উপনির্বাচনে কতটা প্রভাব পড়বে চলতি আন্দোলনের?
১৯ অক্টোবর ২০২৪মেডিকেল কলেজে কর্তব্যরত তরুণী চিকিৎসকের দেহ উদ্ধারের পর থেকে চলছে জুনিয়র চিকিৎসকদের আন্দোলন। এখন তারা অনশন মঞ্চে। আগামী সোমবার ফের তাদের আলোচনায় ডেকেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আন্দোলনের ঝাঁজ ৭০ দিন পরেও প্রায় একইরকম রয়ে গিয়েছে। এর প্রভাব কি পড়বে উপনির্বাচনে?
ছয়টি কেন্দ্রে নির্বাচন
আগামী ১৩ নভেম্বর ছয়টি বিধানসভা কেন্দ্রে ভোট নেয়া হবে। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্রগুলি থেকে ছয়জন প্রতিনিধি নির্বাচিত হন। পাঁচটিতে জিতেছিল শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। একটিতে জিতেছিল বিজেপি। অধিকাংশ আসন শূন্য হয়েছে বিধায়করা সাংসদ হিসেবে নির্বাচিত হয়ে বিধানসভার পদ ছেড়ে দেয়ায়। এই কেন্দ্রগুলির ভোটগণনা ২৩ নভেম্বর।
উত্তর ২৪ পরগনার দুটি কেন্দ্রে নির্বাচন। এর একটি বারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত নৈহাটি। এই কেন্দ্রে জিতে হ্যাটট্রিক করেছিলেন রাজ্যের সাবেক মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক। এখন তিনি বারাকপুর থেকে তৃণমূলের লোকসভার সাংসদ।
জেলার আর এক কেন্দ্র হাড়োয়া। এখান থেকে জিতে বিধায়ক হন হাজি নুরুল। এই বছরের লোকসভা নির্বাচনে তিনি ছিলেন বসিরহাট কেন্দ্রের ঘাসফুল প্রার্থী। সন্দেশখালিকে কেন্দ্র করে উত্তাল পরিস্থিতিতে বসিরহাটে জয় পান তিনি। তখনা নারী নির্যাতন ও সুরক্ষা নিয়ে অভিযোগে উঠেছিল তৃণমূল নেতৃত্বের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি নুরুল প্রয়াত হওয়ায় বিধানসভা ও লোকসভা দুটি আসনই শূন্য হয়ে পড়েছে।
উত্তরবঙ্গের দুটি আসনে উপনির্বাচন হবে। এর একটি কোচবিহারের সিতাই। এই কেন্দ্রে জয়ী হন তৃণমূলের জগদীশচন্দ্র বসুনিয়া। ১০ হাজার ১১২ ভোটে হারিয়ে দেন বিজেপির দিলীপকুমার রায়কে। চলতি বছরের লোকসভা ভোটে কোচবিহার কেন্দ্রে জিতে বসুনিয়া এখন সাংসদ।
কোচবিহারের পাশের জেলা আলিপুরদুয়ারের মাদারিহাট আসন থেকে জিতে বিধানসভার সদস্য হন বিজেপির মনোজ টিগ্গা। তার জয়ের ব্যবধান ছিল ২৯ হাজার ৬৮৫ ভোট। গত লোকসভা ভোটে জিতে মনোজ এখন সংসদে।
বাঁকুড়া থেকে সাংসদ হয়ে লোকসভায় গিয়েছেন তৃণমূলের অরূপ চক্রবর্তী। ২০১৬ সালে এই জেলার তালডাংরা আসন থেকে জিতেছিলেন তিনি। জয়ের ব্যবধান ছিল ১২ হাজার ৩৭৭ ভোট।
বিজেপির সাবেক রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের ছেড়ে যাওয়া মেদিনীপুর আসনে জিতে বিধায়ক হয়েছিলেন জুন মালিয়া। জিতেছিলেন ২৪ হাজার ৩৯৭ ভোটে। তিন বছর পর মেদিনীপুর লোকসভা আসনে জিতে এখন এই অভিনেত্রী তৃণমূলের সাংসদ।
আন্দোলনের প্রভাব
