এএফডি ছাড়লেন ফ্রাউকে পেট্রি
২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭রবিবার জার্মানির নির্বাচনে এএফডির ঐতিহাসিক জয়ের কয়েক ঘণ্টা পরেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসেন দলটির কো-চেয়ার ফ্রাউকে পেট্রি৷ সাক্সেনিতে নিজের নির্বাচনি এলাকায় জনগণের সরাসরি ভোটে জিতেছেন তিনি৷ আর সামগ্রিকভাবে গোটা জার্মানিতে জনগণের ভোটে দলটি পৌঁছে গেছে তৃতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের অবস্থানে৷
নির্বাচনের পরের দিন বার্লিনে সংবাদ সম্মেলনে এক নাটকীয় ঘোষণা দেন পেট্রি৷ দলের অনেক নেতাকর্মীকে বিস্মিত করে তিনি বলেন, ‘‘দীর্ঘক্ষণ চিন্তাভাবনার পর আমি এএফডি'র পার্লামেন্টারি পার্টিতে অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি৷'' এই ঘোষণা দেয়ার পর এএফডি'র নির্বাচন পরবর্তী সংবাদ সম্মেলন থেকে বেরিয়ে যান পেট্রি৷
পূর্বাঞ্চলের, শিক্ষিত, রক্ষণশীল
১৯৭৫ সালে তৎকালীন পূর্ব জার্মানির ড্রেসডেনে জন্ম নেয়া ফ্রাউকে পেট্রি বড় হয়েছেন ব্রান্ডেনবুর্গ এবং বার্লিন ওয়ালের পতনের পর বের্কাম্যান শহরে৷ উচ্চবিদ্যালয়ে তিনি এক তারকা শিক্ষার্থী ছিলেন৷ পরবর্তীতে মায়ের পদাংক অনুসরন করে রসায়নে উচ্চশিক্ষার জন্য ইল্যান্ডের রিডিং বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে যান নব্বইয়ের দশকের শেষের দিকে৷
ইংল্যান্ডে লেখাপড়া শেষে জার্মানির গ্যোটিংগ্যান বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি শুরু করেন পেট্রি৷ সেখানে তিনি প্রটেস্ট্যান্ট যাজক স্ভেন পেট্রির সান্নিধ্যে আসেন এবং তাঁকে বিয়ে করেন৷ এই দম্পতির চার সন্তান রয়েছে৷ পিএইচডি শেষ করার পর তিনি পরিবেশবান্ধব পলিউরিথেন তৈরির লক্ষ্যে একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন৷ তিনি এবং তাঁর মা এটি উদ্ভোবন করেছিলেন৷
রাজনীতিবিদ হিসেবে পেট্রি
পেট্রি একসময় জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের খ্রিষ্টীয় গণতন্ত্র দল সিডিইউতে যোগ দেয়ার কথা বিবেচনা করেছিলেন বলে শোনা যায়৷ কিন্তু তিনি সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছিলেন এটা জানার পর যে, রক্ষণশীলরা কন্টেন্ট নিয়ে আলোচনার চেয়ে কৌশল নিয়ে কথা বলাতেই সময় বেশি ব্যয় করে৷
২০১৩ সালে এএফডি প্রতিষ্ঠা হলে তিনি তাঁর রাজনৈতিক আশ্রয় খুঁজে পান৷ পেট্রি দ্রুতই দলের মধ্যে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন এবং অন্যতম মুখপাত্রে পরিনত হন৷ ২০১৪ সালে সাক্সেনির রাজ্য সংসদে তাঁরে নেতৃত্বে প্রবেশ করে এএফডি৷
