মুজাহিদের ‘রায় কার্যকর দেখতে চাই’
১৮ জুলাই ২০১৩একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সিরাজুদ্দীন হোসেন ছিলেন দৈনিক ইত্তেফাকের বার্তা সম্পাদক৷ মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিকে বাংলাদেশ যখন বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে, ঠিক সেই সময় ১০ই ডিসেম্বর তাঁকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল আলবদররা৷ এরপর তাঁকে আর তারা ফিরিয়ে দেয়নি৷ আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ছিলেন তখন আলবদর কমান্ডার৷ তার নেতৃত্বেই সিরাজুদ্দীন হোসেনকে ধরে নিয়ে হত্যা করা হয়৷ এই হত্যাকাণ্ড ট্রাইব্যুনালে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ হয়েছে৷ তাই মুজাহিদের ফাঁসির রায়ে সন্তুষ্ট সিরাজুদ্দীন হোসেনের ছেলে শাহীন রেজা নূর৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, তাঁরা ৪২ বছর ধরে এই দিনটির অপক্ষোয় ছিলেন৷ সেই অপেক্ষার অবসান ঘটেছে৷ স্বাধীন বাংলায় ঘাতকদের শাস্তি হয়েছে৷ শহিদের আত্মা আজ তাই শান্তি পাবে৷
শাহীন রেজা নূর বলেন, চরম হতাশায় কেটেছে তাঁদের গত ৪২টি বছর৷ ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর, ঘাতকরা আবার স্বরূপে ফিরে আসে, প্রতিষ্ঠিত হয়৷ তারা আবার চলে যায় ক্ষমতার কেন্দ্রে৷ ঘাতকের গাড়িতে ওঠে জাতীয় পতাকা৷ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আর আদর্শকে বিদায় করা হয়৷ দেশ ফিরে যায় পাকিস্তানি আদর্শে৷ আর তখন যুদ্ধাপরাধীর বিচার, পিতৃহত্যার বিচার পাওয়া তো দূরের কথা, তাঁদের জন্য বেঁচে থাকাই ছিল কষ্টকর৷ কিন্তু একদিন ন্যায় বিচার পাওয়া যায়৷ কারণ, ঘাতকরা যতই ক্ষমতাধর হোক, তারা ঘাতকই৷
শাহীন রেজা নূর জানান, বর্তমান সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ‘ম্যান্ডেট' নিয়ে ক্ষমতায় এসেছে৷ তারা তাদের প্রতিশ্রুতি পূরণে কাজ করছে৷ ট্রাইব্যুনালও এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজ৷ এ পর্যন্ত মুজাহিদসহ ছয়জনের শাস্তি হয়েছে৷ সে জন্যই শাহীন রেজা নূরের আশা, এই সরকারের মেয়াদকালেই এসব রায় কার্যকর হবে৷
তিনি অবশ্য বলেন, ‘‘সামনে আরো বাধা আছে৷ যে অশুভ শক্তি আগে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার না করে ক্ষমতায় বসিয়েছে, তারা এখনও সক্রিয়৷ সক্রিয় যুদ্ধাপরাধীদের দল জামাত-শিবিরও৷ তারা চায় এই বিচারকাজ বাধাগ্রস্ত করতে৷ তাই তারা প্রতিটি রায়ের পর দেশ জুড়ে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে৷ তারা হামলা ও সন্ত্রাস করে ভীতির সৃষ্টি করছে৷ আর এই কাজে তাদের মদদ দিচ্ছে তাদের সহযোগিরা৷ কিন্তু তারা সফল হবে না৷ কারণ অশুভ শক্তি শেষ পর্যন্ত সফল হয় না৷''
শাহীন রেজা নূরের কথায়, শুধু ঘাতকদের নয়, যুদ্ধাপরাধীদের দল জামাত-শিবিরকেও বিচারের আওতায় আনতে হবে৷ এই দলটি নয়ত তাদের আস্ফালন অব্যাহত রাখবে৷