহল বাড়ানো হয়৷ বিশেষ করে রাতে এই টহল বেশি হওয়া জরুরি৷ আর যেসব এলকা একটু বেশি ফাঁকা সেখানে টহল বেশি রাখা দরকার,” বলে তিনি৷
একইরকম দাবি করেন বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলালউদ্দিন৷ তিনি বলেন, "দোকানগুলোর ৮০-৮৫ ভাগই এখন সিসি ক্যামেরা ব্যবহার করে৷ মার্কেটগুলোও সিসি ক্যামেরার আওতায় রয়েছে৷ কিন্তু সমস্যা হলো কোথাও কোথাও সিকিউরিটি গার্ডরাই অপরাধে জড়িয়ে পড়েন৷ তখন কিছু করার থাকে না৷”
তিনি বলেন, "আমরা এবার সিকিউরিটি গার্ডদের ছুটি না দেয়ার জন্য বলেছি৷ ঈদের ছুটির পর তাদের পর্যায়ক্রমে ছুটি দেয়া হবে৷”
এদিকে মিরপুরের গৃহিনী জেসমিন লিপি বলেন, "চোর চক্র কৌশল পাল্টিয়েছে৷ তারা তাদের দলের নারী সদস্যদের ব্যবহার করছে৷ তারা সঙ্গে শিশুদের নিয়ে এমনভাবে যায় যে তারা কোনো বাসায় বেড়াতে এসেছে৷ এভাবে কৌশলে তারা ফ্ল্যাটে ঢুকে চুরি করে৷ আবার কোনো ফ্ল্যাটে দুইজন দারোয়ান থাকলে একজন ছুটিতে থাকে তখন সুযোগ বুঝে চোর দিনের বেলাতেই ঢুকে পড়ে৷”
আর আলাদা  বা ছোট বাড়িতে গ্রিলকাটা চোর বা ডাকাতরা সুযোগ নেয় বলে জানান তিনি৷  তিনি বলেন, "এই সময়ে ফাঁকা ঢাকায় ছিনতাইকারী ও প্রতারক চক্র বেড়ে যায়৷ রাস্তার পাশে অসুস্থতার ভান করে কেউ শুয়ে থাকেন৷ আপনি সহায়তা করতে গেলেই বিপদে পড়ার আশঙ্কা আছে৷ আপনাকে চেতনানাশক দিয়ে প্রতারক সব কিছু কেড়ে নিতে পারে ৷”
কোন এলাকা অপরাধ প্রবণ:
ঢাকার তিনটি এলাকাকে বেশি অপরাধপ্রবণ বলে বিবেচনা করা হয়৷ এই তিনটি এলাকা হলো মিরপুর, রমনা এবং তেজগাঁও৷
২০২৩ সালের জানুয়ারি  থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি)আটটি বিভাগে চুরির মামলা হয়েছে এক হাজার ৭৮৬টি, ডাকাতি ৩৭টি, দস্যুতা ২৫০টি, খুন ১৮০টি ও অপহরণের ৭৭টি মামলা হয়েছে৷ আর ১৭৪টি ছিনতাইয়ের মামলা হয়েছে৷
এই সময়ে পুলিশের তেজগাঁ বিভাগে সবচেয়ে বেশি ৩৯২টি চুরির মামলা হয়েছে৷ ছিনতাইয়ের মামলা হয়েছে ৭১টি৷ ডাকাতি-দস্যুতার মামলা হয়েছে ৭৭টি৷ দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৮০টি চুরির মামলা হয়েছে রমনা বিভাগে৷ ওই বিভাগে ডাকাতি ও দস্যুতার ৩২টি এবং ছিনতাইয়ের ১৪টি মামলা হয়েছে৷ মিরপুর বিভাগে ছিনতাইয়ের মামলা হয়েছে ২৬টি, যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ৷ ডাকাতি ও দস্যুতার ২৩টি, চুরির ১৯৪টি, খুনের ২১টি ও অপহরণের আটটি মামলা হয়েছে৷ এইসব এলাকায় পুলিশ এবার ছুটিতে বিশেষ নজর রাখবে বলে জানিয়েছে৷
পুলিশের পরামর্শ ও নিরাপত্তা:
