উদ্বাস্তুর স্রোত
১২ জুন ২০১৫ইতিপূর্বে চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল জার্মানির ১৬টি রাজ্য এবং পৌর সমিতির প্রধানদের সঙ্গে তিন ঘণ্টা ধরে বৈঠক করেন৷ ফেডারাল বরাদ্দ বাড়লেও, সে অর্থে এই পরিমাণ উদ্বাস্তুদের থাকা-খাওয়ার সুযোগ্য ব্যবস্থা করা সম্ভব হবে না বলেই বিশেষজ্ঞদের ধারণা৷ কেননা, জার্মান মান অনুযায়ী, সাড়ে চার লাখ উদ্বাস্তুর বাসের ব্যবস্থা করতে বাড়তি খরচা পড়বে প্রায় ৫৬০ কোটি ইউরো৷ আগামী সপ্তাহে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা বসবেন চ্যান্সেলরের সঙ্গে, বিষয়টি নিয়ে কথাবার্তা বলতে৷
অন্যদিকে এ ধরনের প্রস্তুতি যে প্রয়োজন, তা-তে কোনো সন্দেহ নেই৷ বিশেষ করে গ্রীষ্মের মাসগুলিতে তুরস্ক, গ্রিস হয়ে স্থলপথে, কিংবা ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে জলপথে ইউরোপে আসার প্রচেষ্টা বাড়ে৷ মুশকিল এই যে, আফগানিস্তান, সিরিয়া কিংবা এরিট্রিয়া বা সোমালিয়া থেকে আগত উদ্বাস্তুদের লক্ষ্য গ্রিস কিংবা ইটালির মতো দক্ষিণের, ভূমধ্যসাগরের উপকূলবর্তী দেশ নয় – তারা চান উত্তর ইউরোপের সমৃদ্ধ দেশগুলিতে আশ্রয় পেতে, যেমন জার্মানি, কিংবা সুইডেন কিংবা ব্রিটেনে৷
ইউরোপীয় ইউনিয়নে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করতে হলে, তার নানা আইনকানুন, রীতিনীতি আছে – যেমন, যে ইইউ-দেশে প্রথম পদার্পণ, সেখানেই অ্যাসাইলামের অ্যাপ্লিকেশন জমা দিতে হবে, ইত্যাদি৷ কিন্তু নতুন উদ্বাস্তু ‘‘সংকটে'' সে সব প্রক্রিয়া জলে ভেসে গেছে: নড়বড়ে বোট কিংবা জাহাজে করে আসা উদ্বাস্তুদের সাগরেই উদ্ধার করে ইটালির মূল ভূখণ্ডে নিয়ে আসা হচ্ছে; সেখানা তাদের কোনোমতে নথিভুক্ত করে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে, যা-তে তারা ট্রেনে করে উত্তরে জার্মানি কিংবা সুইডেন, অথবা ফ্রান্স হয়ে ব্রিটেনে যাবার আশা করতে পারে৷
ওদিকে উদ্বাস্তুরা মাঝপথে রোম কিংবা মিলানে পৌঁছে রেলস্টেশনের আশেপাশে ভিড় জমাচ্ছেন, কেননা এই পরিমাণ সম্বলহীন মানুষের রাত কাটানোর ব্যবস্থা করার ক্ষমতা নগর কর্তৃপক্ষের নেই৷ নগর প্রশাসন ৮০০ লোকের রাত কাটানোর ব্যবস্থা করেছেন, কিন্তু এমন দিনও আছে, যখন চোদ্দশ' উদ্বাস্তু এক দিনে মিলানে এসে পৌঁছাচ্ছেন৷ রোমের মুখ্য রেলওয়ে স্টেশনের কাছেও একই দৃশ্য; সেখানেও সিরিয়া, ইরিট্রিয়া, সোমালিয়া আর ইথিওপিয়া থেকে আসা উদ্বাস্তুরা জলপাই আর ডুমুর গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নিচ্ছেন৷
মাসের গোড়াতেই ফরাসি পুলিশ রাজধানী প্যারিসের মঁমার্ত্রে এলাকায় পূর্ব আফ্রিকা থেকে আগত সাড়ে তিনশো উদ্বাস্তুদের তাঁবু ট্র্যাক্টর চালিয়ে ভেঙে দেয়৷ এভাবেই সেদিন উত্তরের ক্যালে বন্দরের কাছে ব্রিটেন অভিমুখী আফ্রিকান উদ্বাস্তুদের দু'টি বস্তি ভেঙে দেওয়া হয়৷ এর ঠিক তিন দিন পরে ব্রিটিশ পুলিশ হারউইচ আন্তর্জাতিক বন্দরে চারজন পোলিশ লরিড্রাইভারকে গ্রেপ্তার করে, কেননা তাদের ট্রাকে ৬৮ জন বেআইনি অভিবাসী ঘাপটি মেরে বসেছিলেন: ৩৫ জন আফগান, ২২ জন চীনা, দশজন ভিয়েতনামি এবং একজন রুশি৷
গতকাল, অর্থাৎ বৃহস্পতিবারের খবর: ম্যাসিডোনিয়ার রাজধানী স্কোপিয়ে-র ৫৫ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত সীমান্তের একটি গ্রামের পাঁচটি বাড়িতে মোট ১২৮ জন উদ্বাস্তুর খোঁজ পেয়েছে স্থানীয় পুলিশ৷ মূলত সিরিয়া এবং ইরাক থেকে আগত উদ্বাস্তুরা যে সব বাড়িতে বাস করছিলেন, তাদের মালিকরা মাসে দেড় হাজার ইউরো মূল্যে বাড়ি ভাড়া দিচ্ছিলেন – উদ্বাস্তুদের জন্য যা দিনে দশ ইউরো৷
এসি/ডিজি (এপি, রয়টার্স, এএফপি)