1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কঠিন পরীক্ষার মুখে অ্যামেরিকা

ইনেস পোল/এসবি১৩ জুন ২০১৬

সন্ত্রাসবাদীরা তাদের হামলার মাধ্যমে মুক্ত সমাজ ধ্বংস করতে চায়৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচার যখন জমে উঠেছে, ঠিক তখনই অরল্যান্ডোর এই হামলাকারী সেই কাজে সফল হতে পারেন বলে মনে করছেন ইনেস পোল৷

https://p.dw.com/p/1J5ex
USA Schießerei in Orlando zahlreiche Tote
ছবি: picture-alliance/AP Photo/P. M. Ebenhack

সন্ত্রাসবাদীরা তাদের হামলার মাধ্যমে সাধারণত দু'টি লক্ষ্য পূরণ করতে চায়৷ প্রথমত, মানুষ হত্যা করা৷ তাছাড়া মুক্ত সমাজ ধ্বংস করে ফেলতে চায় তারা৷ সে কারণেই অরল্যান্ডো শহরের নাইটক্লাবে হামলায় ৫০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যুর ঘটনা শুধু বেদানময় এক ট্র্যাজিডি নয়, এটি অত্যন্ত বিপজ্জনক এক ইঙ্গিত বহন করে৷

এমন সময় এই হামলা ঘটল, যখন অ্যামেরিকা এক কঠিন পরীক্ষার মুখে রয়েছে৷ অ্যামেরিকা এমন এক সংঘাতের সূচনাপর্বে রয়েছে, যার মাধ্যমে শুধু আগামী প্রেসিডেন্ট কে হবেন, সেই ফয়সালা হচ্ছে না৷ শক্তিশালী এই দেশটি কোন দিশায় এগোবে, সেই মৌলিক সিদ্ধান্তের সময় এসে গেছে৷ গত কয়েক বছরে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা যে প্রগতিশীল পথে অগ্রসর হয়েছেন, আগামী প্রেসিডেন্ট সেই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারেন৷ অথবা তাঁর সাফল্য ও অর্জন নষ্ট করে ফেলতে পারেন৷

সর্বোচ্চ আদালতের শীর্ষ পদের গুরুত্ব

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা সীমিত৷ ওবামা বার বার সেই বেদনা অনুভব করেছেন৷ স্বাস্থ্য খাতের সংস্কার থেকে শুরু করে গুয়ান্তানামো কারাগার বন্ধ করার চেষ্টার সময় তিনি হাড়ে হাড়ে তা টের পেয়েছেন৷ দুই দলীয় শাসনব্যবস্থায় আপোশের বদলে সংঘাতই যেখানে বেড়ে চলেছে, সেখানে একজন প্রেসিডেন্টকে বার বার সর্বোচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হতে হয়৷ এই সুপ্রিম কোর্ট নির্বাচনের গুরুত্ব আরও বাড়িয়ে তোলার অন্যতম কারণ৷ দেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে বিচারপতিদের বিশাল প্রভাব-প্রতিপত্তি রয়েছে৷ শেষ পর্যন্ত তাঁরাই সমকামীদের বিয়ের অধিকার থেকে শুরু করে উভলিঙ্গদের টয়লেট ব্যবহার সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেন৷

USA Orlando Symbolbild Trauer nach Attentat
অ্যামেরিকা কি সন্ত্রাসবাদীদের ফাঁদ থেকে দূরে থাকতে পারবে?ছবি: picture-alliance/dpa/G. George Wilson

এই বিচারপতিদের কার্যকালের মেয়াদ আজীবন হওয়ার কারণে তাঁদের ম্যানডেট যে কোনো প্রেসিডেন্টের কার্যকালের সীমা ছাপিয়ে যায়৷ বর্তমানে বিচারমণ্ডলীতে একটি পদ খালি রয়েছে৷ বাকি বিচারপতিদেরও বয়স হচ্ছে৷ তাই আগামী প্রেসিডেন্ট কমপক্ষে আরও দুই বিচারপতি নিয়োগ করতে পারবেন বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে৷

