উন্নাও ধর্ষণ মামলা ইউপি থেকে দিল্লিতে
১ আগস্ট ২০১৯এর আগে দেশটির প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈকে লেখা নির্যাতিতার পরিবারের চিঠি কেন তাঁর হাতে পৌঁছায়নি, তা জানানোরও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি৷ সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রি বিভাগের প্রতিবেদনও তলব করেন ভারতের প্রধান বিচারপতি৷
এই ঘটনায় বিজেপি বেশ অস্বস্তিতে পড়লেও মূল অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে এতদিন কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়নি৷ তবে ঘটনার দুই বছর পর বৃহস্পতিবার ওই বিধায়ককে দল থেকে বহিষ্কার করেছে বিজেপি৷
ভারতের সবচেয়ে বড় রাজ্য উত্তর প্রদেশের উন্নাওয়ে দুই বছর আগে গণধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন ১৬ বছরের এক কিশোরী৷ আজও নিষ্পতি হয়নি মামলাটি৷ ধর্ষণের শিকার কিশোরী অভিযোগের আঙ্গুল তোলেন রাজ্যটির ক্ষমতাসীন বিজেপির বিধায়ক কুলদীপ সিং সেঙ্গারের বিরুদ্ধে। অভিযোগে বলা হয়, চাকরি চাইতে তাঁর বাড়িতে গেলে কুলদীপ ও তাঁর লোকেরা তাঁকে ধর্ষণ করেন।
বিজেপির নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হওয়ার পর থেকে একের পর এক ঘটনা ঘটে চলেছে। নির্যাতিত নারীর বাবার মৃত্যু হয় পুলিশি হেফাজতে। সুবিচারের দাবিতে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথের বাড়ির সামনে গত বছর ওই নারী আত্মহননের চেষ্টাও করেছিলেন। তখনই নজরে আসে এই ঘটনা৷ প্রথমে রাজ্য পুলিশ, পরে সিবিআই ওই ঘটনার তদন্ত করছে। দুটি চার্জশিটও দাখিল হয়েছে। তবে নিষ্পত্তি হয়নি মামলা। তাঁর অভিযোগ ছিল, ২০১৭ সালে চাকরির জন্য বিজেপি বিধায়ক কুলদীপ সেঙ্গারের বাড়িতে গেলে সেখানে তাঁকে ধর্ষণ করা হয়। অভিযোগে আরো বলা হয়, মেয়েটির বাবাকে পুলিশ আটক করার পর কুলদীপ সেঙ্গারের বেধড়ক মারে তাঁর মৃত্যু হয়। কিছুদিন পর কুলদীপ ও তাঁর ভাইকে গ্রেফতার করা হয়। এখনও জেলে আছেন বিজেপি বিধায়ক।
গত রোববার এই ঘটনায় আসে নতুন মোড়৷ আত্মীয় পরিজন আর আইনজীবীকে সঙ্গে নিয়ে রায়বরেলি যাওয়ার পথে ধর্ষণের শিকার মেয়েটির গাড়িতে ধাক্কা দেয় একটি ট্রাক। ট্রাকের নম্বর প্লেটে কালি লেপা ছিল। গুরুতর আহত হয়ে হাসপতালে ভর্তি আছে নির্যাতিতা মেয়েটি, তাঁর মা আর আইনজীবী। মৃত্যু হয় তাঁর দুই মাসীর। যাঁদের একজন ছিলেন ধর্ষণ মামলার স্বাক্ষী৷ কংগ্রেস, সামজবাদী পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ঘটনাটিকে ষড়যন্ত্র হিসেবেই আখ্যায়িত করেছে৷ নির্যাতিতার আহত মা অভিযোগ করেন, তাঁর পরিবারকে শেষ করে দিতেই এই ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। চাপের মুখে অভিযুক্ত বিজেপি বিধায়কের বিরুদ্ধে খুনের মামলা দায়ের করতে বাধ্য হয় পুলিশ৷
নির্যাতিতা নারীর পরিবার আর বিরোধী দলগুলোও সিবিআইকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়ার দাবি জানিয়ে আসছিল৷ মঙ্গলবার রাতে উত্তর প্রদেশের মুখ্য সচিব জানান, উন্নাও ধর্ষণের শিকার নারীকে বহনকারী গাড়িতে ট্রাকের ধাক্কা দেয়ার ঘটনা তদন্তের দায়িত্ব সিবিআইকে দেয়া হচ্ছে৷ উন্নাও ধর্ষণ মামলাটি আগে থেকেই সিবিআইয়ের হাতে রয়েছে৷
ঘটনা চাপা দিতে ক্রমাগত চাপ দেয়া এবং মামলা তুলে নেওয়ার হুমকির কথা উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতিকে চিঠি লিখেন নির্যাতিত নারীর মা। চিঠির কপি দেয়া হয় এলাহাবাদ হাইকোর্ট ও উত্তর প্রদেশ সরকারকেও। কিন্তু কোনো এক অজ্ঞাত কারণে সেই চিঠি প্রধান বিচারপতির কাছে পৌঁছায়নি৷
যে সড়ক দুর্ঘটনায় দুইজনের মৃত্যু এবং নির্যাতিতা ও তাঁর আইনজীবী গুরুতর আহত হয়ে চিকিৎসাধীন, সেই ঘটনায় বিজেপির আরও এক রাজ্য নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। তিনি মূল অভিযুক্ত কুলদীপ সিং সেঙ্গারের ঘনিষ্ঠ বিজেপির উন্নাও ব্লক সভাপতি অরুণ সিং। অরুণ সিংয়ের শ্বশুর উত্তর প্রদেশের এক মন্ত্রী।
ঘটনাটিকে ‘মর্মান্তিক' বলেছেন কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা গান্ধী৷ ওই বিধায়ক এখনও বিজেপিতে থাকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন প্রিয়াঙ্কা৷ কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীও বিষয়টির প্রসঙ্গ তুলে বিজেপির ‘বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও' স্লোগানের সমালোচনা করেন৷
টিএম/কেএম (ইন্ডিয়া টাইমস, আনন্দবাজার, এনডিটিভি)