তবে ২০১৫ সালে জার্মানিতে বিপুল সংখ্যক শরণার্থী প্রবেশেরঘটনায় পেট্রির ভাগ্য খুলে যায়৷ তিনি এএফডিকে শরণার্থীবিরোধী এক দলে পরিনত করেন এবং ম্যার্কেলের অন্যতম সমালোচক হয়ে ওঠেন৷ দলের মধ্যে থাকা জাতীয়তাবাদীদের কাছে প্রতীকে পরিনত হন তিনি৷ এমনকি এএফডি'র প্রতিষ্ঠাতা বের্ন্ড ল্যুকে'কেও সরিয়ে দেন তিনি৷
রাজনীতিবিদ হিসেবে অনেক বিতর্কেরও জন্ম দিয়েছেন ফ্রাউকে পেট্রি৷ তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে গত বছরের জানুয়ারি মাসে করা তাঁর এক মন্তব্য৷ তিনি বলেছিলেন যে, ‘‘অস্ট্রিয়ার সঙ্গে সীমান্তে নিয়ন্ত্রণ রক্ষা করতে সীমান্ত রক্ষী পুলিশ প্রয়োজনে গুলি ছুঁড়তে পারে৷'' তিনি এমন এক সময় এই মন্তব্য করেছিলেন যখন সেই সীমান্ত দিয়ে শরণার্থীরা জার্মানিতে প্রবেশ করছিল৷
নিজ দলে বিরোধ
প্রকাশ্যে নিজেকে একজন আত্মবিশ্বাসী রাজনীতিবিদ হিসেবে দেখালেও দলের মধ্যে ধীরে ধীরে বিভাজনের মধ্যে পড়ে যান পেট্রি৷ দলের প্র্যাগমেটিক অংশের সঙ্গে কট্টর নীতিপন্থি অংশের মধ্যকার দূরত্ব ঘোচানো তাঁর জন্য দুরূহ হয়ে পড়ে৷ চলতি বছরের শুরুতে নিজের দলের দুই সদস্যকে, যারা হলোকস্ট নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন, সমর্থন করা থেকে বিরত থাকেন তিনি, যা দলের মধ্যে সমালোচনার জন্ম দেয়৷
এরপর বসন্তকালে দলের এক সম্মেলনে জাতীয় নির্বাচনে দলের মুখ্য প্রার্থী না হওয়ার সিদ্ধান্ত জানালে প্রকাশ্যেই অপমানিত হন তিনি৷ দলের মধ্যে তাঁর সমর্থনও কমতে থাকে৷ এমনকি, সাক্সেনির একটি সংসদীয় কমিটি তাঁর বিরুদ্ধে শপথ ভঙ্গের অভিযোগ আনলেও নিজের দল তাঁর পাশে দাঁড়ায়নি৷
পেট্রিও তখন মধ্যপন্থি ভোটারদের দূরে সরিয়ে দেয়ায় নিজের দলের সিনিয়র সদস্যদের সমালোচনা করতে শুরু করেন৷ রবিবার রাতে তিনি দলটির অন্যতম নেতা আলেক্সান্ডার গাউল্যান্ডের সমালোচনা করেন, কেননা তিনি বলেছিলেন যে, ‘‘বিশ্বযুদ্ধগুলোতে অংশ নেয়া জার্মান সেনাদের জন্য জার্মানির গর্ব করা উচিত৷'' সোমবার যখন গাউল্যান্ড সংসদে নতুন সংসদকে ‘জ্বালাতন' করা হবে বলে জানান, তারও বিরোধিতা করেন পেট্রি৷
আকস্মিক ঘোষণা
পেট্রির সঙ্গে দলের সিনিয়র নেতাদের বিরোধের বিষয়টি অনেকে জানলেও ঘোষণাটি আসে সোমবার সংবাদ সম্মেলনে৷ জার্মান সংসদে দলের সংসদীয় পার্টিতে অংশ না নেয়ার ঘোষণা দিয়ে সংবাদ সম্মেলন ত্যাগ করেন৷ একইসঙ্গে জানান যে, স্বতন্ত্র এমপি হিসেবে সংসদে থাকবেন তিনি৷
এএফডি'র সিনিয়র সদস্যরা তাঁকে দলের সদস্যপদ থেকে পদত্যাগের চাপ দিলে মঙ্গলবার দল থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন তিনি৷
আলেক্সান্ডার পিয়ারসন / ন্যান্সি আইসেনসন (এআই)