সন্ত্রাস থেকে ফায়দা তোলার প্রচেষ্টা

অরল্যান্ডোর জঘন্য হামলা নির্বাচনি প্রচার অভিযান জমে ওঠার ঠিক আগে ঘটলো৷ এই মর্মান্তিক ঘটনার ঠিক পরেই ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকরা এই হামলা থেকে ফায়দা তোলার চেষ্টা শুরু করলেন৷ আততায়ীর ধর্মীয় পরিচয় উল্লেখ করে টুইটারের মাধ্যমে তাঁরা ট্রাম্পকে তাঁর ইসলাম-বিরোধিতার জন্য অভিনন্দন জানালেন৷ মুসলিমদের প্রতি সংহতিবোধ ও সহানুভূতিকেও হিলারি ক্লিন্টনের বিরুদ্ধে হাতিয়ার করবেন তাঁরা৷ নিজেদের প্রার্থীকে আরও শক্তিশালী করতে তাঁরা মানুষের ভীতিকে কাজে লাগাবেন৷ কারণ মনে হচ্ছে, চলতি বছর অ্যামেরিকার অনেক মানুষ এই ধরনের জনমোহিনী ‘পপুলিজম'-এর প্রতি বিশেষভাবে আকৃষ্ট হচ্ছেন৷ চটজলদি দাওয়াইয়ের প্রতিশ্রুতি শুনে তাঁরা মোহিত হয়ে পড়ছেন৷ মানুষকে বিচ্ছিন্ন করে ও তাদের উপর নজরদারি চালিয়ে যে সমাজ গড়ে তোলার চেষ্টা চলছে, তার পরিণতি সম্পর্কে তাঁরা ভাবনাচিন্তা করতে প্রস্তুত নন৷

Pohl Ines Kommentarbild App
ইনেস পোল, ডয়চে ভেলে

প্রতিভাধর জনমোহিনী নেতা

ফ্লোরিডার জঘন্য হত্যাকাণ্ড থেকে চুটিয়ে ফায়দা তুলবেন প্রতিভাধর জনমোহিনী নেতা ট্রাম্প৷ সন্ত্রাসী হামলা ঘটলে যে কোনো মুক্ত সমাজের সামনে বড় এক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে৷ ব্যক্তিস্বাধীনতার মূল্য নিয়ে জটিল প্রশ্ন উঠে আসে৷ মুক্ত সমাজ ধরে রাখতে কতটা ঝুঁকি নিতে আমরা প্রস্তুত? সন্ত্রাসের ঘটনা ফলে যে ঘৃণা ও প্রতিশোধস্পৃহা দেখা যায়, সেই অবস্থায় রাজনীতিবিদ ও সাধারণ মানুষের পক্ষে শান্ত ও স্থিতিশীল থাকা কঠিন হয়ে পড়ে৷ প্যারিস হামলার পর ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রঁসোয়া ওলঁদ সেই অসাধ্য সাধন করতে পেরেছিলেন৷ তিনি দেশবাসিকে সুযোগ্য নেতৃত্ব দিতে পেরেছিলেন৷

সন্ত্রাসবাদীদের ফাঁদ

কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এখন এমন নির্বাচনি প্রচার চলছে, গোটা বিশ্ব যেমনটা এর আগে কখনো দেখেনি৷ ২০১৬ সালের অ্যামেরিকা কি সন্ত্রাসবাদীদের ফাঁদ থেকে দূরে থাকতে পারবে? মৌলবাদী মুসলিমদের আদর্শ অনুসরণ করে মৌলিক স্বাধীনতা খর্ব না করে থাকতে পারবে কি সেই দেশ? নাকি ‘অ্যামেরিকান ড্রিম'-এর ধারণা রক্ষা করা সম্ভব হবে, যার ভিত্তিই হলো অভিবাসীদের খোলামেলা এক সমাজ? অন্ধ ক্রোধের জয়ের সম্ভাবনাই বেশি৷

ডয়চে ভেলের ইনেস পোল মনে করেন, অরল্যান্ডোর এই হামলা অ্যামেরিকাকে এক কঠিন পরীক্ষার মুখে ফেলেছে৷ প্রিয় পাঠক, আপনিও কি তাই মনে করেন? নীচের ঘরে আপনার মতামত জানান৷