ভূমিকম্পের শঙ্কা
৪ জুলাই ২০১৩মেঘভাঙা বৃষ্টি, হড়কা বান, পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নেমে আসা বালি, কাঁকর, পাথরের চাঁই, জলাধার ভেঙে জলোচ্ছ্বাসে মাইলের পর মাইল গ্রাম, জনপদ নিশ্চিহ্ন৷ এই প্রলয় কি আটকানো যেত? ভারতের জিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার মতে, আটকানো সম্ভব না হলেও জানমালের ক্ষয়ক্ষতি এড়ানো যেত৷
এর প্রেক্ষিতে হিমালয় অঞ্চলে ২০০০ সাল থেকে ভূমিধস নিয়ে গবেষণারত একদল ইউরোপীয় ভূ-বিজ্ঞানীর অভিমত হলো, যেভাবে হিমালয় অঞ্চলের পরিবেশের ভারসাম্য ধ্বংস করা হয়েছে, তাতে এরপর বড় ধরনের ভূমিকম্পের আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছেনা৷ সেক্ষেত্রে পরিস্থিতির মোকাবিলার জন্য উচিত আরো ভালোভাবে তৈরি থাকা৷ বিপর্যয় মোকাবিলা এজেন্সিগুলির বিভিন্ন কাজের মধ্যে সুষ্ঠু সমন্বয়সাধন করা – যেটার অভাব এবার দেখা গেছে৷
উল্লেখ্য, উত্তরাখণ্ড রাজ্য ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকায় পড়ে৷ গত ২৭ জুন মৃদু ভূকম্প হয়৷ তীব্রতা ছিল রিশটার স্কেলে ৩.৫৷ ক্ষয়ক্ষতি তেমন হয়নি৷ প্রায়ই এই অঞ্চলে ভূমিকম্প হয়৷ বড় ভূমিকম্প হয় উত্তরকাশীতে ১৯৯১ সালে৷ মারা যায় হাজার খানেক৷ ৯০ হাজার ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়৷ ১৯৯৯ সালে হয় চামোলি জেলায়৷ তীব্রতা ছিল ৬.৮ রিশটার স্কেলে৷ মারা যায় কয়েকশো৷
তাঁদের মতে, সময়ের হিসেবে হিমালয়ের চেয়ে প্রাচীন ইউরোপের আল্পস পর্বতমালা৷ সেদিক থেকে হিমালয় বয়সে এখনো নবীন, ভঙ্গুর, ঠিকমতো শক্ত ও জমাট বাঁধেনি৷ যদিও ভূগঠনের কাজ এখনো শেষ হয়নি৷ ভারতীয় প্লেট এবং উত্তর ইউরো-এশীয় প্লেটের চাপের ফলে শিলাস্তরে ভাঁজ পড়ে হিমালয়ের জন্ম৷ হিমালয় শিলাস্তরের স্থিতিস্থাপকতা কম৷ এটাই হিমালয় পার্বত্য এলাকায় ভূমিধসের মূল কারণ৷ এছাড়া আবহাওয়ার দ্রুত পরিবর্তনশীলতা অর্থাৎ অল্প সময়ের মধ্যে ভারি বৃষ্টিপাত৷ এই অতিবৃষ্টির ফলে দেখা দেয় জলোচ্ছ্বাস, বলেন ইউরোপীয় ভূতাত্ত্বিকদল৷৷
গ্লেসিয়ার বা হিমবাহ বন্যার উৎস৷ সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩,৬০০ মিটার উঁচুতে ১,২০০ বছরের প্রাচীন কেদারনাথ (শিব) মন্দির অবস্থিত মন্দাকিনী নদীর তীরে৷ এই মন্দাকিনীর উৎস যে হিমবাহ, সেই হিমবাহের জলাধার ভেঙে জলস্রোত প্রবলবেগে ধেয়ে আসে৷ তার কিছুক্ষণ আগে পর্বত ঢালের আরেকটা জায়গা দিয়ে নেমে আসে বালি, কাঁকর, পাথর বোল্ডারের বিরাট ধস৷ এই দুটি ধ্বংসপ্রবাহ ভাসিয়ে নিয়ে যায় নীচু বসতি এলাকার সবকিছু৷ কেদারনাথ মন্দির এলাকায় আবহাওয়া বিভাগের কোনো মনিটরিং সিস্টেম ছিলনা, যেটা থাকা দরকার ছিল বলে মনে করেন তাঁরা৷
উপগ্রহ থেকে তোলা ছবির সঙ্গে প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ মিলিয়ে দেখলে আরো নিখুঁতভাবে বলা সম্ভব এই জলোচ্ছ্বাসের কারণ৷ ইউরোপীয় ভূ-বিজ্ঞানীদলের নেতা ডেভ পেটলি মনে করেন, উষ্ণায়ন হিমবাহ গলনের কারণ৷ তবে এক্ষেত্রে সেটা হয়েছে কিনা বলা মুশকিল৷ তাঁর মতে, ভবিষ্যতে এই ধরনের বিপর্যয় এড়াতে পরিবেশের ক্ষতি, বিশেষ করে বৃক্ষ নিধন বন্ধ করতে হবে, পাহাড়ি এলাকায় রাস্তা তৈরির মান উন্নত করতে হবে৷ উপযুক্ত সতর্কীকরণ ব্যবস্থা থাকা ও উদ্ধারকাজের রুট নির্দিষ্ট করা ইত্যাদিও জরুরি৷