থাইল্যান্ডে উচ্চিংড়া চাষ
২৭ আগস্ট ২০১৪থাইল্যান্ডের উত্তর-পূর্বাঞ্চল হলো দেশের দরিদ্রতম অঞ্চল৷ বৃষ্টি হলে ধানচাষ, নয়ত হাত গুটিয়ে বসে থাকা, এই ছিল এখানকার মানুষদের জীবন৷ কিন্তু আজ এখানে গ্রামে গ্রামে পোকামাকড়ের চাষ, বিশেষ করে উচ্চিংড়ার৷ খামারবাড়িতে রাখা বড় বড় কংক্রিটের চৌবাচ্চায় লক্ষ লক্ষ উচ্চিংড়া কিলবিল করছে; তাদের খাওয়ার জন্য রাখা রয়েছে মুর্গির খাবার থেকে শুরু করে কুমড়ো অথবা অন্যান্য সবজি৷ পরে বাজারে বা রাস্তার ধারে স্তূপ করে সাজিয়ে এই উচ্চিংড়া বিক্রি হবে, কুড়মুড়ে করে ভাজা৷ মানুষজন আনন্দ করে কিনে খাবে৷ অন্তত থাইল্যান্ডে৷
থাইল্যান্ডের মানুষ প্রায় দু'শো ধরনের পোকামাকড় খেয়ে থাকেন৷ চাহিদা এমন যে, কাম্বোডিয়া, চীন, লাওস ও মিয়ানমার থেকে ‘সেবনযোগ্য' পোকামাকড় আমদানি করতে হয় – তার দাম আবার কখনো-সখনো মাংসের চেয়েও বেশি হয়৷ আর হবে না-ই বা কেন? উচ্চিংড়ার ‘মাংসের' কথাই ধরা যাক: তা-তে গরুর মাংসের চেয়ে ৬০ শতাংশ কম স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে, অপরদিকে ভিটামিন বি-টুয়েল্ভ থাকে মাংসের দ্বিগুণ৷ এ হলো জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংগঠন এফএও-র তথ্য৷ উচ্চিংড়া চাষীরা আবার অ্যান্টিবাওটিক্স ব্যবহার করেন না, গ্রোথ হর্মোন ব্যবহার করেন না, মাছ কিংবা চিংড়ি চাষের মতো পচা মাংসের চার দেন না৷
একদিকে স্বদেশের চাহিদা, অন্যদিকে পোকামাকড় খাওয়াটা আজ শিল্পোন্নত বিশ্বেও ছড়াচ্ছে৷ কাজেই উত্তর-পূর্ব থাইল্যান্ডের এককালের গরিব চাষীদের আজ ২০ হাজারের বেশি উচ্চিংড়ার খামার আছে, যাদের সামগ্রিক উৎপাদন হলো বছরে সাড়ে সাত হাজার টন৷ উচ্চিংড়ার চাষ আবার পরিবেশের পক্ষেও কল্যাণকর৷ এক পাউন্ড গরুর মাংস উৎপাদন করতে লাগে ২,৯০০ গ্যালন পানি, ২৫ পাউন্ড পশুখাদ্য এবং প্রচুর পরিমাণ চারণভূমি৷ সে তুলনায় এক পাউন্ড উচ্চিংড়া উৎপাদন করতে লাগে মাত্র এক গ্যালন পানি, দু'পাউন্ড পশুখাদ্য ও একটি চৌবাচ্চা৷
উচ্চিংড়া খেতে কেমন? যেন চিংড়ি মাছ আর কাঠবাদামের সংমিশ্রণ৷ এভাবেই বাঁশের পোকা, তালগাছের পোকা খেতে লাগে যেন আলুভাজা কিংবা বেকনের সুরুয়া৷ আবার শূককীট খেতে লাগে যেন মাখনে ভাজা ব্যাঙের ছাতা, মানে যাকে বলে মাশরুম৷ মার্কিন মুলুকের এনার্জি বারগুলোতে ক্ষেত্রবিশেষে পাবেন গুঁড়ো উচ্চিংড়া৷ এ বছরই পেনসিলভানিয়ায় প্রথম উচ্চিংড়ার খামার খোলা হচ্ছে৷ সানফ্রান্সিস্কোর একটি স্ন্যাকেটেরিয়ায় পোকামাকড়ের পাঁচ কোর্স মিল খেতে পারেন, এমনকি গমের পোকা দেওয়া আইস ক্রিম পর্যন্ত৷
চীনে আরশোলার চাষের কথা আরেকদিন শোনাব...
এসি/ডিজি (এপি)