সবার জন্য ওষুধ চাই
৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৩অ্যামেরিকার হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের প্রফেসর আনিটা ওয়াগনার এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘এমন সব অসুখ-বিসুখেও মানুষ মারা যাচ্ছে, যেগুলির নিরাময়ে খুব ভালো ওষুধ আছে৷ আমাদের সমস্যা হলো প্রক্রিয়াটা এমন, যাদের এই সব ওষুধ প্রয়োজন, তারা এগুলি পায় না৷''
দরিদ্র দেশে সস্তায় ওষুধ
কিছু ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান, যেমন ফ্রান্সের সানোফি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা কম আয়ের দেশগুলিতে যতটা সম্ভব কম দামে ওষুধ বিক্রি করে থাকে৷ একই ওষুধ শিল্পোন্নত দেশগুলিতে বেশি দাম দিয়ে বিক্রি করে তারা৷ এর ফলে ভারসাম্যটা বজায় থাকে৷ ব্যবসায় লোকসান হয় না৷
এই প্রসঙ্গে ওষুধপ্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান সানোফির ফ্রঁসোয়া বঁপার বলেন, ‘‘টিকার ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি বেশ কার্যকর হয়েছে৷ যে টিকা আমরা অ্যামেরিকা ও ইউরোপে ৫০ ইউরো দিয়ে বিক্রি করি, সেটাই আমরা আফ্রিকায় তিন থেকে চার ইউরোতে বিক্রি করি৷ ব্রাজিল, দক্ষিণ আফ্রিকা ও থাইল্যান্ডের মতো দেশগুলিতে আমরা মাঝামাঝি একটা দাম যেমন ১০ থেকে ২০ ইউরো ধার্য করি৷''
বিশেষজ্ঞরা এ ব্যাপারে একমত যে, সামর্থ্য অনুযায়ী বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রকমের দাম নির্ধারণ করাটা এইডস ও ক্যানসারের মতো অসুখের জন্য খুব জরুরি৷ কেননা উন্নয়নশীল দেশের মানুষের পক্ষে এতো দামি ওষুধ কেনা সম্ভব নয়৷ তবে ট্রপিক্যাল দেশের রোগব্যাধির ক্ষেত্রে ওষুধের দামের হেরফের করা সম্ভব নয়৷ এর কারণ ধনী দেশগুলিতে এই ধরনে অসুখ বিসুখ প্রায় দেখাই যায় না৷
উপেক্ষিত রোগব্যাধি
বঁপার স্বীকার করেন যে, ওষুধ কোম্পানিগুলি এইসব রোগের ওষুধ তৈরির ব্যাপারে তেমন আগ্রহী নয়৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘আমরা ব্যাবসায়ী প্রতিষ্ঠান৷ আমরা আমাদের অর্থ এমনভাবে বিনিয়োগ করতে চাই, যাতে পরে তা লাভসহ তুলে আনতে পারি৷''
ডেঙ্গু ও স্লিপিং সিকনেস-এর মতো রোগগুলিকে তাই উপেক্ষিত অসুখ বলে আখ্যায়িত করা হয়৷ এই প্রসঙ্গে আনিটা ওয়াগনার বলেন, ‘‘এসব অসুখ-বিসুখ দমন করার ক্ষেত্রে আরো মনযোগী হতে হবে৷ গবেষণা করতে হবে৷ এজন্য বিভিন্ন দেশের সরকার ও ওষুধপ্রস্তুতকারী কোম্পানিগুলির মধ্যে সহযোগিতামূলক কর্মসূচি গড়ে তুলতে হবে৷''
ওষুধ-পত্র যতই সস্তার হোক না কেন, কোনো কোনো রোগীর পক্ষে তাও চড়া মূল্যের মনে হতে পারে৷ বিশেষ করে সেই মুহূর্তে যদি টাকা হাতে না থাকে৷ বিশ্বস্বাস্থ্যসংস্থা ডাব্লিউএইচও-র জো কাটসিন মনে করেন, স্বাস্থ্য পরিষেবার উন্নয়ন ও ওষুধ-পত্রের দাম সবার আয়ত্তের মধ্যে আনতে হলে আরো দেশকে এক্ষেত্রে সম্পৃক্ত করতে হবে৷
তাঁর ভাষায়, ‘‘জরুরি চিকিত্সার প্রয়োজন হলে সাথে সাথেই যাতে রোগীর পকেট থেকে টাকা দিতে না হয়, সেই রকম ব্যবস্থা করা প্রয়োজন৷ রোগীদের আর্থিক সামর্থ্য ও স্বাস্থ্যরক্ষার মধ্যে যেন টানাপোড়েন না হয়৷''
নিয়মকানুন জানাটাও জরুরি
বঁপার মনে করেন, দাম ছাড়াও ওষুধের ক্ষেত্রে আর একটি ব্যাপার উপেক্ষা করা হচ্ছে৷ আর তা হলো ওষুধ ব্যবহারের নিয়মকানুন জানা৷ প্রথমে রোগের লক্ষণগুলি জানতে হবে, রোগটি শনাক্ত করতে হবে৷ তারপর আসে চিকিত্সার প্রশ্ন৷ এজন্য আরো বেশি ডাক্তার ও নার্সকে প্রশিক্ষণ দিতে হবে৷
তাঁর ভাষায়, ‘‘আমি আশা করি, আমার দেশের প্রতিটি জেলায় বিভিন্ন রোগ শনাক্ত করার মতো প্রযুক্তি ও কারিগরি ব্যবস্থা যেন থাকে৷ আমরা ক্যানসার শনাক্ত করতে, ম্যালেরিয়ার বিভিন্ন ধরন ও ভাইরাস সংক্রমণ সম্পর্কে যেন সহজে জানতে পারি৷ আর তাহলেই কী পরিমাণ ওষুধ আমাদের দেশে প্রয়োজন, সে ব্যাপারে আমরা সুষ্ঠু পরিকল্পনা করতে পারবো৷''
তবে রোগ প্রতিরোধই হচ্ছে সবচেয়ে ভালো ওষুধ৷ এক্ষেত্রে নানা ধরনের উদ্যোগ গড়ে উঠেছে, যাতে ওষুধের প্রয়োজনীয়তা কমে যায়৷ যেমন মা-বাবা ও বাচ্চাদের শেখানো হচ্ছে কীভাবে মশার হাত থেকে উদ্ধার পাওয়া যায়, মশারি টানিয়ে শোয়া যায়৷