1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

এ কোন গণতন্ত্রের উৎসব?

ডয়চে ভেলের দিল্লি প্রতিনিধি গৌতম হোড়৷
গৌতম হোড়
৮ জুলাই ২০২৩

পশ্চিমবঙ্গে ভোট মানেই সহিংসতা, মৃত্যু, রক্তস্নান। এই কি গণতন্ত্রের চেহারা?

https://p.dw.com/p/4TcQ7
পড়ে আছে বোমার খোল। পঞ্চায়েত ভোটের দিন মুড়ি-মুড়কির মধ্যে বোমা পড়েছে।
পড়ে আছে বোমার খোল। পঞ্চায়েত ভোটের দিন মুড়ি-মুড়কির মধ্যে বোমা পড়েছে। ছবি: Subrata Goswami/DW

টিভির ক্যামেরায় লাইভ ছবি কি মিথ্যা বলতে পারে? সম্ভবত না। শনিবার সকাল থেকে টিভি-র ক্যামেরায় রাজ্যজুড়ে যে ছবি দেখাচ্ছে, তা হলো, গুলি, বোমা, মৃত্যু, বুথদখল, বুথে তাণ্ডব, ব্যালট পোড়ানো, ব্যালটে জল ঢেলে দেয়া, প্রার্থীর বাড়িতে তালা লাগিয়ে দেয়া! এরপর তৃণমূলের তরফ থেকে বলা হলো, ৬১ হাজার বুথের মধ্যে ৪৬টির মতো বুথে গণ্ডগোল হয়েছে। সেগুলিই বড় করে দেখানো হয়েছে। বাকি সব বুথে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট হয়েছে।

তর্কের খাতিরে না হয় মেনেই নিলাম, ৪৬টি বুথেই গোলমাল হয়েছে। কী গোলমাল হয়েছে? আমরা দেখেছি, পিস্তল হাতে এক কর্মী টিভি ক্যামেরার সামনে এক নির্দল প্রার্থীকে লক্ষ্য করে গুলি করছেন। ক্যামেরার সামনেই বুথে ঢুকে ভাঙচুর করা হচ্ছে। প্রিসাইডিং অফিসারকে মারা হচ্ছে।  প্রাণ বাঁচাতে প্রিসাইডিং অফিসার বাথরুমে  লুকিয়ে থাকছেন, ভোট দিতে গিয়ে গুলিতে প্রাণ যাচ্ছে। ব্যালট পুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। বোমার বৃষ্টি হচ্ছে। গুলি চলছে। সহকর্মী স্যমন্তক ঘোষ গুলি লেগেছে এমন একজনের সঙ্গে ক্যামেরার সামনে কথা বলেছেন। এ কোন গণতন্ত্রের উৎসবের ছবি দেখলাম আমরা?

এই ছবি ৪৬টা বুথ কেন, চারটে বুথে হলেও তা ভয়াবহ ঘটনা। দীর্ঘদিনের সাংবাদিকতা করার সূত্রে বলতে পারি, এখন তো অন্য কোনো রাজ্যে এই ছবি দেখতে পাওয়া যায় না। প্রথমে প্রার্থীদের মনোনয়ন জমা দিতে বাধা দেয়া হলো, তারপর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের জন্য সহিংসতা হলো, আর ভোটের দিন রক্তগঙ্গা বইলো। প্রশাসন চুপ। নির্বচন কমিশনার বললেন, তিনি আশা করছেন, পুলিশ সব ঠিক করে দেবে। আর পুলিশ? থাক সে কথা।

এই ভয়ংকর সহিংসতার স্রোত দেখে ভয় লাগে। লজ্জা হয়। ভেটের নামে যা হলো, তাতে ভবিষ্যৎ ভেবে হতাশ লাগে।

সকাল থেকে বেলা তিনটে পর্যন্ত ১২ জনের প্রাণ গেছে। তারমধ্যে তৃণমূলের একাধিক কর্মী আছেন। বিরোধী দলগুলির আছে। কেন এই প্রাণহানি হবে? প্রতিটি মৃত্যু শোকের। প্রতিটি হত্যা সমান নিন্দনীয়। আর ততটাই নিন্দনীয় এই বেলাগাম সহিংসতা। সারাদিন ধরে এই কাণ্ডকারখানা দেখে প্রশ্ন জেগেছে, প্রশাসন কোথায়?

এই সন্ত্রাস, এই সহিংসতা কোথায় গিয়ে শেষ হবে? গ্রাম প়ঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদে জেতা কি এতটাই জরুরি যে এত প্রাণ চলে যেতে হবে? এ কোন যুদ্ধক্ষেত্রের উপর দাঁড়িয়ে আছে বাংলা?

গৌতম হোড়, ডয়চে ভেলে।
গৌতম হোড়, ডয়চে ভেলে।ছবি: privat

তারপর এই পশ্চিমবঙ্গের নেতারা ভারতের অন্যত্র গণতন্ত্র বিপন্ন বলে আওয়াজ তুলবেন। মানুষের ভোটে জিততে না পারলে বন্দুক, বোমা, বুথদখল করে জিততে হবে? গণতন্ত্রের কোন পাঠে একথা বলা হয়েছে। জেতার পর তারা কী করবেন?

এবার ওই ৪৬টি বুথে সহিংসতার প্রসঙ্গে আসি। কতগুলি বুথে সহিংসতা হয়েছে, গোলমাল হয়েছে, তার সংখ্যা আমরা জানি না। কারণ, টিভি-র ক্যামেরা তো সীমাবদ্ধ। তা তো আর ৬১ হাজার বুথে থাকতে পারে না। সবমিলিয়ে কটা টিভি ক্যামেরা ছিল? দুইশ, তিনশ, চারশ--তার বেশি তো নয়। তাহলে অন্য জায়গায় কী হয়েছে, তার ছবি তো আমরা জানতেই পারব না। আর সাধারণ মানুষ যারা সেই গণ্ডগোলের ছবি মোবাইল-বন্দি করেছেন, তারা তা আপলোড করতে ভয় পাবেন। কারণ, এরপর তাদের উপর হামলা হলে কে তাদের বাঁচাবে?

আর যে ছবিগুলো ক্যামেরায় ধরা পড়েছে, তার দায় কে নেবে? পুলিশ, প্রশাসন, কমিশন, রাজনৈতিক দল? না, আমাদের দেশে দায় নেয়ার কোনো দায়  কারো নেই। ফলে যাই হোক না কেন, কারো কিছু যায়-আসে না। শুধু আসে যায় সেই পরিবারগুলির, যারা তাদের সদস্যকে হারালো। আর বাকিরা কিছুদিনের মধ্যেই সব ভুলে যাবেন। ব্যস্ত থাকবেন মেলায়, খেলায়। 

ডয়চে ভেলের দিল্লি প্রতিনিধি গৌতম হোড়৷
গৌতম হোড় ডয়চে ভেলের দিল্লি প্রতিনিধি৷