‘ট্যাবলেট শিল্পীর' কথা
১৪ জুলাই ২০১৬নরওয়ের অসলোর নিকোলাই লকার্টসেন নিজেকে মনে করেন ‘ট্যাবলেট শিল্পী'৷ তিনি তাঁর স্বপ্নের ছবিগুলো আঁকেন একটি আইপ্যাড প্রো ব্যবহার করে৷ ২০১৫ সালে এটা ব্যবহার শুরু করেন তিনি৷ তাঁর মতো আরো অনেক শিল্পী রংতুলি আর কাগজ ছেড়ে বেছে নিয়েছেন আইপ্যাড৷ ইন্টারনেট হচ্ছে তাদের গ্যালারি৷ এই বিষয়ে লকার্টসেন বলেন, ‘‘আমার এখন আরো সৃজনশীল স্বাধীনতা হয়েছে৷ আমার এখন আর সবকিছু নষ্ট হয়ে যাবে এমন আতঙ্ক নিয়ে কাজ করতে হয় না৷ আমি আরো শান্তভাবে কাজ করতে পারি৷ এটা আমার কাজ অনেক সহজ করে দিয়েছে৷ এখন কোন কিছু চাইলে ‘আনডু' বা ‘ট্রান্সফর্ম' করতে পারি৷ এটা আরো অনেক স্বাধীনতা এবং বৈচিত্রময়তা নিশ্চিত করছে৷''
ইউটিউবে তাঁর তৈরি ভিডিও টিউটরিয়ালের অনুসারী অনেক৷ সেখানে তিনি তাঁর পেন্টিংয়ের কৌশল এবং ব্যবহৃত সফটওয়্যারের কথা জানান৷ তাঁর অন্যতম প্রিয় হাতিয়ার ‘প্রোক্রিয়েট' পেন্টিং অ্যাপ৷ এটা শুধুমাত্র অ্যাপল ডিভাইসে কাজ করে৷ এভাবে অ্যাপটির নির্মাতা প্রতিদ্বন্দ্বীদের নিজেদের থেকে দূরে রাখে এবং একইসঙ্গে অ্যাক্সেসরিজ বিক্রিও বাড়িয়ে চলে৷
এমনকি বিশ্বখ্যাতরাও এখন আইপ্যাড ব্যবহার করছেন৷ তাদের মধ্যে অন্যতম ডেভিড হকনি, যিনি বিংশ শতাব্দীর একজন জনপ্রিয় শিল্পী৷ অ্যাপলের সফলতার পেছনে অন্যতম রেসিপি হচ্ছে ক্লেভার মার্কেটিং৷ প্রতিষ্ঠানটি কিন্তু ট্যাবলেট বা ডিজিটাল পেন আবিষ্কার করেনি৷ তবে এটি এসবকে গুরুত্বপূর্ণ সামগ্রীতে পরিণত করেছে৷
অ্যাপলের উন্নয়ন নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন কার্স্টেন লেম৷ গত ১৬ বছর ধরে সিলিকন ভ্যালিতে প্রযুক্তি সাংবাদিক হিসেবে কাজ করছেন তিনি৷ লেম বলেন, ‘‘অ্যাপল কখনো অন্যদের মতো পণ্য বিক্রি করে না৷ একটা অভিজ্ঞতা বিক্রি করে৷ সেই আশির দশকে তারা একটা ম্যাকিনটশ দিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল৷ এটা মজার ছিল, কেননা ব্যবহার করা কঠিন ছিল না৷ আমি যদি একজন আর্ট ডিরেক্টর হতাম এবং নিজের ক্রিয়েটিভি প্রকাশ করতে চাইতাম, তাহলে প্রযুক্তি পণ্য ব্যবহার শেখার দিকে বেশি গুরুত্ব দিতাম না৷ আর এটার দিকে অ্যাপল সবসময় গুরুত্ব দেয়৷ এটা খুব সহজে কাজ করে৷''
অ্যাপল সবসময়ই চলচ্চিত্র শিল্পকে গুরুত্ব দিয়েছে৷ ‘ফিল্মিক প্রো' অ্যাপ আইফোনকে কার্যত ভিডিও ক্যামেরায় রূপান্তর করে৷ অ্যাপলের প্রতিদ্বন্দ্বীরা, যেমন অ্যান্ড্রয়েড অনেক দেরিতে এর বিকল্প বার করেছে৷ আইফোন ভিডিও নিয়ে উৎসবেরও আয়োজন করা হয়৷ অ্যাপলের কাছে এটা এক গুরুত্বপূর্ণ মার্কেটিং টুল৷ এর মাধ্যমে তারা খদ্দেরদের প্রফেশনাল ভিডিও তৈরির প্রলোভন দেখায়৷ আর এটাই অ্যাপল পণ্যের বাড়তি দামের কারণ ব্যাখ্যা করে৷
অ্যাড এজেন্সিগুলোও দ্রুত বিষয়টি রপ্ত করেছে৷ তারা তাদের বিজ্ঞাপনে আরো আধুনিকতার ছোঁয়া দিতে আইফোন ব্যবহার করে৷ টিভি সাংবাদিক এবং ভিডিও নির্মাতা মাটিয়াস ড্যুন পুরো একটি রহস্যরোমাঞ্চের সিরিজ ভিডিও করছেন আইফোনে৷ তিনি বলেন, ‘‘আইফোনে শুটিংয়ের সুবিধা হচ্ছে এটা আমার পকেটে থাকা পুরো একটা টুলবক্স৷ ভিডিও শুট করা ছাড়াও আরো অনেক কাজ আমি এতে করতে পারি, যেমন সঙ্গে সঙ্গে এডিট করা, এফেক্ট যোগ করা বা বৈচিত্রময় কিছু করা৷ এটা আরো অনেক মানুষকে ভিডিও তৈরির সুযোগ করে দিয়েছে৷ তাদের কেউ হয়ত ভবিষ্যতের স্টিভেন স্পিলবার্গ হবেন৷''
তিনি তাঁর ছোট ফিল্মগুলো স্মার্টফোন থেকে সরাসরি টাম্বলারে আপলোড করেন৷ যাতে ইন্টারনেটে তারা দর্শক পায়৷ প্রতিদ্বন্দ্বীদের কারণে অ্যাপলের বিক্রি হয়ত কমছে, কিন্তু এটির গ্রাফিক ট্যাবলেট এখনো ‘টপ সেলার'৷