উত্তরাখণ্ডে দাবানলের অভিঘাত
৪ মে ২০১৬ভারতের পশ্চিম হিমালয় রাজ্য উত্তরাখণ্ডের বিরাট বনভূমিতে দাবানলের সম্ভাব্য কারণ নিয়ে নানা মুনির নানা মত৷ প্রথমেই আঙুল উঠেছে কাঠ মাফিয়াদের দিকে৷ মনে করা হচ্ছে, এটা তাদের পরিকল্পিত চক্রান্ত৷ হিমালয়ের প্রায় ২,৩০০ হেক্টর সবুজ বনাঞ্চলের হাজার হাজার গাছপালা পুড়ে গেছে, মারা গেছে জনা সাতেক৷ পুড়ে যাওয়া বা শুকিয়ে যাওয়া গাছ রাজ্যের বন দপ্তরের বিক্রি করা ছাড়া উপায় নেই৷ আর জলের দরে তা কেনার জন্য মুখিয়ে আছে কাঠ মাফিয়ারা৷ গাছ কেটে নেবার পর খালি জায়গার দিকে লোলুপ দৃষ্টি পড়বে বিল্ডার-লবির৷ কেউ কেউ মনে করেন, এর পেছনে বনভূমির লাগোয়া গ্রামবাসীদের একাংশের হাত থাকা অসম্ভব নয়৷ খালি জায়গায় তারা চাষ করতে পারবে, বৃষ্টি বাদল হলে গবাদি পশুর খাদ্য জোগান দিতে পারবে আর গবাদি পশুর চারণভূমি হিসেবে বাড়ি জায়গাও পাবে৷
কিন্তু সবথেকে দুশ্চিন্তার কারণ পরিবেশের ওপর এর অভিঘাত৷ এই দাবানলে পরিবেশের কতটা ক্ষতি হতে পারে – সেবিষয়ে বিশিষ্ট পরিবেশ বিজ্ঞানী ড. সুভাষ সাঁতরা ডয়চে ভেলেকে বললেন, ‘‘এই দাবানলে ক্ষতিটা দু'ভাবে হতে পারে৷ একটা স্বল্পমেয়াদি, অন্যটা দীর্ঘমেয়াদি৷ স্বল্পমেয়াদি ক্ষতির মধ্যে রয়েছে বনভূমি ধ্বংস হওয়া, বায়োম্যাস পুড়ে গ্যাস উদগীরণ, স্থানীয় লোকজনদের ঘরবাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়া ইত্যাদি৷ দীর্ঘমেয়াদি অভিঘাতের আবার দু'টো দিক আছে৷ একটা বাস্তব দিক যেমন, কতটা কার্বন-ডাই অক্সাইড বা গ্রিন হাউস গ্যাস বায়ুমণ্ডলে ছড়িয়েছে আর অন্যটা জৈবিক দিক, যেমন জৈব-বৈচিত্র্যের কতটা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে৷ বিরল প্রজাতির কীট-পতঙ্গ ও গাছপালা কতটা বিপন্ন হয়েছে৷ এই সবগুলি খুঁটিয়ে নিরুপণ করার পরই তা সঠিকভাবে বলা সম্ভব৷ অবশ্য এ সবই দাবানলের পরিণাম হতে পারে৷
উত্তরাখণ্ড হিমালয়ের কোলে৷ তাই এই দাবানলের অভিঘাত কি হিমালয়ের হিমবাহের ওপরও পড়তে পারে? উত্তরে পরিবেশ বিজ্ঞানী সাঁতরা বললেন, দাবানল যদি স্থানীয় মাত্রায় সীমিত থাকে, তাহলে ক্ষতি নাও হতে পারে৷ তবে উত্তাপ যদি অত্যধিক হয়, হিমালয় সন্নিহিত ব্যাপক অঞ্চলে ছড়িয়ে গিয়ে পারিপাশ্বিক উষ্ণতা খুব বাড়িয়ে তোলে, তাহলে হিমবাহের ক্ষতির আশঙ্কা আছে৷ সেক্ষেত্রে আবার দেখতে হবে হাওয়া কোনদিকে বইছে আর দাবানল এলাকা থেকে আকাসপথে হিমবাহে দূরত্ব যদি ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার হয়, তাহলে হিমবাহ গলে যাবার আশঙ্কা খুবই কম৷
কিছু কিছু সমীক্ষায় বলা হয়েছে, ভবিষ্যতে দাবানল রুখতে বন-পঞ্চায়েতকে সজাগ ও সচেতন করা জরুরি৷ জ্বালানি হিসেবে শুকনো পাতা বা কাঠের বিকল্প হিসেবে গ্রামবাসীদের রান্নার গ্যাস সরবরাহ করার ওপর জোর দিতে হবে সরকারকে৷ অন্যথায়, ইকো-সিস্টেমের মৃত্যু ঘণ্টা বাজতে আর দেরি নেই৷ পোড়া বনভূমিতে আগামী বর্ষায় যথেষ্ট বৃষ্টি না হলে এল-নিনোর আশঙ্কাও অমূলক নয়৷ মাটি তার আদ্র্রতা হারাবে, ভূমি উত্তাপ বাড়বে, বনভূমি তার শ্যামলিমা হারিয়ে হয়ে যাবে রুক্ষ৷
একটা দাবানল যে পরিবেশের এত বড় ক্ষতি করতে পারে, সেটা কি আপনি ভাবতে পারেন?