উপাচার্যদের ইস্তফায় বিরোধ কি মিটবে?
২ মার্চ ২০২৩সাবেক রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গে রাজ্য সরকারের নানা বিষয়ে বিরোধ লেগেই ছিল। সংঘাতের আবর্তে এসে গিয়েছিল উচ্চশিক্ষাও। পদাধিকারবলে রাজ্যপাল রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির উপাচার্য। কিন্তু তাকে এড়িয়ে রাজ্য সরকার উপাচার্য নিয়োগ করেছে বলে অভিযোগ তুলেছিলেন ধনখড়।
রাজভবনে নতুন রাজ্যপাল হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সি ভি আনন্দ বোস। তার সঙ্গে সোম ও মঙ্গলবার বৈঠক করেছেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে রাজ্য ও রাজভবনের মধ্যে যে বিরোধের পরিস্থিতি চলছিল, তার সমাধানসূত্র বার করা হয়েছে। ২৪ জন উপাচার্য পদত্যাগ করবেন, নিয়োগ হবে নতুন ভাবে।
মঙ্গলবারের বৈঠকে ছটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রাজ্যপাল তথা আচার্যের কাছে ইস্তফা দিয়েছেন। কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধন চক্রবর্তী, সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুরাধা মুখোপাধ্যায়, বারাসত রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মহুয়া দাস, সিধো-কানহো-বিরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের দীপক কর, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের নিমাই সাহা এবং কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের মানস সান্যাল পদত্যাগ করেন। তিনমাসের মেয়াদবৃদ্ধির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে এই উপাচার্যদের।
এই প্রক্রিয়ায় পদত্যাগ ও সাময়িক নিয়োগের সমালোচনা করেছে সেভ এডুকেশন কমিটি। সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক অধ্যাপক তরুণ নস্কর ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘'যেভাবে একসঙ্গে উপাচার্যদের ইস্তফা দিতে হচ্ছে, সেটা এই পদের পক্ষে সম্মানজনক নয়। শিক্ষামন্ত্রীর থেকেও মর্যাদা বেশি উপাচার্য পদের।‘'
যদিও রফাসূত্রে রাজ্য-রাজভবনের মধ্যে বিরোধ মিটে যাওয়ার ইঙ্গিত মিলেছে। উপাচার্যদের নিয়োগ ঘিরে একসময় ধনখড় তীব্র উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন। টুইটে ২৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ের নামের তালিকা তুলে ধরে সাবেক রাজ্যপাল বলেছিলেন, এদের নিয়োগ বৈধ নয়। যেহেতু আচার্য হিসেবে তিনি এই নিয়োগে সম্মতি দেননি।
সেই সময় নবান্ন পাল্টা যুক্তি দেয়, নিয়োগ সংক্রান্ত নথি পাঠানো হলেও রাজ্যপাল প্রতিক্রিয়া দেননি। রাজ্য নয়া বিলও পাশ করায় বিধানসভায়। সেই বিল অনুযায়ী মুখ্যমন্ত্রীকে পদাধিকারবলে আচার্যের ক্ষমতা দেয়া হয়। এই বিলে সম্মতি দেয়নি রাজভবন।
পরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সোনালি চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিয়োগ খারিজ করে দেয় সুপ্রিম কোর্ট। বাকি ২৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন ছিলই। সেই বিরোধ মিটছে বলেই মনে হচ্ছে। নয়া উপাচার্যদের নিয়োগ করার জন্য সার্চ কমিটি গঠন করার ব্যাপারে রাজ্যপাল সম্মতি দিয়েছেন বলে শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন।
রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘'উপাচার্য হিসেবে যারা দায়িত্ব পাবেন, তাদের প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখতে হবে। দেখতে হবে কোনো অচলাবস্থায় পড়ুয়াদের ক্ষতি না হয়।‘'
উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিয়ে যখন বিরোধ মিটতে চলেছে বলে মনে হচ্ছে, সেই সময় পদ ছেড়ে দিলেন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সব্যসাচী বসু রায়চৌধুরী। তিনি আচার্য তথা রাজ্যপালকে ইমেল করে ইস্তফার ইচ্ছে জানিয়েছেন। অতীতে একাধিক বিষয়ে ক্ষোভ জানিয়ে পদ ছাড়ার কথা বলেছিলেন তিনি।
স্থায়ী উপাচার্যের শূন্যপদে স্বচ্ছ নিয়োগ প্রত্যাশা করছে শিক্ষা মহল। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক রেজিস্ট্রার রাজাগোপাল ধর চক্রবর্তী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘'অনেক যোগ্য, অভিজ্ঞতাসম্মন্ন মানুষ আছেন। আনুগত্য দেখে উপাচার্য নিয়োগ করলে ঠিক হবে না।‘'