আর জি করে ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে যেমন ধর্ষণ ও খুনের দ্রুত বিচারের দাবি উঠে এসেছে, তেমনই চিকিৎসকরা স্বাস্থ্য পরিকাঠামো ও প্রশাসনের সংস্কারের দাবি তুলেছেন। মোট ১০ দফা দাবির উপর ভিত্তি করে তাদের আন্দোলন চলছে।
গোড়ার দিকে মূলত বিচারের দাবি তোলা হচ্ছিল। শুধু চিকিৎসক নয়, নাগরিক সমাজের একাংশ এই আন্দোলনে সামিল হয়েছে। প্রধানত কলকাতায় সভা, মিছিল, অবস্থান থেকে অনশন, এমন নানা কর্মসূচি নেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে বিভিন্ন জেলায় বিচারের দাবিতে পথে নেমেছেন সাধারণ মানুষ।
এই আন্দোলনের অন্যতম দিক ছিল নারীদের রাত দখলের কর্মসূচি। একাধিক দিন মধ্যরাতে শুধু কলকাতা নয় জেলার বিভিন্ন শহর ও মফস্বলে এই কর্মসূচি দেখা গিয়েছে। বিচারের দাবিতে বিভিন্ন সংগঠন এখনো পথে নামছে।
আগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে চলা এই আন্দোলনের কোনো প্রভাব আগামী উপনির্বাচনে পড়তে পারে?
রাজনৈতিক বিশ্লেষক শুভময় মৈত্র বলেন, "এই নির্বাচনে দেখতে হবে তৃণমূলের ভোট কতটা কমে ও বামেদের ভোট কতটা বাড়ে। তবে সেটা বোঝার জন্য অবাধ নির্বাচন হওয়া দরকার। সেটা না হলে ভোটের প্রভাব বোঝা যাবে না। সন্দেশখালিতে প্রতিবাদ হয়েছিল। কিন্তু তার প্রভাব লোকসভা ভোটে পড়েনি। সেটাও আমাদের মাথায় রাখতে হবে।"
আর জি করের ঘটনায় পুলিশ ও প্রশাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখা গিয়েছে। সম্প্রতি কুলতলি ও কৃষ্ণনগরের ক্ষেত্রেও একই ধরনের অভিযোগ উঠেছে। সাংবাদিক সুমন ভট্টাচার্য ডিডব্লিউকে বলেন," কুলতলি বা কৃষ্ণনগরের ঘটনা স্থানিক উত্তেজনা তৈরি করেছে। কিন্তু সেটা বড় অংশের ভোটারকে প্রভাবিত করতে পারবে বলে মনে হচ্ছে না।"
তার মতে, "উত্তরবঙ্গের যে দুটি আসনে নির্বাচন হবে, সেখানে আর জি করের ঘটনা কোনো ইস্যু নয়। বাকি যে পাঁচটি কেন্দ্রে উপনির্বাচন, সেখানে বিরোধীরা চলতি আন্দোলনের বিষয়টা কতটা জনগণের কাছে নিয়ে যেতে পারে, সেটার পরীক্ষা। তবে এই নির্বাচনে আর জি কর আন্দোলন প্রভাব ফেলবে বলে আমার মনে হয় না।"
যে কটি আসনে নির্বাচন হবে সেখানে তৃণমূলের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপি। বাম ও কংগ্রেসের প্রার্থীরা কতটা লড়াইয়ে থাকবেন, সেটা পরিষ্কার নয়।
পর্যবেক্ষক মইদুল ইসলাম ডিডব্লিউকে বলেন, "মোটের উপর শহর ও শহরতলি এলাকায় এবারের উপনির্বাচন। সরকারের বিরুদ্ধে যে অংশের ক্ষোভ আছে, সেটা ইভিএম পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার সাংগঠনিক ক্ষমতা বুথ স্তরে বিরোধীদের আছে কিনা, দেখতে হবে। শুধু সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন দেখে নির্বাচনের ফলের কথা এখনই বলা যাবে না।"