উহানফেরতদের দিন কাটছে যেভাবে
৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০আর এখন সময় কাটানোই তাদের বড় সমস্যা৷
হজ ক্যাম্পে অবস্থানরত এক বাংলাদেশি ছাত্রের সঙ্গে যখন সোমবার বিকেলে ডয়চে ভেলের প্রতিনিধির কথা হয় তখন তিনি ক্যাম্পের ছাদে বন্ধুদের সাথে ফুটবল খেলছিলেন৷ তারা পানির খালি বোতলকে ফুটবল বানিয়ে সময় কাটানোর জন্য এই খেলার আয়োজন করেন৷ তার কথা, ‘‘কী করব ভাই, সময় যে আর কাটে না৷ এখন মোটামুটি সবকিছুই ঠিক আছে৷ কিন্তু কবে বাড়ি ফিরতে পারব সেটা নিয়েই উদ্বিগ্ন৷’’
এরমধ্যে আরো অনেক উদ্বেগের কারণ ঘটেছে৷ তারা এখান থেকে বাড়িতে ফিরে যাওয়ার পর কী পরিস্থতি হয়, এলাকার লোকজন কিভাবে নেয় সেটা নিয়েও তারা আতঙ্কিত৷ কারন চীন থেকে আসা এবং চীনা নাগরিকদের নিয়ে একটা আতঙ্ক আমরা এরই মধ্যে লক্ষ্য করতে পারছি৷
তিনি বলেন, ‘‘আমরা যেদিন আসি সেদিন এয়ারপোর্ট থেকে বাসে করে আমাদের হজ ক্যাম্পে আনা হয়৷ আমাদের বাস ছিল কালো গ্লাসের৷ আর আমাদের বাসের চারপাশে যারা বাইরে ছিলেন তাদের মধ্যে আমরা আতঙ্ক দেখেছি৷ যারা মাস্ক পড়া ছিলেন তারাও আবার হাত দিয়ে মুখ ঢেকে রাখেন৷ যাদের মাস্ক ছিল না তারা হাত বা জামা-কাপড় দিয়ে ভয়ে মুখ ঢাকেন৷ তারা তাদের নিরাপত্তার জন্য এটা করছেন৷ কিন্তু আমাদের খারাপ লাগে৷’’
তিনি আরো জানান, ‘‘হজ ক্যাম্পে আমাদের যারা খাবার দিতে আসেন তারাও ভয়ে থাকেন৷ রুমের বাইরে দরজা থেকেও দূরে তারা খাবার রেখে চলেন যান৷ আমাদের নিয়ে এখানেও আতঙ্ক৷ কিন্তু আমরা যারা এসেছি তারা কেউই এখনও করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত নই৷’’
তবে তিনি সরকার ও দেশের মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘‘আমরা ভাবতেই পারিনি এত দ্রুত আমাদের দেশে ফিরিয়ে আনা হবে৷’’
কেউ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত নন
শনিবার যে ৩১২ জন ফিরে এসেছেন তাদের মধ্যে আট জনকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল জ্বর থাকায়৷ কিন্তু তাদের কেউই করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত নন বলে জানিয়েছেন রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এ এস এম আলমগীর৷ তাদের মধ্যে সাত জনকে হাসপাতাল থেকে নিয়ে এসে এখন হজ ক্যাম্পে রাখা হয়েছে৷ আরেকজন গর্ভবতী নারীকে তার একটি শিশু সন্তানসহ সিএমএইচেই রাখা হয়েছে৷ তবে ক্যাম্প থেকে নতুন করে আরেকজনকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে৷ ডা. আলমগীর জানান, ‘‘আমাদের কাছে যে তথ্য রয়েছে তাতে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে এবং চীনে অবস্থানরত কোনো বাংলাদেশি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হননি৷’’
ক্যাম্প পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে
ক্যাম্পে একঘেয়েমি কাটানোর জন্য আটটি বড় পর্দার টিভি দেয়া হয়েছে৷ দেওয়া হয়েছে ওয়াফাই কানেকশান৷ তবে প্রথম দিন তাদের কয়েকজনের স্বজনেরা আসলেও এখন আর কেউ আসছে না৷ কারণ কাউকেই দেখা করতে দেয়া হচ্ছে না৷ হজ ক্যাম্পে অবস্থানরত একজন ছাত্রের ভাই ইলিয়াস মন্ডল জানান, ‘‘আমরা যেতে চেয়েছিলাম৷ কিন্তু আমাদের জানানো হয়েছে দেখা করতে দেয়া হবে না৷ তাই আমরা যাইনি৷ আমার ভাই কবে বাড়ি ফিরে আসবে তার অপেক্ষা করছি৷’’
ডা. আলমগীর জানান, ‘‘১৪ দিনের মধ্যে লক্ষণ স্পষ্ট হয় তাই অনেকে বলছেন ১৪ দিনের মধ্যে তারা ছাড়া পাবেন৷ কিন্তু আসলে তা নয়৷ যদি কারুর এর মধ্যে লক্ষণ দেখা দেয় তাহলে তো তার চিকিৎসা লাগবে৷’’
মোট আটটি গণরুম রয়েছে ক্যাম্পে৷ এরমধ্যে দু‘টিতে নারীরা রয়েছেন৷ বাকি ছয়টিতে পুরুষ৷ সেখানে অবস্থানরত আরেকজন ছাত্র জানান, ‘‘শুরুতে যে অব্যবস্থাপনা ছিলো তা অনেকটাই কেটে গেছে৷ ওয়াশরুমে সাবান ও হ্যান্ডওয়াশ দেয়া হয়েছে৷ দুই বেলা নাস্তা এবং দুই বেলা খাবার দেয়া হয়৷ আমরা ভেতরে ঘোরাফেরা করতে পারি৷ তবে গণরুম নিয়ে আমাদের মধ্যে আতঙ্ক আছে৷ এই রুমে একজন আক্রান্ত হলে বাকিরাও হতে পারে৷’’
সহানভূতিশীল হতে হবে
ডা. আলমগীর জানান জানান, ‘‘আশকোনা ক্যাম্পের ব্যবস্থাপনার জন্য একটি আন্তঃমন্ত্রনালয় টিম কাজ করছে৷ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আছে৷ সেনাবাহিনী আছে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর আছে৷ তাদের প্রতিদিন স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে৷ খাবার থেকে সবকিছু তাদের দেয়া হচ্ছে৷ আর তাদের বেডগুলোর দূরত্ব বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন মেনেই করা হয়েছে৷ কিন্তু তাদের এখানে তো আলাদাভাবে কিছু দিন সবার নিরাপত্তার স্বার্থেই কষ্ট করে থাকতে হবে৷’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘করোনা যেহেতু নতুন ভাইরাস, তাই এর সুনির্দিষ্ট প্রতিশেধক নেই৷ লক্ষণ দেখে চিকিৎসা হয়৷ যার জ্বর তার জ্বরের চিকিৎসা৷ যার কাশি তার কাশির চিকিৎসা৷ এই চিকিৎসার সব প্রস্তুতি আমাদের আছে৷’’
তিনি বলেন, ‘‘এটা ঠিক এখান থেকে ছাড়া পাওয়ার পর তারা সামাজিক সমস্যায় পড়তে পারেন৷ এই জন্য আমাদের তাদের প্রতি সহানভূতিশীল হতে হবে৷’’