উত্তর কোরিয়ার থেকে ঝুঁকি নতুন পর্যায়ে পৌঁছেছে
৮ আগস্ট ২০১৭জাপানের সরকারের বাৎসরিক ‘ডিফেন্স হোয়াইট পেপারটি মঙ্গলবার প্রকাশিত হয়৷ রিপোর্টটিতে উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক সমরাস্ত্র কর্মসূচির জরুরি বিপদ সম্পর্কে সাবধান করে দেওয়া হয়েছে৷ জাতিসংঘের বিভিন্ন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা সত্ত্বেও পিয়ংইয়াং পর্যায়ক্রমে ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করে চলেছে ও পরীক্ষামূলক আণবিক বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে৷ জুলাই মাসে উত্তর কোরিয়া তার প্রথম দু'টি আন্তঃ-মহাদেশ ক্ষেপণাস্ত্র বা আইসিবিএম পরীক্ষা করে, যে দু'টি রকেট অন্তঃরীক্ষে ওঠার পর ফিরতি পথে জাপানের পশ্চিম উপকূলে হক্কাইদো দ্বীপের কাছে সাগরে এসে পড়ে৷
‘‘গতবছর দু'টি পরীক্ষামূলক আণবিক বিস্ফোরণ ও বিশটির বেশি ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা যাবৎ (উত্তর কোরিয়া থেকে) নিরাপত্তা ঝুঁকি একটা নতুন পর্যায়ে পৌঁছেছে'', বলে জাপানি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ৫৬৩ পাতার রিপোর্টটিতে বলা হয়েছে৷
‘‘উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক সমরাস্ত্র কর্মসূচি ইতিমধ্যেই লক্ষণীয় প্রগতি করেছে বলে ধরে নেওয়া যেতে পারে; এ-ও সম্ভব যে, উত্তর কোরিয়া ইতিমধ্যে পারমাণবিক অস্ত্রের আকার ছোট করতে সক্ষম হয়েছে ও একাধিক পরমাণু বোমার অধিকারী হয়েছে'', হোয়াইট পেপারটিতে বলা হয়৷
জাপান কি তার প্রতিরক্ষা নীতি বদলানোর কথা ভাবছে?
উত্তর কোরিয়ার সর্বাধুনিক আইসিবিএম পরীক্ষা থেকে বোঝা যায় যে, উত্তর কোরিয়া সম্ভবত এখন জাপানের চেয়েও বেশি দূরে অবস্থিত লক্ষ্যে – যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডের অধিকাংশ স্থানে – আঘাত হানতে সক্ষম৷ উত্তর কোরিয়ার সর্বশেষ রকেটটি ব্যাপক উচ্চতা অবধি – সরকারি বিবৃতি অনুযায়ী ২,৮০০ কিলোমিটার পর্যন্ত ওঠে ও নামে; কাজেই এ ধরনের ক্ষেপণাস্ত্রের বাস্তবিক পাল্লা সম্পর্কে সঠিক করে কিছু বলা শক্ত৷
উত্তর কোরিয়া থেকে রকেট আক্রমণের ঝুঁকি বাড়ার কারণে জাপানের একাধিক পৌর এলাকায় জনসাধারণকে সতর্কতামূলকভাবে সরিয়ে নেবার মহড়া অনুষ্ঠিত হয়েছে৷ জাপানের নতুন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইৎসুনোরি ওনোদেরা গত বৃহস্পতিবার শপথ গ্রহণ করেন; কিন্তু তাঁর নেতৃত্বে গত মার্চ মাসেই শাসকদলের কিছু সাংসদ প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের প্রতি ‘‘শত্রুর ঘাঁটি আক্রমণ করার ক্ষমতা'' সংগ্রেহর কথা বিবেচনা করার আহ্বান জানিয়েছিলেন৷
বস্তুত এই সাংসদরা জাপানের অনাক্রমণাত্মক প্রতিরক্ষা নীতির আমূল পরিবর্তন দাবি করছেন, যে নীতি জাপানের দ্বিতীয় যুদ্ধ পরবর্তী শান্তিবাদী সংবিধানে নির্দিষ্ট আছে৷ বর্তমান সরকার সাম্প্রতিক কয়েক বছরে সংবিধানের বিভিন্ন সূত্রের রদবদল করেছেন ও প্রতিরক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়িয়েছেন৷ কিন্তু তা সত্ত্বেও টোকিও এ পর্যন্ত অপর দেশে আঘাত হানার মতো পাল্লা সম্বলিত বোমারু বিমান বা ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র কেনার কথা ভাবেনি৷
চীনের বর্ধিত সমরশক্তি
জাপানি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের হোয়াইট পেপারে এই এলাকায় চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব ও উপস্থিতি নিয়েও চিন্তাভাবনা করা হয়েছে৷ ২০১৬ সালের মার্চ মাস থেকে ২০১৭ সালের মার্চ মাস অবধি এক বছরে চীনা জঙ্গিবিমানের আবির্ভাবের দরুণ জাপানি জঙ্গিবিমানকে সবচেয়ে বেশিবার আকাশে উঠতে হয়েছে৷
‘‘এখন থেকে জাপান সাগরে (চীনের) নৌসেনামূলক গতিবিধি ও বিমানবাহিনী সংক্রান্ত গতিবিধি আরো বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে'', মন্তব্য করা হয় হোয়াইট পেপারটিতে৷
পূর্ব চীন সাগরে জাপানের নিয়ন্ত্রিত এক পর্যায় জনবসতিহীন দ্বীপকে কেন্দ্র করে চীন ও জাপানের সম্পর্কে বহুদিন ধরে তিক্ততার সৃষ্টি হয়েছে৷ জাপান এই দ্বীপগুলিকে সেনকাকু দ্বীপপুঞ্জ বলে অভিহিত করে থাকে; চীনা ভাষায় দ্বীপগুলির নাম দিয়াওউ দ্বীপপুঞ্জ৷
এসি/ডিজি (এপি, রয়টার্স, এএফও)