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার খ. মহিদ উদ্দিন জানান, " ঈদের ছুটিতে বিশেষ নিরাপত্তা পরিকল্পনা আছে৷ আর নগরবাসীকেও আমরা ১৪ ধরনের পরামর্শ দিয়েছি৷ আমরা বাড়তি টহল, চেকপোস্ট, নজরদারি ছুটির মধ্যে এগুলো বাড়াব৷ আর নগরবাসীকেও তাদের বাসাবাড়ি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে৷ আমরা ফাঁকা ঢাকায় মটরসাইকেল সহ যানবাহনের গতিও নিয়ন্ত্রণে রাখব৷”
ডিএমপির পরামর্শের মধ্যে আছে-নগদ টাকা কিংবা স্বর্ণালংকার ব্যাংক কিংবা নিকটাত্মীয়দের কাছে নিরাপদে রাখা৷ রাতে কিংবা দিনে একসঙ্গে মুখে মাস্ক এবং মাথায় ক্যাপ পরিহিত অপরিচিত সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের গতিবিধি নজরদারি করতে হবে৷ গ্যাস সিলিন্ডার অথবা গ্যাসের লাইন, পানির লাইন, সব ধরনের লাইট, ফ্যানের সুইচ, বৈদ্যুতিক প্লাগ বন্ধ করে রাখা৷ বাসা বাড়িতে অগ্নি দুর্ঘটনা রোধে ছুটি শেষে বাড়ি থেকে ফিরে দরজা জানালা খুলে ঘরে জমে থাকা গ্যাস বের করার পর গ্যাসের চুলা জ্বালানো কিংবা বৈদ্যুতিক সুইচ চালু করা৷ চুরি প্রতিরোধে বাসা-বাড়িতে সিসি ক্যামেরা বসানোসহ আগের বসানো সিসি ক্যামেরা সচল রাখা৷ বাসার চারপাশে বৈদ্যুতিক আলোর ব্যবস্থা রাখা৷ প্রয়োজনে ৯৯৯ কল করে জানানো৷ মোটরসাইকেল চুরি রোধে এলার্ম লাগাতে হবে৷
খ. মহিদ উদ্দিন বলেন, "সব পরামর্শ পুলিশের আওতায় পড়ে না৷ তবু সার্বিক নিরাপত্তার কথা ভেবে আমরা পরামর্শ দিয়েছি৷ আমরা এই বিষয়গুলো নিয়ে ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছি৷ কথা বলেছি বিভিন্ন হাউজিং সোসাইটির কর্মকর্তাদের সঙ্গে৷ প্রত্যেক জোনের ডিসি এবং ওসিরা এই দায়িত্ব পালন করেছেন৷ আর স্বর্ণের দোকানের নিরাপত্তার জন্য বাজুসের সঙ্গে আলাদা বৈঠক করেছি৷”
"আমাদের পরামর্শ হলো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাসাবাড়িতে আইপি সিসি ক্যামেরা লাগানো৷ সেটা করলে আপনি বিদেশে গেলেও সেখান থেকে মনিটরিং করতে পারবেন৷ আর বাসায় যদি  কাউকে রেখে যান এবং নিরাপত্তা কর্মীদের সঠিক পরিচয় নিশ্চিত হবেন৷”
তিনি জানান,"ঢাকার প্রবেশ পথ ছাড়াও নির্জন এলাকায় বাড়তি চেকপোস্ট থাকবে৷ আর টহল বাড়ানো হবে নির্জন ঢাকায় চুরি ও ছিনতাই রোধে৷”
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির ধারণা এবার ঈদে ঢাকা এবং ঢাকার আশপাশের এলাকা থেকে এক কোটি ৬০ লাখ মানুষ ঢাকার বাইরে যাবেন৷ এরমধ্যে রাজধানী থেকেই ঢাকা ছাড়বেন এক কোটি মানুষ৷  তাদের হিসাবে গত ঈদে রাজধানী এবং আশপাশ এলাকা থেকে এক কোটি ২০ লাখ মানুষ ঢাকা ছেড়েছেন৷

‘ঈদের ছুটিতে বিশেষ নিরাপত্তা পরিকল্পনা আছে’

‘যাদের দোকান ছোট মার্কেটে তাদের নিরাপত্তা ঝুঁকি বেশি’